শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত তাপমাত্রাও উপরের দিকে

শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত তাপমাত্রাও উপরের দিকে

ঢাকা, ১২ জানুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : দেশব্যাপী শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। তবে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ছে। কেটে গেছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। সামনের দিনগুলোতে তাপমাত্রা আরো বাড়বে। তবে বৃহস্পতিবারও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

দেশের বিভিন্ন স্থানে গতকাল তাপমাত্রার পারদ উপরের দিকে উঠতে থাকলেও রাজধানী ঢাকায় ছিল নিম্নগামী। ঢাকায় গতকাল তাপমাত্রা নামে ১১.২ ডিগ্রিতে। বুধবার ছিল ১২.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া উচ্চ ও নিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য ছিল একেবারেই কম। সে কারণে রাজধানীতে শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও সারা দিনই বেশ ঠাণ্ডা অনুভূত হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সাইবেরিয়ার শীতল বায়ু প্রবাহ ধীর হয়ে গেছে। গত কয়েক দিন থেকে এ বায়ু দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এসে আছড়ে পড়ার কারণে রাজশাহী, খুলনা, রংপুর বিভাগ এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেটের কিছু অংশে মাঝারি থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। বর্তমানে এ বায়ুটি বাংলাদেশের সীমা ছাড়িয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এটা আরো পশ্চিম ও উত্তর দিকে উঠে যাবে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ শুক্রবার রাত ও দিনের তাপমাত্রার তেমন কোনো পরিবর্তন হবে না। কিন্তু আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রাতের তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। আজ সারা দিনই দেশব্যাপী ঘন থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা থাকবে। এ কুয়াশা অবশ্য দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে দুপুর পর্যন্ত বিরাজ করতে পারে। বর্তমানে রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে এবং টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, ময়মনসিংহ, শ্রীমঙ্গল, কুমিল্লা, ফেনী, সিতাকুণ্ডু ও হাতিয়ায় মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল।

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামে শীতের তীব্রতা আবারো কিছুটা বেড়েছে। গতকাল জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অবস্থায় বিকেল হওয়ার সাথে সাথেই কনকনে ঠাণ্ডায় কাহিল হয়ে পড়ছে মানুষ। দিনের বেশির ভাগ সময় সূর্যের দেখা না মেলায় এ সময়টাতে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে পুরো জনপদ।

বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তাসহ ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকায় ঠাণ্ডার প্রকোপ বেশি হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে এসব এলাকার মানুষের। গত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ও নিম্ন আয়ের মানুষ শীতবস্ত্র কিনতে না পারায় অতি কষ্টে দিন যাপন করছেন। শ্রমজীবী মানুষেরা কাজে যেতে না পাড়ায় পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

তাপমাত্রা কমতে থাকায় শিশু ও বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছে নিউমোনিয়া, ডায়রিরা, স্ট্রোকসহ বিভিন্ন রোগে। ফলে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছেন ছিন্নমূল মানুষ। দুর্ভোগ বেড়েছে গবাদি পশু-পাখিরও। জেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, তারা ৫৭ হাজার কম্বল বিতরণ করেছেন তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, জেলায় অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে শীতজনিত রোগব্যাধি। সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদী পাড়ের দরিদ্র মানুষ। তীব্র শীতে কাজে যেতে না পেরে নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তারা। এই এলাকার দরিদ্র লোকজন খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। সরকারি-বেসরকারিভাবে যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। এ দিকে কম মূল্যে শীতবস্ত্র কিনতে শহরের বড় মাঠের বাজারে ভিড় করছেন দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ।

সৈয়দপুর (নীলফামারী) সংবাদদাতা জানান, উপজেলায় আবারো শীত জেকে বসেছে। বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। কুয়াশার কারণে সূর্য দেখা যাচ্ছে না। তীব্র শীতে গতকাল ৬ মাসের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে এবং শীতজনিত রোগে আক্রান্ত নয়জনকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সৈয়দপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক জিয়া জানান, তীব্র শীতে বৃহস্পতিবার পৌরসভার এলএসডি গুদাম এলাকার দোকান কর্মচারী মো: হাবিলের ৫ মাসের শিশুকন্যা হাবিবা মারা গেছে।

সৈয়দপুর আবহাওয়া অফিস জানায়, উপজেলায় মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তর থেকে ধেয়ে আসা হিমেল হাওয়ায় হাড়কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি আরো কয়েকদিন থাকতে পারে বলে আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হাকিম জানান। ইউএনও মো: বজলুর রশীদ জানান, শীতে মানুষ সীমাহীন কষ্ট পাচ্ছে। সরকারিভাবে যেসব শীতবস্ত্র পাচ্ছি তা সাথে সাথে বিতরণ করা হচ্ছে।

(জাস্ট নিউজ/একে/০৯৪১ঘ.)