ঘর আলোকিত হলো আলোচিত সেই ইউএনও’র

ঘর আলোকিত হলো আলোচিত সেই ইউএনও’র

একটি সন্তানের জন্য যে মায়ের এত প্রাণপণ লড়াই, সেই মায়ের ঘর অবশেষে আলোকিত হয়েছে। তার সন্তান গেছে আপনালয়ে। আলোচিত এই মা নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার সেই ইউএনও হোসনে আরা বীনা। কন্যা সন্তানের নাম রাখা হয়েছে ইয়োনা।

উদ্বেগ উৎকণ্ঠা আর দুঃখ কষ্ট শেষে কন্যা সন্তান নিয়ে বাসায় ফিরেছেন সেই আলোচিত ইউএনও। এক মাস দশ দিন পর মায়ের বুকে ফিরেছে তার সন্তান ইয়োনা। সেই সঙ্গে পুরো ঘরে আলো ছড়িয়ে দিয়েছে নবজাতকটি। বাবা-মায়ের সঙ্গে দাদা দাদির মুখেও ফুটিয়েছে হাসি। আর হাসিতে ভুলিয়েছে সকল কষ্ট। আর সেই ইউএরও’র জন্য সকলের কাছে দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করেছে পরিবার।

ইয়োনা হলো নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসনে আরা বেগম বীনার একমাত্র সন্তান। যার জন্মের শুরু থেকেই উৎকণ্ঠা ও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে যেতে হয়েছে। যা হয়তো ওকে সারা জীবন মনে করিয়ে দিবে তার প্রতিটি সফলতায়।

ইতোমধ্যে সন্তানের জন্য প্রার্থনা জানিয়ে ইউএনও হোসনে আরা বেগম বীনার একজন আত্মীয় নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক আইডি থেকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, ‘মহান আল্লাহর অপার রহমতে দীর্ঘ এক মাস দশ দিন পর আমার ইয়োনা মামনি হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছে। সবাই আমার মামনির দীর্ঘায়ু ও সুস্থতার জন্য দোয়া করবেন।'

গত ৯ ফেব্রুয়ারি নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ইউএনও হোসনে আরা বীনা জানিয়েছিলেন, একজন নারী হিসেবে ৯ বছরের দাম্পত্য জীবনে বহু চিকিৎসার পরও যখন সন্তান লাভ করতে পারেননি তখন বিগত পাঁচ মাস আগে জানতে পারেন দুই মাসের সন্তানসম্ভবা। আর এ অবস্থায় নারায়ণগঞ্জের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় আসনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নির্বাচনের কাজ অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন করেন। এর জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বাহবাও পেয়েছেন তিনি। একজন নারী কর্মকর্তা হিসেবে যখন এগিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই একজন বিশেষ কর্মকর্তা বিভিন্ন মহলে পায়তারা করছিলেন বদলি করার জন্য।

এরই মধ্যে ২০১৯ সালের ২০ এপ্রিল সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ডাক্তারি পরীক্ষার সময় একজন ব্যাচমেটের মাধ্যমে জানতে পারেন ওই নারীকে ওএসডি অর্থাৎ বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। আর অপরাধ হলো তিনি সন্তানসম্ভবা। খবর শোনে প্রচণ্ড মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে ফুসফুসে ব্লাড সার্কুলেশন অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। ফলে পেটের সন্তানের অক্সিজেনের সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যায়। এতে গর্ভের শিশু নড়াচড়া বন্ধ করে দিলে ডাক্তার ও পরিবারের সিদ্ধান্তে ৩১ মাস বয়সী প্রিমেচিউর বেবিকে সিজার করে বের করতে হয়। আর এখন সেই শিশু ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালের এনআইসিওতে বেঁচে থাকার জন্য প্রাণপন যুদ্ধ করে যাচ্ছে।’

তিনি স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘আমার অপরাধ হলো আমি সন্তান সম্ভবা, আর তার চেয়েও বড় কারণ হল সেই তথাকথিত ক্ষমতাধর কর্মকর্তার উপরের মহল কর্তৃক তদবির।’ তবে বিশেষ কর্মকর্তার পরিচয় উল্লেখ করেননি।

ওই সময়ে হোসনে আরা বীনাকে ওএসডি করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে জাতীয় সংসদে তুমুল আলোচনা হয়। ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। খোদ প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে বিষয়টি। তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সেই ওএসডির আদেশ বাতিল করা হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুহাম্মদ শাহীন ইমরান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে আদেশে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনে আরা বেগমকে সিনিয়র সহকারী সচিব (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি আদেশে তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য অংশটুকু এতদ্বারা বাতিল করা হলো। জনস্বার্থে এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।

এমজে/