আখেরি মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা

আখেরি মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা

ঢাকা, ১৪ জানুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। রবিবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে আখেরি মোনাজাত শুরু হয়। শেষ হয় সোয়া ১১টায়। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী চলা মোনাজাত পরিচালনা করেন বাংলাদেশের মাওলানা হাফেজ মো. জোবায়ের। তিনি বাংলায় মোনাজাত করেন। এবারই প্রথম বাংলায় মোনাজাত করা হয়।

মোনাজাতে কয়েক লাখ মুসল্লি অংশ নেন। মোনাজাতে আত্মশুদ্ধি ও গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বিপদ থেকে হেফাজতের জন্য আল্লার কাছে প্রার্থনা করেন তারা। মুসল্লিদের আল্লাহুম্মা আমিন ধ্বনিতে তুরাগ তীর এলাকায় অন্যরকম ধর্মীয় পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

মোনাজাতের আগে উপস্থিত মানুষের মাঝে হেদায়েতি বয়ান পেশ করা হয়। এছাড়া ছয় উসুলের পাশাপাশি ঈমান ও আমলের ওপর হেদায়েতি বয়ান পেশ করা হয়। ইসলামের পথে চলার জন্য বিভিন্ন দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্যও দেয়া হয়। উপস্থিত মুসল্লিরা আগ্রহ ভরে তার বক্তব্য শোনেন। বয়ান শেষে শুরু হয় মোনাজাত। মোনাজাত শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই লাখো মুসল্লির কলরব থেমে যায়। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। মানুষ যে যে ছিলেন সেখান থেকেই মোনাজাতে শরিক হোন।

এর আগে হিমেল হাওয়া ও কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে ইজতেমা ময়দানের দিকে ছুটতে থাকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। মানুষের ভিড়ে রেডিসন, কুড়িল ফ্লাইওভার, খিলক্ষেত, উত্তরা, জসিমউদ্দীন, আবদুল্লাহপুর, চৌরাস্তা, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় যান চলাচল শিথিলতা করা হয়েছে। যানবাহন না পেয়ে অধিকাংশ মুসল্লি পায়ে হেঁটেই রওনা হন।

ভোরের আগেই ইজতেমা ময়দান কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। মাঠে জায়গা না পেয়ে অনেক মুসল্লি ইজতেমার আশপাশের সড়কে অবস্থান নেয়। তারা চটি, ত্রিপল, পত্রিকা বিছিয়ে রাস্তায় অবস্থান করছে। মানুষের এই ঢল আব্দুল্লাপুর-উত্তরা পেয়ে ছাড়িয়ে যায়। এছাড়া মাঠ, পথ, বাড়ির ছাদ, তুরাগের দুই তীর, নৌকা, যানবাহনসহ যে যেখানে পেরেছেন মোনাজাতে শরিক হয়েছেন। পুরুষের পাশাপাশি অনেক নারীও মোনাজাতে অংশ নিয়ে চোখের পানি ফেলে আল্লাহার কাছে রহমত প্রত্যাশা করে দোয়া করেছেন। মুসল্লিরা আল্লাহর দরবারে দুহাত তুলে অশ্রুসিক্ত নয়নে আল্লাহর কাছে গোনাহ মাফ চান এবং মুসলিম উম্মার সুখ, শান্তি কামনা করেন।

এর আগে ইবাদত বন্দিগী, তাসকিলে তামিল, ধর্মীয় আলোচনা, তাসবিহ তাহলিল আর তাবলীগের বিভিন্ন বিষয়ের উপর বয়ান শোনার মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে ইজতেমার তৃতীয় দিন শুরু হয়।

মোনাজাতে বিপুল মুসল্লির অংশগ্রহণকে কেন্দ্র রেখে বাড়ানো হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নেয়া হয়েছে যানবাহন চলাচলে কড়াকড়ি। তবে দিল্লীর মাওলানা সাদের ইজতেমায় অংশ নিতে না দেয়া ও নীরবে চলে যাওয়াটা তার অনুসারীদের মনে গভীর দাগ কেটেছে বলে জানিয়েছেন তার ভক্তরা। কিন্তু ইজতেমার মূল লক্ষ্য মানুষকে আল্লাহমুখী করা। তাই এ ঘটনায় ইজতেমার আয়োজনে তেমন প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন ইজতেমার আয়োজকরা।

এর আগে গত দুই দিন ধরে ইজতেমা মাঠে সার্বক্ষণিক ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন ছিলেন লাখ লাখ দেশি-বিদেশি মুসল্লি। ফজর থেকে এশা পর্যন্ত ইজতেমা মাঠে ঈমান, আমল, আখলাক ও দ্বীনের পথে মেহনতের ওপর বয়ান করেন আলেমরা। দেশ-বিদেশ থেকে আগত মুরুব্বিরা তাবলীগের ছয় ওছুলের মধ্যে দাওয়াতে দ্বীনের মেহনতের ওপর গুরুত্বারোপ করে বয়ান করেন।

ইজতেমা শেষে আগত মুসল্লিরা দ্বীনের দাওয়াতি কাজে দেশ বিদেশে বেরিয়ে যাবেন।

চার দিনের বিরতি শেষে আগামী শুক্রবার ১৯ জানুয়ারি শুরু হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। এই পর্ব শেষ হবে আগামী ২১ জানুয়ারি।

 

(জাস্ট নিউজ/জেআর/১১২৫ঘ.)