ভারতের ‘মিথ্যাচার’ উঠে এলো বিশ্ব গণমাধ্যমে

ভারতের ‘মিথ্যাচার’ উঠে এলো বিশ্ব গণমাধ্যমে

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে জঙ্গি হামলায় ৪০ জন জওয়ান নিহত হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এই উত্তজেনা বেশি ছড়ায় পাকিস্তানের খাইবার-পাখতুনখোয় প্রদেশের বালাকোট শহরে ভারতের হামলার পর।

ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই হামলায় অন্তত ৩০০ জঙ্গি নিহত হয়েছে। তবে ভারতের সেই দাবি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। এমনকি আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমও সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর ওই হামলার পর সেখানে ৩০০ জন জঙ্গি নিহতের কোনো প্রমাণ পায়নি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।

পাকিস্তানে হামলার পর আন্তর্জাতিক একদল সাংবাদিককে বালাকোটে নিয়ে যায় পাকিস্তান সরকার। তবে কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা নিজ উদ্যোগেই সেখানে চলে গিয়েছিলেন সংবাদ সংগ্রহ করতে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গ্রামবাসীরা বলেছেন, তারা চারবার বিকট শব্দের আওয়াজ শুনতে পান। তবে এ ঘটনায় একজন সামান্য আহত হয়েছেন। পাহাড়ের চূড়ায় একটি মাদ্রাসা রয়েছে। যেটি পরিচালনা করে জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ। তবে ভারতীয় বিমানবাহিনী যে স্থানে বোমা ফেলেছে তা মাদ্রাসা থেকে অন্তত এক কিলোমিটার দূরে।

ঘটনাস্থলে যাওয়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আজমল নামের ২৫ বছর বয়সী এক যুবক বলেন, ‘সেখানে গিয়ে দেখি, কিছু গাছ পড়ে রয়েছে। একটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিস্ফোরণের ফলে চারটি বড় গর্ত হয়ে রয়েছে।’

এদিকে রয়টার্সের উদ্ধৃতি দিয়ে এই সংবাদটি প্রকাশ করেছে দ্য গার্ডিয়ান, ডেইলি মেইল এবং হাফিংটন পোস্টসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। পরে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলোর সে খবর নিয়ে ‘সন্দেহ’ প্রকাশ করে ভারতের কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমও।

নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে,পশ্চিমের কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা সেখানে বড় আকারের জঙ্গি প্রশিক্ষণ থাকার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলেন, পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ এখন এধরনের প্রশিক্ষণ শিবির পরিচালনা করে না। জঙ্গিরা এখন ছোট-ছোট দলে বিভক্ত হয়ে দেশটির বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়েছে।

দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, ভারতীয়দের বোমা হামলার পরপরই বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা ছুটে যান বালাকোটে। তারা সেখানে কয়েকটি বড় গর্ত ও ভাঙা গাছ দেখতে পান। তাদের ওপর হামলা হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন সেখানকার গ্রামবাসীরা।

৪৫ বছর বয়সী একজন গ্রামবাসী তাহির খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানে কেউ মারা যাননি। কেউ আহতও হননি। জানতে চাই, আমরা এমন কী অপরাধ করেছি যে আমাদের ওপর হামলা করা হলো?’

এ ছাড়া নিজস্ব সংবাদদাতার উদ্ধৃতি দিয়ে আল-জাজিরা জানিয়েছে, জনবসতিহীন পাহাড়ি এলাকায় একজন কৃষকের ফসলের ক্ষেতে ভারতীয়দের বোমা পড়েছে। সেখানে কোনো দালানের ধ্বংসাবশেষ বা কোনো হতাহতের দৃশ্য দেখা যায়নি।

ভারতীয় বিমানবাহিনীর ওই হামলায় ‘সামান্য’ আহত হয়েছেন স্থানীয় কৃষক নূরান শাহ। তিনি সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, ‘প্রথম শব্দে আমার ঘুম ভেঙে যায়। বিছানা থেকে উঠে যাই। দ্বিতীয় বোমাটি পড়ে যেন আমার দরজার কাছেই। তারপর, দরজা খুলে বাইরে আসতেই কপালে আঘাত লাগে।’

এমআই