ভয়ংকর অপরাধীদের হাতে ফুল কেন?

ভয়ংকর অপরাধীদের হাতে ফুল কেন?

সরকারের তালিকাভুক্ত ইয়াবার গডফাদার সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির চার ভাইসহ আত্মসমর্পণকারী ১০২ জন ইয়াবা কারবারিকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়েছে। শনিবার টেকনাফের একটি স্কুল মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং আইজিপির কাছে আগ্নেয়াস্ত্র এবং ইয়াবা জমা দিয়ে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে।

এ সময় তাদের হাতে ফুল তুলে দেয়া হয়। স্বীকৃত ইয়াবার কারবারিদের হাতে ফুল তুলে দেয়ার ঘটনায় জনমনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, অপরাধীরা আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করলে, তাকে ফুল দিয়ে বরণ করা যায় কিনা? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইয়াবার গডফাদারদের এভাবে ফুল দিয়ে বরণ করে ভয়ংকর অপরাধীদের বাহবা দেয়া হয়েছে। সারা দেশে যারা ইয়াবা ছড়িয়ে দিয়ে যুব সমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে, তাদের এভাবে বরণ করায় জনমনে নানা সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। জনশ্রুতি আছে, ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণে মধ্যস্থতা করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় থাকা ইয়াবার এক নম্বর গডফাদার আবদুর রহমান বদি। অথচ তিনি আত্মসমর্পণ করেননি। ইয়াবার মূলোৎপাটন না করে ‘ডালপালা’ ছেঁটে সমস্যার সমাধান হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইয়াবার গডফাদাররা ভয়ংকর অপরাধী। তারা আত্মসমর্পণ করলেও অপরাধের মাত্রা কমেনি। এই আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ার মধ্যেও ইয়াবার চালান আসা বন্ধ হয়নি। এদের মধ্যে অনেকেই আছে দলীয় লোক। এরা দেশ ও যুব সমাজকে ধ্বংস করছে। এই ভয়ংকর অপরাধীদের হাতকড়া না পরিয়ে ফুল দিয়ে বরণের দৃশ্য গণমাধ্যমে প্রচার তাদের উৎসাহিত করা হয়েছে। এতে ইয়াবার ভয়াল থাবায় জীবন ধ্বংস হয়ে যাওয়া হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর বাবা-মায়ের বুকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মানবাধিকার কর্মী, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান যুগান্তরকে বলেন, যেসব অপরাধী আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করে তাদের ফুল দিয়ে বরণের সুযোগ কতটুকু আছে, তা বিবেচনায় নেয়া দরকার । ইয়াবার কারবারিদের ফুল দিয়ে বরণ করায় সমাজে ভুল বার্তা যাওয়ার শঙ্কা আছে। একজন অপরাধী অপরাধ করার পর তাকে কোনোভাবেই বাহবা দেয়া যায় না।

তিনি বলেন, ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। কী প্রক্রিয়ায় তাদের আত্মসমর্পণ করানো হচ্ছে, পরে তাদের কী করা হবে কোনো কিছুই স্পষ্ট নয়। আমরা পত্রিকার খবরে দেখেছি সাবেক এমপির নাম (আবদুর রহমান বদি) ইয়াবা কারবারির তালিকায় আছে। তিনি তো এখন পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করেননি। এই প্রক্রিয়া নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে জনমনে অনেক প্রশ্ন আছে।
ইয়াবার ভয়াল থাবায় প্রাণ হারানো এক তরুণের অভিভাবক যুগান্তরের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘ওরা (ইয়াবার কারবারি) ডাকাত, খুনি, ধর্ষকের চেয়েও ভয়ংকর। কেননা খুনি একজনকে খুন করে। আর ইয়াবার কারবারিরা লাখ লাখ মানুষের জীবন ধ্বংস করে। তাদের হাতকড়া পরিয়ে কারাগারে পাঠানোর কথা। অথচ তাদের হাতে হাতকড়া নয়, ফুল দিয়ে বরণ করা হয়েছে। এমন দৃশ্য আজ টেলিভিশনে দেখতে হলো। এর চেয়ে কষ্টের মনে হয় আর কিছু নেই।’

আত্মসমর্পণের এমন আয়োজন দেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয়ে তারা এতদিন ইয়াবা ব্যবসা করেছে। এখন তারা আত্মসমর্পণ করেছেন। এদিন যারা আত্মসমর্পণ করেন তারা কোন পর্যায়ের তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় কক্সবাজারে ৭৩ জন বড় ইয়াবা ব্যবসায়ী বা গডফাদারের নাম আছে। এদের মধ্যে আত্মসমর্পণ করেছে মাত্র ২৪ জন। বাকি ৪৯ জনের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে ছয়জন। অবশিষ্ট ৪৩ জন এখনও আত্মসমর্পণ করেনি। এ তালিকার এক নম্বরে থাকা আবদুর রহমান বদি আত্মসমর্পণ করেননি। তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক আবদুল হাকিম সরকার যুগান্তরকে বলেন, আত্মসমর্পণকারীরা আইনের আওতায় এসেছে। তাদের বিচার যথাযথ প্রক্রিয়ায় হওয়ার কথা। এখন দেখতে হবে ভবিষ্যতে কী হয়।-যুগান্তর