ঠাকুরগাঁওয়ে অজ্ঞাত রোগে একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু, এলাকায় আতঙ্ক

ঠাকুরগাঁওয়ে অজ্ঞাত রোগে একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু, এলাকায় আতঙ্ক

প্রথমে বাবার, পরে একদিনের ব্যবধানে স্ত্রী ও জামাইয়ের মৃত্যু। এরপর রোববার দুই ভাই মারা গেছেন এবং এক ভাইয়ের স্ত্রী স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি। তিনি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। মাত্র ২০ দিনের ব্যবধানে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নে ভান্ডারদহ মরিচপাড়ার নয়াবাড়ী গ্রামে।চিকিৎসকগণ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন একটি বিশেষ ভাইরাসের কারণে এ মৃত্যুর ঘটনাগুলো ঘটছে।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নে ভান্ডারদহ মরিচপাড়া গ্রামের আবু তাহের (৫৫) মৃত্যুবরণ করেন। আবু তাহের বয়স্ক হওয়ার কারণে বিষয়টি এলাকাবাসীর মধ্যে তেমন প্রভাব ফেলেনি।

এরপর গত বৃহস্পতিবার আবু তাহেরের জামাই সদর উপজেলার রুহিয়া থানার কুজিশহর গ্রামের কহিম উদ্দীনে ছেলে হাবিবুর রহমান বাবলু (৩৫) একইভাবে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

বৃহস্পতিবার (২১ফেব্রুয়ারি) সকালে ৯টার সময় রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাপাতালে বাবলুর মৃত্যু হলে সে সংবাদ শোনার কিছুক্ষণ পর আবু তাহেরের স্ত্রী হোসনে য়ারা বেগম (৪৫) একই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে একই রোগে আক্রান্ত হন আবু তাহেরের দুই ছেলে ইউসুফ আলী (২৭) ও মেহেদী হাসান (২৪)। তাদের দুজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নেয়ার পথে রোববার ইউসুফ মারা যান এবং রবিবার রাতে মেহেদী রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসাতালের ২য় তলার মেডিসিন বিভাগের ৩নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

রংপুর হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে থাকা জাহির উদ্দীন ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ছাত্র দুলাল হোসেন জানায়, ডাক্তার রোগীর মুখে মাস্ক পরিয়ে দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি নিয়েছে। তবে কি রোগে আক্রান্ত ছিলো মেহেদি সেটা এখনও কোনো চিকিৎসক বলতে পারছেন না।

বেরোবির ছাত্র দুলাল আরো জানায়, রাতে রংপুর হাসপাতালের সব চিকিৎসক এবং ঢাকার চিকিৎসকসহ আলোচনায় বসবেন বলে চিকিৎসকগণ জানিয়েছেন। তারপর এ রোগের আসল রহস্য সম্পর্কে জানাবেন তারা।

মৃত্যুর কোনো রহস্য জানতে পারলেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি মোসাব্বেরুল হক জনান, আমি মুঠোফোনে রংপুর হাসপাতাল থেকে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি এটি একটি ব্রেইন ভাইরাস। আমরা বিষয়টিকে অতি গুরুত্বের সাথে দেখছি।

অন্যদিকে সকালে মৃত্যুবরণ করা ইউসুফের স্ত্রী কোহিনুর বেগম তার একমাত্র মেয়েকে নিয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. মোর্শেদ মাসুম বিল্লাহ বলেন, কোহিনুর ও তার মেয়ে বর্তমানে সুস্থ। আমরা নিবীড় পরিচর্যায় তাদের রেখেছি। আশা করছি কোনো ভয় নেই। তবে কোনো প্রকার সমস্যা হলে আমরা পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।

রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার সময় ইউসুফ আলীর দাফন কার্য সম্পন্ন করেছে স্থানীয় লোকজন ও তার পরিবার। এ সময় এ ভাইরাস থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষার জন্য মোনাজাতও করেন স্থানীয়রা।

হাবিবুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ভাইরাসের আতঙ্কে বাড়ির আশপাশের লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে দেয়া শুরু করেছে। জনমনে আতঙ্কের ছাপ দেখা গেছে। কোন সময় কাকে আক্রমণ করে এই ভাইরাস এ ভেবে অনেকেই বাড়ি ছাড়তে শুরু করেছে।

তবে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, আবু তাহেরের জামাই হাবিবুর ৬ বছর ধরে দুবাই থাকার পর দেশে ফিরেছেন। দেশের ফেরার পরই এ ভাইরাস আক্রমণ করেছে তার পরিবারে।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফিরোজ জামান জুয়েলকে বিষয়টি দেখার জন্য বলা হয়েছে। তিনি সকালে মৃত্যুবরণ করা ইউসুফ আলীর প্রেসক্রিপশন সংগ্রহ করেছেন।

তিনি আরো জানান, কি কারণে এমন ঘটনা ঘটছে, বিশেষজ্ঞ ছাড়া আপাতত বলা হচ্ছে না।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, ঘটনার কথা শুনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে সিভিল সার্জনকে অবগত করা হয়েছে। তারা বিষয়টি দেখছেন।

এমজে/