বিদেশী মিডিয়ায় ছাত্রবিক্ষোভ

পরিবহন খাত দুর্নীতিগ্রস্ত, অনিয়ন্ত্রিত

পরিবহন খাত দুর্নীতিগ্রস্ত, অনিয়ন্ত্রিত

কয়েক দশকের মধ্যে বাংলাদেশে সরকারবিরোধী সবচেয়ে বড় ছাত্র বিক্ষোভের মাত্র কয়েক মাসের মাথায় আবার ঢাকায় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হয়েছেন একজন ছাত্র। এর প্রতিবাদে বুধবার রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন অংশে ও অন্যান্য স্থানে আবার হাজার হাজার ছাত্র রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন। বাংলাদেশের পরিবহন খাত ব্যাপকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত, অনিয়ন্ত্রিত এবং বিপদজনক। রাস্তায় চলাচলের সার্টিফিকেট ছাড়াই হাজার হাজার বাস ও লবি এখানকার রাস্তায় চলাচল করে। মহামারির মতো রূপ ধারণ করেছে সড়ক দুর্ঘটনা। নজরদারিকারী গ্রুপগুলোর মতে, প্রতি বছর এখানে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ১২০০০ মানুষ নিহত হন। বিইউপির শিক্ষার্থী আবরার নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ছাত্র আন্দোলন নিয়ে এসব কথা লিখেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

বার্তা সংস্থা এএফপির উদ্ধৃতি দিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে অনলাইন ভয়েস অব আমেরিকা ও লন্ডনের ডেইলি মেইল।

এতে বলা হয়েছে, একজন টিনেজার শিক্ষার্থীকে (আবরার) গতিশীল একটি বাস ধাক্কা দিয়ে হত্যা করার পর বুধবার ঢাকায় বিক্ষোভ করেছে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। মাত্র কয়েক মাস আগে একই রকম দুর্ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ। কয়েক দশকের মধ্যে সে সময় সবচেয়ে বড় ছাত্র বিক্ষোভ হয়েছিল সরকারের বিরুদ্ধে। তবে এবারও শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ (আমরা ন্যায়বিচার চাই) স্লোগানে প্রায় দুই কোটি মানুষের ঢাকায় বড় বড় জংশনে অবরোধ সৃষ্টি করে। সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টিকে যেন অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে সরকার দেখে তারা সেই দাবি করছেন। জবাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, সব শিক্ষার্থীকে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করছি। আমাদেরকে আমাদের কাজ করতে দিন।

এএফপি আরো লিখেছে, এবারের এই বিক্ষোভ গত আগস্টে বড় বিক্ষোভের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। সেই বিক্ষোভ স্থায়ী হয়েছিল এক সপ্তাহ। তখন সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর প্রকট আকার ধারণ করে আন্দোলন। লাখ লাখ শিক্ষার্থী তখন রাজপথে নেমে আসেন। তারা সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। এই সরকারের বিরুদ্ধে ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালানোর অভিযোগ আছে। ওই সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। তাদেরকে গ্রেপ্তার করে। সরকারের সমালোচক প্রথম সারির ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়, যারা বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন। আবার অনেককে প্রহার করা হয়েছিল। শান্তিপূর্ণ একটি প্রতিবাদ বিক্ষোভে এত কঠোরতা দেখানোর জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে ব্যাপক সমালোচনা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান প্রতিপক্ষ জেলে। ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি টানা তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন। তবে এই নির্বাচনে রয়েছে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিরোধী দলীয় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে।

ওদিকে বার্তা সংস্থা সিনহুয়া লিখেছে, বেপরোয়া গাড়ি চালনার কারণে ট্রাজিক এক ঘটনায় আরো একজন শিক্ষার্থী মারা যাওয়ায় বুধবার রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন অংশ ও অন্যান্য স্থানে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অবস্থান নিয়ে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী সকাল থেকেই অবরোধ করেন বেশ কয়েক ঘন্টা। তাদের দাবি নিরাপদ সড়ক। মঙ্গলবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে যুক্ত একটি সড়কে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) একজন ছাত্র আবরার নিহত হন বাসচাপায়। আবরার যেখানে নিহত হয়েছিলেন সেখানে ছাত্রদের ক্ষোভের মুখে, নিরাপদ সড়কের দাবির মুখে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বুধবার একটি ফুটওভার ব্রিজের ভিত্তিপপ্রস্তর স্থাপন করেছে।

টেলিভিশন ফুটেজে দেখা গেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বিকেলে ছাত্রদের আশ্বস্ত করতে বা তাদের বিক্ষোভ তুলে নেয়ার জন্য সচেষ্ট হয়েছে। এরই মধ্যে তারা বাসচালক ও তার সহকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। আটক করেছে বাসটি।

অনলাইন গালফ টাইমস লিখেছে, যে শহর নাজুক সড়ক নিরাপত্তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি ছাত্রদের তীব্র আন্দোলন প্রত্যক্ষ করেছে সেখানেই আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হয়েছেন। এর প্রতিবাদে বুধবার হাজার হাজার শিক্ষার্থী ঢাকায় বিক্ষোভ করেছেন। তাদের দাবি, নিরাপদ সড়ক। এ সময় তাদের হাতে নানা রকম প্লাকার্ড ছিল। তারা বিভিন্ন স্থানে অবরোধ সৃষ্টি করে। ফলে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট। গণগণে সূর্য্যরে তাপ উপেক্ষা করে তারা অবস্থান নেন রাস্তায়। আমরা ন্যায়বিচার চাই- জাতীয় শ্লোগান দিতে থাকেন।

বিইউপির প্রথম বর্ষের ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরীকে (২০) একটি যাত্রীবাহী বাস চাপা দিলে তিনি নিহত হন। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হয়।

এমজে/