মেয়রের পিস্তলের বাটেঁর আঘাতে যুবক আহত

মেয়রের পিস্তলের বাটেঁর আঘাতে যুবক আহত

রাজশাহী, ২১ জানুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে আলোচিত তাহেরপুর পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ এবার নতুন কাণ্ড ঘটিয়েছেন।

শুক্রবার রাতে তিনি পিস্তলের বাঁট দিয়ে স্থানীয় এমপির এক সমর্থকের মাথা থেঁতলে দিয়েছেন। মাথায় মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত আমান উল্লাহ আমানকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। একই সময় তাহেরপুর পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক শাহীকেও লাঞ্ছিত করা হয়।

সদরের পেঁয়াজহাটে রাত ১০টার দিকে বাগমারার সংসদ সদস্য এনামুল হকের সমর্থক আমানের (৩০) মাথায় মেয়র কালাম পিস্তলের বাঁট দিয়ে আঘাত করেন। এতে আমানের মাথা থেঁতলে যায়। সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আমানের মা রিজিয়া খাতুন জানান, শনিবার দুপুর পর্যন্ত আমান ২০ বার বমি করেছে। কিছুক্ষণ পরপর তার জ্ঞান থাকছে না। একমাত্র সন্তানের ওপর এ হামলার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তিনি।

ডা. অধ্যাপক রেজাউল হক জানান, আমানের বমি করার লক্ষণ ভালো নয়। পিস্তলের বাঁটে তার মাথা থেঁতলে গেছে। ফলে রক্ত জমাট বেঁধেছে। ব্রেনে মারাত্মক আঘাত লাগায় মাঝেমধ্যে তার জ্ঞান থাকছে না। অনেক সময় ভুল বকছে। সিটিস্ক্যান রিপোর্ট হাতে পেলে তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।

স্থানীয় লোকজন জানান, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে পেঁয়াজহাটের রাস্তা দিয়ে দলবল নিয়ে যাচ্ছিলেন মেয়র কালাম। এ সময় একটি ওষুধের দোকানে বসে থাকা আমান ও শাহীসহ কয়েকজন নেতাকর্মীকে দেখতে পেয়ে মেয়র কালাম উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এমপি এনামুলের সমর্থক বলে তাদের গালাগাল করেন পৌরসভা আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মেয়র কালাম। একপর্যায়ে মেয়র কালাম তার লাইসেন্স করা পিস্তলের বাঁট দিয়ে আমানের মাথার পেছনে আঘাত করেন। এ সময় মেয়র বাহিনীর প্রধান আসাদুলসহ কয়েকজন শাহীকে মারধর করে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা আমানকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে মেয়র আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাড়িতে যাওয়ার পথে একটি ওষুধের দোকানে কয়েকজন সর্বহারা ক্যাডারকে দেখতে পাই। এ সময় আমার সমর্থকরা দোকানের দিকে এগিয়ে গেলে কয়েকজন পালিয়ে যায়। এ সময় ধস্তাধস্তির কারণে একজন পড়ে গিয়ে সামান্য আহত হয়। পিস্তলের বাঁট দিয়ে আঘাত করার ঘটনা ঠিক নয়। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে পৌর সদরে আলোচনা সভার আয়োজন করে বাগমারা উপজেলা জাতীয় শ্রমিক লীগ। অনুষ্ঠানে মেয়র কালামকে আমন্ত্রণ না জানানোয় তার সমর্থকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করে। এদিকে এনামুল হকের বিরুদ্ধে সেপ্টেম্বরে সংবাদ সম্মেলন করেন বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকিরুল ইসলাম সান্টু মেয়র কালাম। এ ঘটনায় অক্টোবরে ৯ নেতার পদ সাময়িকভাবে স্থগিত করে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন কালাম।

মেয়র কালামের বিরুদ্ধে ইউপি নির্বাচনের সময় প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেনকে প্রাণনাশের হুমকি, দলীয় কর্মীদের মারধরসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রীকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে এক যুবলীগ নেতার সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মেয়র কালামের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।

(জাস্ট নিউজ/ওটি/১০২০ঘ.)