খুলনা-১ আসনে ২২,৪১৯ গায়েবী ভোট (দেখুন ভিডিওতে)

খুলনা-১ আসনে ২২,৪১৯ গায়েবী ভোট (দেখুন ভিডিওতে)

ভোটের ফল ঘোষণার হিসাবে গরমিল করে পরে সে ভুল সাংবাদিকের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন খুলনা জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা। ডয়চে ভেলের কাছে এসেছে সে প্রমাণ। রিটার্নিং কর্মকর্তার অডিও সাক্ষাৎকারের সঙ্গে মিলছে না ভিডিওর বক্তব্য।

৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন রাতেই ফল ঘোষণা করা হয় বটিয়াঘাটা ও দাকোপ উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-১ আসনের। বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের পঞ্চানন বিশ্বাস। খুলনার জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার হেলাল হোসেন ঘোষণা করছিলেন খুলনার ছয়টি আসনের ফল।

অন্য সব আসনে ঠিকঠাক থাকলেও বিপত্তি বাঁধে খুলনা-১ নিয়ে। নির্বাচনের পরদিন ৩১ ডিসেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার দেবাশীষ চৌধুরী।

মামলায় আসামি করা হয় ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউন এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধি হেদায়েৎ হোসেন এবং দৈনিক মানবজমিনের খুলনা প্রতিনিধি রাশিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

পরদিন ১লা জানুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয় সাংবাদিক হেদায়েৎকে। আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। পরে আদালত তার তিন দিনের রিমান্ডও মঞ্জুর করে। রিমান্ডের শুরুতেই অসুস্থ হয়ে পড়লে বৃহষ্পতিবার ১১ দিনের অন্তর্র্বতীকালীন জামিন পান হেদায়েৎ।

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, ‘ঢাকা ট্রিবিউন-এর বাংলা অনলাইনে এবং মানবজমিন পত্রিকায় ‘খুলনা-১, মোট ভোটারের চেয়ে ২২,৪১৯ ভোট বেশি পড়েছে’ শিরোনামে খবর প্রকাশ হয়, যা মিথ্যা এবং অসত্য। তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং বিতর্কিত করার জন্য এই খবর পরিবেশন করেছেন, যা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অপরাধ।’

কিন্তু খুলনায় রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে উপস্থিত স্থানীয় ও ঢাকা থেকে নির্বাচন কভার করতে যাওয়া সাংবাদিকদের বক্তব্যে জানা যায়, রিটার্নিং কর্মকর্তাই দুইবার ফল ঘোষণা করেছিলেন।

তাঁরা জানান, প্রথমে রাত ৯টার পরে খুলনা-১ আসনের যে ফল ঘোষণা করা হয়েছিল, তাৎক্ষণিকভাবে সাংবাদিকরা সবাই যার যার অফিসে সেই ফলই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এক ঘণ্টা পরে আবার যখন নতুন করে সেই ফল ঘোষণা করা হয়, সেটা আবার সংশোধন করে পাঠানো হয়েছিল।

কিন্তু ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও খুলনার জেলা প্রশাসক হেলাল হোসেনকে টেলিফোনে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি দুই বার ফল ঘোষণার কথা বেমালুম অস্বীকার করেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘আমিই ফল ঘোষণা করেছিলাম। তবে খুলনা-১ আসনে দু’বার ফল ঘোষণা বা ভুল সংশোধনের কোনো বিষয় আমার নলেজে নেই।’

কিন্তু ৩ জানুয়ারি ডয়চে ভেলের হাতে আসে ফল ঘোষণার তিনটি ভিন্ন ভিডিও ফুটেজ। প্রথম ফুটেজে দেখা যায়, রিটার্নিং কর্মকর্তা বলছেন, খুলনা-১ আসনে নৌকা পেয়েছে ২ লক্ষ ৫৩ হাজার ৬৬৯ ভোট, ধানের শীষ পেয়েছে ২৮ হাজার ১৭০ ভোট।

এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা তাঁকে জানান, আগেরবার ১০১ কেন্দ্রের ফল ঘোষণার সময় ধানের শীষ ২৯ হাজারের মতো বলা হয়েছিল। পাশ থেকে নীচু স্বরে আরেক সাংবাদিক, দুই মার্কার ভোটের যোগফল যে আসনের মোট ভোটার সংখ্যার চেয়ে বেশি হয়ে গেছে, সেটিও মনে করিয়ে দেন।

তবে ক্যামেরা সার্বক্ষণিক রিটার্নিং কর্মকর্তার দিকে থাকায় প্রশ্নকর্তাৃদের ভিডিও দেখা যায়নি।
এরপরই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন রিটার্নিং কর্মকর্তা। দুই পাশের দুই সহকারীকেও দেখা যায় থতমত খেয়ে ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়তে। দীর্ঘক্ষণ কাগজে হিসাব মেলানোর চেষ্টায় ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় রিটার্নিং অফিসারকে।

দ্বিতীয় ফুটেজে নতুন ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এবার তিনি বলেন, যাচাইবাছাই করে নিশ্চিত হওয়া গেছে, আওয়ামী লীগ পেয়েছে ১ লক্ষ ৭২ হাজার ৫৯ ভোট, ধানের শীষ ২৮ হাজার ৬৩৭ ভোট। এবার ভুলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ধানের শীষের বদলে ‘নৌকা’ বললেও তা বুঝে নেন উপস্থিত সাংবাদিকরা।

তৃতীয় ফুটেজে আওয়ামী লীগের পঞ্চানন বিশ্বাসকে বিজয়ী ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এবার অবশ্য ভোটের হিসাব ঠিকই ছিল।

কিন্তু এবার প্রশ্ন উঠেছে ফলাফল ঘোষণার সময় এত বড় ভুল এবং সাংবাদিকরা সেই ভুল ধরিয়ে দেয়ার পরও কিভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা তা ভুলে গেলেন! শুধু তাই নয়, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ‘নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং বিতর্কিত করার জন্য এই খবর পরিবেশন’ করা হয়েছে– এ অভিযোগে মামলাও দায়ের করে দিলেন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে!