ধানের শীষে ভোট দেয়ায় স্বামী-সন্তানকে বেঁধে গৃহবধূকে গণধর্ষণ

ধানের শীষে ভোট দেয়ায় স্বামী-সন্তানকে বেঁধে গৃহবধূকে গণধর্ষণ

ধানের শীষে ভোট দেওয়ায় নোয়াখালীর সুবর্ণচরে এক গৃহবধূকে (৩৫) গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার দিবাগত ভোররাত ৪টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই নারী নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অভিযোগ, নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেওয়ায় তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে।

চর জুবিলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য রুহুল আমীনের নেতৃত্বে এই কাজ করা হয়েছে বলে জানান ওই নারী। তিনি বলেন,‘তারা আমাকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য জোর করেছিল, কিন্তু আমি তাদের কথা না শুনে ধানের শীষে ভোট দিয়েছি।’

তবে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রুহুল আমীন। তিনি বলেন, ‘ওই নারী তার আত্মীয় এবং তাদের মধ্যে কোনো শত্রুতা নেই। ভোটকেন্দ্রে কেবল একবার আমি তার (নারী) সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম।’ এ সময় রুহুল আমীনের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাইলে, তিনি সুবর্ণচর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানান।

ভুক্তভোগী নারী আরো জানান, গতকাল মধ্যরাতের পর ১০ থেকে ১২ জন লোক হাতে লাঠিসোটা নিয়ে বেড়া কেটে তার বাড়িতে ঢুকে। তারপর তারা তার সিএনজি-চালিত অটোরিকশার ড্রাইভার স্বামী ও চার সন্তানকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে বাইরে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে।

এ বিষয়ে মুখ খুললে তার স্বামী ও সন্তানদের মেরে ফেলা হবে এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানান ওই নারী।

ধর্ষিতার স্বামী জানান, আনুমানিক রাত ৪টার দিকে তার স্ত্রীকে মারাত্মক আহত করে অচেতন অবস্থায় ফেলে রাখে এবং ৪০ হাজার টাকা, সোনার গয়না ও অন্যান্য দামী জিনিসপত্র নিয়ে ধর্ষণকারীরা পালিয়ে যায়। এরপর, ওই নারীর স্বামী ও সন্তানের কান্নাকাটি শুনে প্রতিবেশীরা গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী বলেন, ‘প্রথমে গ্রামের একজন চিকিৎসককে ডাকা হয়। কিন্তু ওই নারীর শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকায় দুপুরে তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শ্যামল কুমার বিশ্বাস জানান, তারা ধর্ষণের আলামত পেয়েছেন। ভুক্তভোগীর শরীরে একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

ওই নারীর স্বামী আরো জানান, তার স্ত্রী গত রবিবার সকাল ১১টায় চর জুবিলী প্রাথমিকে বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান। সেখানে তিনি সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের কাছ থেকে ব্যালট পেপার নিয়ে বুথে যেতে চান। ওই সময় আওয়ামী লীগের কর্মী রুহুল আমীন তাকে নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য জোর করেন। কিন্তু তাকে (রুহুল আমীন) যখন বলা হয় যে ধানের শীষে ভোট দেওয়া হয়েছে। তখন তিনি ব্যালট পেপারটি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এরমধ্যেই তার স্ত্রী ব্যালটটি বাক্সে ঢুকিয়ে দেন। এতেই রুহুল ক্ষেপে যান এবং দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।

ধর্ষণের অভিযোগটি নিশ্চিত করলেও এটি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ঘটনা নয় বলে দাবি করেছেন নোয়াখালী পুলিশ সুপার (এসপি) ইলিয়াস শরীফ। তবে অভিযুক্ত ধর্ষকদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে চর জব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার থানায় একটি মামলা করেছেন।’

এমআই