সালমা ইসলামের নির্বাচনী ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ

সালমা ইসলামের নির্বাচনী ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ

ঢাকা, ২৮ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের নির্বাচনী ক্যাম্পে বৃহস্পতিবার রাতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এর আগে মটরগাড়ি প্রতীকের প্রার্থী সালমা ইসলামের সমর্থকদের ঘরে ঘরে তল্লাশি চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

রাত সাড়ে ৯টার দিকে সালমা ইসলামের নবাবগঞ্জের বক্সনগর ১নং ওয়ার্ডের কোমরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন নির্বাচনী ক্যাম্পে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। ঘটনার পর স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসকে আগুন নেভানোর জন্য খবর দেয়া হলেও তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।

স্থানীয়রা জানান, কয়েকদিন ধরে মটরগাড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সালমা ইসলামের জনসভা ও নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা, ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। রহস্যজনক কারণে তারা এ বিষয়ে চুপ থাকছেন।

বৃহস্পতিবার রাতে সালমা ইসলামের নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দেয়ার বিষয়টি পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনকে তাৎক্ষণিকভাবে জানানো হয়। তারা আগুন নেভানোর বিষয়েও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হলেও রাত ১১টার দিকে এই সংবাদ লেখা পর্যন্ত তারা আসেনি। ওই ক্যাম্পের পাশে অনেক দোকানও রয়েছে। ক্যাম্পে আগুন লাগানোর কারণে ওই দোকানগুলোও আগুন লাগার ঝুঁকিতে পড়ে।

এ সময় স্থানীয়রা উদ্যোগী হয়ে আগুন নেভানোর কাজ করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই ক্যাম্পের পাশে সালমা ইসলামের প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সালমান এফ রহমানের একটি নির্বাচনী ক্যাম্প রয়েছে। তবে তার ক্যাম্পটি অক্ষত রয়েছে।

জানা গেছে, রাত সাড়ে ৯টার দিকে দুর্বৃত্তরা মাম পানির বোতলে করে পেট্রল এনে সালমা ইসলামের ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দেয়। ক্যাম্পের পাশ থেকে একটি মাম পানির বোতল উদ্ধার করেছেন সালমা ইসলামের নির্বাচনী প্রচারণায় সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মীরা। আগুন লাগানোর কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা দেখতে পান একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি ক্যাম্পের আগুনে প্লাস্টিকের চেয়ার নিক্ষেপ করছে। পরে ওই ব্যক্তি পালিয়ে যায়।

ঘরে ঘরে পুলিশের তল্লাশি
এদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের অত্যাচার-হুমকিতে ঘরছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী সালমা ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা। আর রাত হলেই ঘরে ঘরে গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মামলা না থাকলেও ‘মটরগাড়ি মার্কা’কে সমর্থন করায় সমর্থকদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। পাশাপাশি নৌকার সমর্থকরা নিরীহ ভোটারদের হুমকি-ধমকি দিয়ে ভোট চাচ্ছেন। দোহার-নবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে এবং সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলাপ করে পাওয়া গেছে এমন চিত্র।

জানা গেছে, দোহার উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সালাউদ্দিন মনিরকে বুধবার রাতে জয়পাড়ার বাড়ি থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর থেকেই চারদিকে গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার রাতেও পাড়া-মহল্লায় মটরগাড়ি মার্কার সমর্থকদের ঘরে ঘরে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। প্রাণভয়ে অনেকে গা-ঢাকা দিয়েছেন। আর যারা গ্রামে অবস্থান করছেন, তাদের বাসা-বাড়িতে গিয়ে মটরগাড়ির পক্ষে প্রচারণা না চালাতে আওয়ামী লীগ কর্মীরা হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে জয়পাড়া এলাকা থেকে যুগান্তরের ৫০০ কপি পত্রিকা হকারদের কাছ থেকে অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনিয়ে নেয়ার খবর পাওয়া গেছে। নবাবগঞ্জ-দোহারের বিভিন্ন স্থানে যমুনা টেলিভিশন ও যুগান্তরের গাড়ি দেখলেই তাণ্ডব চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা। বৃহস্পতিবারও একাধিক গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। এর আগে সোমবার সন্ত্রাসীদের হামলায় গণমাধ্যমের অন্তত ১০ জন কর্মী আহত হন। ভাংচুর করা হয় সাংবাদিকদের ১৬-১৭টি গাড়ি।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবে কিনা- তা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা কাজ করছে। এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ভীতিকর অবস্থার। সবার চোখেমুখে অজানা আতঙ্ক। ভোটের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে কেউ ‘টুঁ’ শব্দও করতে চাচ্ছে না। সবার মুখে শুধুই আওয়ামী লীগ সমর্থকদের তাণ্ডবের কথাবার্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। পুলিশের ব্যাপক তল্লাশির খবর ছড়িয়ে পড়ায় মটরগাড়ি মার্কার সমর্থকদের অনেকেই ঘরছাড়া। এমনকি মটরগাড়ি মার্কার বুথ বসাতে দিচ্ছে না নৌকা মার্কার সমর্থকরা। ভোটারদের নাম, নম্বর, কেন্দ্র সংবলিত স্লিপও বিতরণ করতে দেয়া হচ্ছে না। মটরগাড়ির ক্যাম্পে কর্মী-সমর্থকরা যাতে না বসতে পারে, সেজন্য তাদের ওপর নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। স্বজনদের সঙ্গে ঘরে অবস্থান করতে পারছেন না- এমন অভিযোগ করে অনেকে যুগান্তরকে বলেন, প্রতিনিয়ত হুমকি পাচ্ছি। জানি না নির্বাচন পর্যন্ত টিকতে পারব কিনা, নির্বাচনের পর বাড়িঘরে থাকতে পারব কিনা। পরিবেশ স্বাভাবিক থাকলে নির্বাচনে সালমা ইসলামের পক্ষে রায় দিয়ে এ অত্যাচার-অনাচারের প্রতিবাদ করব। ঠিক উল্টোচিত্র নৌকা সমর্থকদের।

নির্বিঘ্নে ভোটের মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। ভোট দিতে প্রকাশ্যে সাধারণ ভোটারদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। মুখ চিনে চিনে ভোট চাওয়া হচ্ছে। মটরগাড়ির সমর্থকদের ভোট কেন্দ্রে না যেতে হুমকি দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে ভোট কারচুপির নানা কৌশল আঁটছেন তারা।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১০৪৫ঘ.)