ডাকসু হবে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের প্রতিচ্ছবি: মাহমুদুর রহমান মান্না

ডাকসু হবে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের প্রতিচ্ছবি: মাহমুদুর রহমান মান্না

রাত পোহালেই ডাকসু নির্বাচন। দীর্ঘ ২৮ বছর পরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে অপরদিকে রয়েছে শঙ্কাও। কি হবে এই নির্বাচনে? কে হবেন ভিপি-জিএস-এজিএস। নির্বাচন কী স্বচ্ছ হবে নাকি অস্বচ্ছ? এ নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন।

ডাকসুর দুবারের ভিপি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক এই নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি এখন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা।

ডাকসু নির্বাচন ও তার সময়কার বিভিন্ন স্মৃতি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন গণমাধ্যমের সাথে। তিনি বলেন, আমি প্রথমবার নির্বাচন করেছি ১৯৭৯-৮০ সালে। তার আগে আমি দুই বছর জেলে ছিলাম। আমি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম ১৯৭৩ এ। আর ৭৮ এ আমি জেলে থাকাকালেই ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছি।

২৬ মাস জেল খেটে বেরিয়েছি। সামনে ডাকসু নির্বাচন। সবাই আমাকে নির্বাচন করতে বলল। আমি দাঁড়ালাম এবং জিতলাম। আসলে প্রথম বিজয়ের আনন্দটা অন্যরকম।

সেই সময়ের পরিবেশটা এখনকার চাইতে অনেক ভালো ছিল। আমি, ওবায়দুল কাদের, কাজী আকরাম দাঁড়িয়েছিল। আমাদের মধ্যে খুবই ভাল সম্পর্ক ছিল। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালবাসা বিশ্বাসটা ছিল। এখনকার মতো এতো সন্ত্রাস ছিল না। উৎসবমুখর যে ভোটের কথা বলা হয় সেই সময়টায় সেটা ছিল।

আরেকটি বিষয়, আমি এতগুলো বছর পরে বলতে চাই, আমি এখন যেমন ভালো বক্তব্য দিই তখনো কিন্তু আরও ভালো বক্তব্য দিতাম। তখনকার বক্তব্যে অনেক বেশি অলংকার থাকত। আমি ছেলেদের হলে গিয়েছি মেয়েদের হলে গিয়েছি আমার বক্তব্য শোনার জন্য তখন সবাই আসত।

ওবায়দুল কাদের এখন জীবিত আছেন, বেচারার জীবন অনেকটাই ঝুঁকিতে চলে গেছে, আজকে বিভিন্ন জায়গায় বক্তব্য দেন, যেগুলো নিয়ে নানান ধরনের সমালোচনা হয়। তখনও তিনি একটু কমিট টাইপের বক্তৃতা করতেন। ছাত্ররা তার বক্তব্য খুব একটা পছন্দ করত না। কিন্তু সর্ম্পক ভালো ছিল। আমি এখনো বলি ওবায়দুল কাদের ‘হার্মলেস’ (ক্ষতিকারক নয় এমন) মানুষ।

আওয়ামী লীগে একজন আরেকজনের ক্ষতি করার চেষ্টা করে, বিরোধীদল তো করবেই, কাউকে মার্ডারও করে ফেলবে কিন্তু ওবায়দুল কাদের কাউকে ফুলের টোকা দেয়ারও চিন্তা করেনি। প্রতিহিংসার রাজনীতি তার ভেতরে নাই। এখনও ওবায়দুল কাদের পারলে আমাকে ফোন করে।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই নির্বাচন নিয়ে আমি কোনো আশাবাদী নই। আশাবাদী হওয়ার তো কোনো জায়গা নেই। আমি কী আশা করতে পারি। নির্বাচনটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হোক, বিতর্কের উর্দ্ধে হোক, ছাত্ররা যাতে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে সেই পরিবেশ থাকুক সেটিই সবার কামনা থাকে। আমি মনে করছি এমনটি এবার হবে না।

মাহমুদুর রহমান মান্না আরো বলেন, আমি মনে করিনা কোনোভাবেই এই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। ডাকসুর এখন যে পরিস্থিতি বা যেটা হতে যাচ্ছে সেটা ৩০ ডিসেম্বরের ভোট ডাকাতির একটা প্রতিচ্ছবি আসবে।

পুলিশ র‌্যাব দিয়ে আগের রাতের মতো হয়ত ভোটের বাক্স ভর্তি করে রাখবে না বা সিল মারবে না, কিন্তু ভোটের দিন সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী ভোট দিতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। কারণ সবকিছু তো তাদেরই দখলে।

তিনি বলেন, সহজ উত্তর তথাকথিত ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তো সব দলই এসেছিল তাহলে কেন ভোট ডাকাতি হলো। যারা ক্ষমতায় আছে তাদের ইচ্ছাটাই যদি ভাল না থাকে তাহলে তো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারেনা।

১১ তারিখ বিকাল থেকে তারা (ছাত্রলীগ) ঘোষণা দিয়ে দেবে তারা জিতে গেছে। মানুষকে বোঝানোর জন্য হয়ত তারা দুএকটি হল বা অন্যান্য দু চারটা দিলে দিতেও পারে। এছাড়া সবগুলোই ক্ষমতাসীনরা নিয়ে নেবে।

২৮ বছর নির্বাচন হয়নি। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে আপনি মনে করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, রাজনৈতিক আন্দোলন অভ্যুথানের পরিস্থিতি এগুলো বাদ দিয়ে সব এক্সটা কারিকুলাম সেক্টরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।আমাদের সময়ে আমরা যতগুলো অনুষ্ঠান করেছি।এক্সটা কারিকুলাম বলতে যেমন- গান, বাজনা, নাটক, বিকর্ত, খেলাধুলা প্রতিটি সেক্টরে ব্রিলিয়ান্ট ব্রিলিয়ান্ট ছেলে-মেয়েরা ছিল। তাদের প্রতিভা বিকশিত হয়েছিল।

স্বাভাবিকভাবে এ রকম অনেক শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়েছে। প্রতিভার যে বিকাশ সে অধ্যায়টা দেখেনি এখনকার ছেলেমেয়েরা। এখন এখানে গুণ্ডামি মাস্তানি ছাড়া আর কিছু নাই।

ধর্মভিত্তিক দলের ডাকসুতে অংশগ্রহণ আপনি কিভাবে দেখেন? এই প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি হওয়া উচিত না। আমি জামায়াত ইসলাম চাই না কিন্তু হেফাজত ইসলাম চাই, তো কীভাবে হবে? ধর্ম মানুষের কাছে থাকুক, এটা নিয়ে রাজনীতি করা উচিত না। আমি মনে করি এই পলিটিক্সের মধ্যে ধর্ম আনাই উচিত হয় নাই। কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদরাই সেটা করে নাই। এর জন্য তারাই দায়ী।

নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ করতে কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে বলে আপনি মনে করেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খুবই সিম্পল। কোনোভাবেই ডাকসু বিরোধী দলের হাতে যেতে দিতে পারে না সরকার। তারা এর জন্য সব কিছু করবে। ভার্সিটির অথোরিটি, প্রশাসন সবকিছুকে তারা কাজে লাগাবে। তারা সাধারণ ছাত্রদের কোনো অভিযোগই তো শুনছে না। আসলে ভোট দিলেও তো কোনো চেঞ্জই হবে না, এই কালচারটাই তারা তৈরি করেছে।

তিনি আরো বলেন, মাহমুদুর রহমান মান্না: আমি দুইবার ডাকসুর ভিপি ছিলাম। এক সময় রাশেদ খান মেনন, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, আ স ম আব্দুর রব আমিসহ ডাকসুকে দেখেই উদ্ধুদ্ধ হয়েছি। বলতে পারি রাজনৈতিক দীক্ষাও পেয়েছি। সে রকম একটা ডাকসু প্রত্যাশা তো করতামই, কিন্তু সে রকম যে হবে না সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। সুত্র যুগান্তর।

এমআই