বিএনপির তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারাই গ্রেপ্তার হচ্ছেন বেশি

বিএনপির তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারাই গ্রেপ্তার হচ্ছেন বেশি

ঢাকা, ৬ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকায় রাজনীতির মাঠে অনেকটাই সক্রিয় হতে পারে বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা। কিন্তু এবারের বাস্তবতা পুরোপুরি ভিন্ন। তফসিল ঘোষণার পর পেরিয়ে গেছে প্রায় একমাস। অথচ বিরোধী নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিরোধী নেতা-কর্মীদের বাসা-বাড়িতে অভিযান চলছে। ধরপাকড় চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপের সময় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার ছিল গায়েবি মামলা দায়ের ও নির্বিচারে গ্রেপ্তার বন্ধের। প্রধানমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী গ্রেপ্তারকৃতদের একটি তালিকাও দিয়েছিল বিএনপি। দলটি একই ধরনের একটি তালিকা দিয়েছিল ইসি সচিবালয়ে। কিন্তু ন্যূনতম উত্তরণ ঘটেনি পরিস্থিতির। উল্টো প্রতিদিনই দায়ের হচ্ছে নতুন নতুন মামলা। বাড়ছে টার্গেট গ্রেপ্তারের সংখ্যা।

এ নিয়ে বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইসি জানিয়েছে, তাদের নির্দেশের বাইরে কিছুই করছে না পুলিশ। বিএনপিসহ অঙ্গ দলের জেলা ও থানা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারের কারণে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের নির্বাচন পরিচালনা নিয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন সংকট। ১৮ই নভেম্বর বিএনপির মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন এমন বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে দুই থেকে পাঁচদিন নিখোঁজ থাকার পর আদালতে হাজির করছে পুলিশ। এতে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করছে তৃণমূলে। অন্যদিকে মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ের দিন নানা অভিযোগ ও কারণ দেখিয়ে বিএনপি মনোনীত শতাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। বিশেষ করে উপজেলা বা পৌর চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করলেও তা গৃহীত হয়নি।

কারও মনোনয়নপত্রে দলের মহাসচিবের স্বাক্ষর নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কিছু প্রার্থীর ফাইলে জমা দেয়া কাগজ মেলেনি যাচাই বাছাইকালে এবং সে অভিযোগে বাতিল হয়। ১৯৯১ সালের একটি বিলখেলাপি দেখিয়ে একজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে যিনি নানা সময়ে জনপ্রতিনিধিও নির্বাচিত হয়েছেন। সবমিলিয়ে ৬টি আসনে বিএনপিদলীয় কোনো প্রার্থীই অবশিষ্ট নেই। অন্তত ৬০ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে যারা ছিলেন বিএনপির প্রথম পছন্দের প্রার্থী। তারপরও আগামী জাতীয় নির্বাচনকে বাঁচা-মরার লড়াই হিসেবে বিবেচনা করে মামলা-হামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কের মতো প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও ঘুরে দাঁড়াতে চায় বিএনপি। দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সতর্ক থেকে নির্বাচনী প্রচারণার কৌশল ও করণীয় বার্তা দেয়া হয়েছে। সে নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন পর্যন্ত কৌশলে গ্রেপ্তার এড়ানোর প্রচেষ্টার মধ্য থেকেই সতর্কভাবে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচনের।

আপাতত কোনো সংঘাতে না গিয়ে সমঝোতার কৌশলে অংশগ্রহণ করছেন নির্বাচনী প্রচারণায়। নীরবে জনগণের সমর্থন আদায় করতে চাইছেন। নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে চাইছেন ভোট পাহারায়। একইভাবে বিএনপির নির্যাতিত নেতা-কর্মীর পরিবারকেও এ কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এর মাধ্যমে জনগণের কাছে সহমর্মিতা আদায় করার চেষ্টাও রয়েছে। প্রয়োজনে কারাবন্দি নেতাকর্মীদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনকেও এ কর্মসূচিতে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় এবং তৃণমূল নেতারা এমন তথ্য জানিয়েছেন।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, সারা দেশে নির্বাচনী হাওয়া বইলেও তারা এখনো আদালতের বারান্দায় রয়েছেন। দলের অনেক নেতাকর্মী এখনো কারাগারে রয়েছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্র জানায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এ পর্যন্ত সারা দেশে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৫৪৫টি মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তার হয়েছেন অন্তত ১ হাজার দুইশ’ জন। এর মধ্যে ১৫ নেতা রয়েছেন যারা একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী। দলের তথ্য সেল সূত্র জানায়, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৯০ হাজার ৩৪০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ২৫ লাখ ৭০ হাজার ৫৪৭ আসামি। তাদের মধ্যে কারাগারে আছেন ৭৫ হাজার ৯২৫ নেতাকর্মী। এদিকে নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত দেশের বেশিরভাগ আসনে প্রকাশ্য প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন না দলের প্রার্থী বা তার কর্র্মী-সমর্থকরা।

সম্প্রতি কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের প্রার্থীর পক্ষে উঠোন বৈঠক চলাকালে হামলা চালায় ক্ষমতাসীন দলের কর্মী ও পুলিশ। উল্টো বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একটি মামলাও দায়ের করা হয়। হামলা হয়েছে শরিয়তপুর-৩ আসনের প্রার্থী মিয়া নুরুদ্দিন অপু ও ভোলা-৪ আসনের প্রার্থী নুরুল ইসলাম নয়নের প্রচার বহরে। এমন পরিস্থিতিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০দলীয় জোটের অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন এলডিপির সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, বীরবিক্রম।

রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বর্তমান যে নির্বাচনী পরিস্থিতি তাতে ২০দলীয় জোট শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকতে পারবে কিনা- সেটা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিরোধী দলকে নির্বাচন থেকে বের করে দিতেই একের পর এক বিএনপির প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল করা হচ্ছে। দেশে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই।’ অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে বাধা দেয়া হবে শোনা যাচ্ছে- এমন অভিযোগ করে এর আগের দিন জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বাধা দেয়া হলে জনগণকেই রুখে দাঁড়াতে এবং ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়ার আহ্বান জানান।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/০৮২১ঘ.)