দুদকের ৩৩ মামলার ভুল আসামি জাহালম মুক্তি পাচ্ছেন

দুদকের ৩৩ মামলার ভুল আসামি জাহালম মুক্তি পাচ্ছেন

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ৩৩ মামলার ভুল আসামি জাহালমকে অব্যাহতি দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফলে তার মুক্তিতে আর কোনো বাধা থাকল না।

রবিবার হাইকোর্টের বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানিতে করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। আর জাহালমের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী অমিত দাস গুপ্ত।

অমিত দাস গুপ্ত বলেন, জাহালমকে ২৬ মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে আরও ৭ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল না হওয়ায় সে বিষয়ে আদেশ দেননি আদালত। ফলে তার মুক্তিতে আর বাধা থাকছে না।

এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় ‘ভুল আসামির’ কারাগারে থাকার ব্যাখ্যা জানতে দুদক চেয়ারম্যানের মনোনীত প্রতিনিধিসহ চারজনকে তলব করেন হাইকোর্ট।

জাতীয় একটি দৈনিকে “৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে: ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না…” শিরোনামের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে ২০১৪ সালে আবু সালেক নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। এর পর সালেককে তলব করে দুদক চিঠি দিলে সেই চিঠি পৌঁছায় জাহালমের টাঙ্গাইলের বাড়ির ঠিকানায়।

নরসিংদীর ঘোড়াশালের বাংলাদেশ জুট মিলের শ্রমিক জাহালম তখন দুদকে গিয়ে বলেন, তিনি আবু সালেক নন, সোনালী ব্যাংকে তার কোনো অ্যাকাউন্টও নেই। ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আবু সালেকের যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে সেটিও তার নয়।

কিন্তু দুদকে উপস্থিত বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা সেদিন জাহালমকেই ‘আবু সালেক’ হিসেবে শনাক্ত করেন। পরে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঘোড়াশাল থেকে জাহালমকে গ্রেফতার করে দুদক।

পরে আদালতেও জাহালম দুদকের পরিচয় বিভ্রাটের বিষয়টি তুলে ধরে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। কিন্তু কেউ তার কথা কানে তোলেননি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কারও কাছে সমাধান না পেয়ে জাহালমের বড় ভাই শাহানূর মিয়া গত বছর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে যান। তার আবেদনে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে জাহালমের সঙ্গে কথা বলেন কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। পরে মানবাধিকার কমিশনের তদন্তে বেরিয়ে আসে, আবু সালেক আর জাহালম একই ব্যক্তি নন।

কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এ মামলার অন্যতম আসামি নজরুল ইসলাম ওরফে সাগরের সঙ্গে কাশিমপুর কারাগারে কমিশনের কথা হয়। তিনি জানান, আবু সালেক মিরপুরের শ্যামল বাংলা আবাসন প্রকল্পের মালিক।

দুদকের মহাপরিচালক (আইন) মঈদুল ইসলামকে উদ্ধৃত করে জাতীয় ওই দৈনিকটি লিখে, জাহালম যে নির্দোষ, তা দুদকের অধিকতর তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। আদালতকে তা জানানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবু সালেকের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ৩৩ মামলা হয়েছে। কিন্তু আবু সালেকের বদলে জেল খাটছেন, আদালতে হাজিরা দিয়ে চলেছেন এ জাহালম। তিনি পেশায় পাটকল শ্রমিক। জাহালমের কারাবাসের তিন বছর পূর্ণ হবে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি।

এমজে/