সোনারগাঁয়ে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে আহত অর্ধশত

সোনারগাঁয়ে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে আহত অর্ধশত

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে চৈতি কম্পোজিট গার্মেন্টের রিনা আক্তার (২৮) নামে এক শ্রমিক নিহত হওয়ার খবরে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকরা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে।

পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে শ্রমিকদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-সার্কেল) খোরশেদ আলম ও সাংবাদিকসহ প্রায় অর্ধশত মানুষ আহত হয়েছেন।

এদিকে ঘটনার পর পরই কারখানা কতৃপক্ষ দুইদিনের ছুটি ঘোষণা করে।

চৈতি গার্মেন্টের সুইং অপারেটর রুমা আক্তার ও লাইন ম্যান পংকজ জানান, দুপুরে কারখানার মূল ভবনের তিন তলায় ১২নং লাইনে সুইং অপারেটর হিসেবে কাজ করছিলেন রিনা আক্তার নামে এক শ্রমিক। তাকে ওই লাইনের ইনচার্জ জামালসহ কয়েকজন নির্যাতন করে হাত-পা বেঁধে বাথরুমে ফেলে রাখে। পরে অন্য শ্রমিক বাথরুমে গেলে বিষয়টি দেখে নাজমা আক্তারসহ দুজন শ্রমিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ দ্রুত হাত-পা বাঁধা রিমাকে গাড়িতে করে কারখানা থেকে বের করে নিয়ে যায়। পরে আরেকটি গাড়িতে করে জ্ঞান হারানো দুই শ্রমিককে বের করার সময় শ্রমিকরা গাড়ি ভাঙচুর করে তাদের উদ্ধার করে। এরপর রিনার নিহতের খবরে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে প্রথমে কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ করে। পরে তারা কারখানার পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গিয়ে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে খন্ড খন্ড বিক্ষোভ মিছিল করে ১০/১২টি গাড়ি ভাঙচুর করে। এর ফলে মহাসড়কের ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে সোনারগাঁও থানা পুলিশ, কাচঁপুর হাইওয়ে পুলিশ, কাচঁপুর শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করতে ফাঁকা গুলি ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে।

তারা আরো জানান, শ্রমিক-পুলিশের সংঘর্ষে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-সার্কেল) খোরশেদ আলম, সোনারগাঁও থানার ওসি অপারেশন আলমগীর হোসেন, পুলিশ সদস্য আবুল হাসান, কনস্টেবল শাহ আলম, রাখাল মিয়া, শিল্প পুলিশ সদস্য হযরত, রুবেল, সাংবাদিক হারুন অর রশিদ, আনোয়ার, ইউসুফ আলী, গাজী মোবারক, শ্রমিক বিথী, বৃষ্টি, শাহ আলম, রিদয় ও সবুজসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন।

কারখানার উপ মহাব্যবস্থাপক বদরুল আলম জানান, কারখানায় রিনা আক্তার নামে একজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তার মৃত্যুর গুজবে শ্রমিকরা প্রথমে কারখানার ভেতরে অবস্থান নিয়ে কারখানা ও একটি গাড়ি ভাংচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারখানা দুইদিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ) অঞ্চল খোরশেদ আলম জানান, কারখানায় শ্রমিক নিহত হওয়ার খবরে শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে। পরে শ্রমিকদের স্বাভাবিক করতে গেলে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় আমিসহ আমার ৬জন পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিক আহত হয়। অবরোধকারীদের শান্ত করতে পুলিশ ৪১ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও ১০ রাউন্ড টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। পরে শ্রমিকদের লাঠিচার্জ করে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে।

এমআই