রয়টার্স ও বিবিসির প্রতিবেদন

প্রত্যাবাসন নিয়ে রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভ

প্রত্যাবাসন নিয়ে রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভ

ঢাকা, ২০ জানুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : রোহিঙ্গাদের মাতৃভূমি রাখাইন রাজ্যে ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের চূড়ান্ত প্রস্তুতির মধ্যেই নাগরিকত্বের অধিকার, হত্যা-ধর্ষণ-লুটপাটের বিচারসহ কয়েক দফা শর্ত নিয়ে সামনে আসার পরিকল্পনা করছেন কক্সবাজারের ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গা নেতারা।

বার্তা সংস্থা থমসন রয়টার্স এক বিশেষ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ছয়জন রোহিঙ্গা নেতা বার্মিজ ভাষায় হাতে লেখা একটি স্মারকলিপির খসড়া তৈরি করেছেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ৪০টি গ্রামের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে থাকা ওই নেতারা। তাঁদের স্মারকলিপি চূড়ান্ত হলেই তা বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের কাছে তা তুলে ধরা হবে।

ওই খসড়ায় বলা হয়েছে, মিয়ানমার সরকার যতক্ষণ না এসব দাবি পূরণ করছে, ততক্ষণ আশ্রয় শিবির থেকে নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা কোনো রোহিঙ্গা মুসলমান মিয়ানমারে ফিরে যাবে না।

গত ১৬ জানুয়ারি মিয়ানমার ও বাংলাদেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের মধ্যে করা চুক্তিতে আগামী সপ্তাহে শুরু করে দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। প্রতিদিন ৩০০ করে রোহিঙ্গা নিজ দেশে ফিরে যাবে। কয়েক মাস পর এই সংখ্যা বাড়ানো যায় কি না মিয়ানমার সরকার সেটি বিবেচনায় নেবে। এ জন্য এক লাখ নিবন্ধিত রোহিঙ্গার একটি তালিকা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সফল করতে যে বিপুল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, রোহিঙ্গাদের এই দাবিনামা তার একটি নমুনা।

এ দিকে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে একদল রোহিঙ্গা গতকাল শুক্রবার কক্সবাজারের একটি শরণার্থী শিবিরে বিক্ষোভ করেছে। কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের একটি ব্লকে এই বিক্ষোভে শতাধিক শরণার্থী অংশ নেন।

বিক্ষোভকারীরা মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর আগে সেখানে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি নিরাপদ এলাকা গড়ে তোলার দাবি জানান। বিক্ষোভকারীদের সামনে ছিল ইংরেজিতে লেখা একটি ব্যানার। এতে ছয়টি দাবি তুলে ধরা হয়।

তবে বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের এ ধরনের বিক্ষোভের কোনো তথ্য তাদের জানা নেই।

উখিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিকারুজ্জামান বলছেন, এ ধরনের কোনো বিক্ষোভের কথা তিনি শুনেননি।

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) তথ্যমতে, গত ২৫ অক্টোবর রাখাইন রাজ্যে ৩০টি পুলিশ ও সেনাক্যাম্পে হামলার পর সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা মাতৃভূমি ছাড়তে বাধ্য হয়। এ ধারা এখনো অব্যাহত আছে। তাঁরা বিপদসংকুল নদী ও সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী শরণার্থী শিবিরে এসে আশ্রয় নিচ্ছে। সেখানে এরই মধ্যে এক মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৩৬ হাজার ৩৭৩ জন এতিম শিশুকে শনাক্ত করা হয়েছে। সর্বশেষ বাংলাদেশ সব মিলিয়ে দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার নিবন্ধন সম্পন্ন করেছে।

এই ঘটনাকে ‘জাতিগত নিধনের ধ্রুপদি উদাহরণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ মিয়ানমার ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি পরিহার করার পাশাপাশি এই জনগোষ্ঠীকে নিজেদের দেশের নাগরিক বা স্বতন্ত্র নৃগোষ্ঠী বলেও স্বীকৃতি দিতে রাজি নয়।

(জাস্ট নিউজ/জেআর/১০৫৫ঘ.)