পুরান ঢাকার কেমিক্যাল যাচ্ছে শ্যামপুর ও টঙ্গিতে

পুরান ঢাকার কেমিক্যাল যাচ্ছে শ্যামপুর ও টঙ্গিতে

পুরান ঢাকার বিভিন্ন ভবনে রক্ষিত কেমিক্যাল অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য রাজধানীর শ্যামপুর এবং টঙ্গিতে নিরাপদ স্থানে সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। কদমতলী থানার শ্যামপুর মৌজায় অবস্থিত বিসিআইসির উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরি এবং ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে টঙ্গীর কাঁঠালদিয়া মৌজায় বিএসইসি’র খালি জায়গায় এগুলো সরিয়ে নেয়া হবে।

প্রাথমিকভাবে দুটি স্থান মিলিয়ে ১২ দশমিক ১৭ একর জমির ওপর ৪ লাখ বর্গফুট আয়তনের স্টিল শেড নির্মাণ করে এগুলো সংরক্ষণ করা হবে। পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে জায়গা দেয়া হলে স্থায়ী গুদামে যাবে এসব কেমিক্যাল।

২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ভবনে রক্ষিত দাহ্য কেমিক্যাল নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর/সংরক্ষণের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য জায়গা নির্ধারণের বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় বুধবার এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

শিল্প মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন শিল্পসচিব মো. আবদুল হালিম। এতে উপস্থিত ছিলেন- শিল্প, ভূমি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ, কৃষি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজউক, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, বিসিআইসি, বিএসইসি, বিএডিসি, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি এবং কেমিক্যাল ও প্লাস্টিক সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা।

এর আগে সোমবার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সভায় কেমিক্যাল সরানোর জন্য ৬ মাসের মধ্যে ব্যবসায়ীদের জায়গা দেয়ার কথা বলা হয়।

বুধবারের সভায় পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সাময়িক সময়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে উপযুক্ত স্থান নির্ধারণের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সময় ব্যবসায়ী নেতাদের বৃহস্পতিবারের মধ্যে তাদের কেমিক্যাল সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমাণ নির্ধারণ করে লিখিতভাবে শিল্প মন্ত্রণালয়কে জানানোর পরামর্শ দেয়া হয়। আলোচনা শেষে রাজধানীর শ্যামপুর এবং টঙ্গীর নিরাপদ স্থানে এগুলো সরানোর বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সভায় কেমিক্যাল ও এসিড ব্যবসায়ীরা বলেন, চকবাজারে অগ্নিদুর্ঘটনার পর কেমিক্যাল ইস্যুতে স্থানীয়ভাবে একধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে পুরাতন ঢাকার প্রায় ২৫ লাখ ব্যবসায়ী বেকার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তারা ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিদ্যমান ভীতি দূর করতে সরকারের সহায়তা চান। সাময়িকভাবে টঙ্গিতে নির্ধারিত জায়গায় এসিড ও শ্যামপুরের জায়গায় কেমিক্যাল সরানোর বিষয়ে তারা একমত পোষণ করেন।

সভায় শিল্পসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী রাজধানী ঢাকা থেকে নিরাপদ স্থানে কেমিক্যাল স্থানান্তরের বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে এগুলো স্থানান্তরের জন্য ব্যবসায়ীদের জায়গা করে দেয়া হবে। জননিরাপত্তার স্বার্থে অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য এসিড ও কেমিক্যাল স্থানান্তর/সংরক্ষণের জন্য দুটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। আরও জায়গা প্রয়োজন হলে, শিল্প মন্ত্রণালয় সেটিরও ব্যবস্থা করবে।

শিল্পসচিব আরো বলেন, টঙ্গি ও কদমতলীতে সরকারের খরচেই স্টিল স্ট্রাকচার নির্মাণ করে দেয়া হবে। তবে ব্যবসায়ীরা সেখানে যৌক্তিক ভাড়ায় কেমিক্যাল সংরক্ষণ করবেন। তিনি আগামী তিন দিনের মধ্যে কমপ্লায়েন্স মেনে এ বিষয়ে কারিগরি প্রস্তাব প্রণয়নের জন্য বিএসইসি এবং বিসিআইসিকে নির্দেশনা দেন। জাতীয় জরুরি প্রয়োজনে এরপরই দ্রুত সরকারি অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

একই সঙ্গে তিনি এ লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।

এমআই