বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ৯০ প্রার্থী

চতুর্থ ধাপে আজ ১০৭ উপজেলায় ভোটগ্রহণ

চতুর্থ ধাপে আজ ১০৭ উপজেলায় ভোটগ্রহণ

পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে আগামীকাল রবিবার ১০৭ উপজেলায় অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ। ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে ৯০ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৪০ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৩ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৭ জন প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়াও ১৫টি উপজেলায় সব প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

গত ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নজিরবিহীন কারচুপির অভিযোগ তুলে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো এবারের উপজেলা নির্বাচন বর্জন করেছে। ফলে নির্বাচন অনেকটা উৎসবের আমেজ হারিয়েছে। গত তিন পর্বে ভোটার উপস্থিতি আশানুরূপ ছিল না। আগের পর্বগুলোতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বিভিন্ন এলাকায় বিদ্রোহী হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় এবারের উপজেলা নির্বাচনে কিছুটা উত্তাপ ছড়াচ্ছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, রবিবার পাঁচ বিভাগের ১৬ জেলার ১০৭টি উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, এপিবিএন বিজিবির দেড় লাখ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ৫০টি উপজেলা ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন করা হবে।

এ ব্যাপারে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে কমিশন। চতুর্থ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ৫০টি উপজেলায় অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া সহিংসা মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হওয়া তিন ওসি, একজন পুলিশ সুপার ও একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।’

নির্বাচন পরিচালনা শাখা জানায়, ১০৭টি উপজেলায় এক হাজার ১৪২ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৮৪টি উপজেলায় ২৯২ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০০ উপজেলায় ৪৮৭ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৯৬ উপজেলায় ৩৬৩ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এসব উপজেলায় মোট ভোটার দুই কোটির বেশি এবং কেন্দ্রসংখ্যা সাড়ে আট হাজার।

সাত সাংসদকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ
ইসি সূত্র জানায়, আচরণবিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগে সাতজন সংসদ সদস্যকে নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসি। তারা হলেন, টাঙ্গাইল-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হাছান ইমাম খান, টাঙ্গাইল-৫ আসনের মো. ছানোয়ার হোসেন, টাঙ্গাইল-৮ আসনের মো. জোয়াহেরুল ইসলাম, বাগেরহাট-৪ আসনের মো. মোজাম্মেল হোসেন, খুলনার-৬ আসনের মো. আক্তারুজ্জামান, ময়মনসিংহ-১১ আসনের কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ও যশোর-২ আসনের মো. নাসির উদ্দিন।

এছাড়া সহিংসতা রোধে ব্যর্থ হওয়ায় পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাম কবির, আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ তিন ভারপ্রাপ্ত কর্সকর্তাকে প্রত্যাহার করেছে ইসি।

ওসি তিনজন হলেন, পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানার ওসি এম আর শওকত আনোয়ার ইসলাম, বরগুনার আমতলী থানার ওসি আলাউদ্দিন মিলন এবং কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থানার ওসি মো. শাজাহান কবির।

ছয় উপজেলায় ইভিএম
চতুর্থ ধাপে ছয় উপজেলায় ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। উপজেলা ছয়টি উপজেলা হলো বাগেরহাট সদর (কেন্দ্রসংখ্যা ৯১), ফেনী সদর (কেন্দ্র সংখ্যা ১২৭), মুন্সীগঞ্জ সদর (কেন্দ্র সংখ্যা ১১৬), ময়মনসিংহ সদর (কেন্দ্র সংখ্যা ১০০) ও পটুয়াখালী সদর (কেন্দ্র সংখ্যা ৮৯)।

চতুর্থ ধাপে ১২২টি উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এছাড়া, আগের তিন ধাপে স্থগিত হওয়া ছয়টিসহ মোট ১২৮টি উপজেলায় চতুর্থ ধাপে নির্বাচনের কথা ছিল। এর মধ্যে খুলনার ডুমুরিয়া, ফেনীর ছাগলনাইয়া, ময়মনসিংহের ত্রিশাল, কুমিল্লার বরুড়া, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া এবং নোয়াখালীর কবির হাটের ইসি নির্বাচন স্থগিত করেছে। এছাড়া ১৫ উপজেলায় সব প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ভোট হচ্ছে না। ফলে চতুর্থ ধাপে নির্বাচন হচ্ছে ১০৭ উপজেলায়।

পঞ্চম উপজেলা নির্বাচন পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে প্রথম ধাপে ১০ মার্চ ৭৮ উপজেলায়, দ্বিতীয় ধাপে ১৮ মার্চ ১১৬ উপজেলায়, তৃতীয় ধাপে ১১৭ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার চতুর্থ ধাপে ১০৭ উপজেলায় এবং আগামী ১৮ জুন পঞ্চম ধাপের ২১ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

দেশে বর্তমানে ৪৯২টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। এর মধ্যে ৪৮০টিতে এবার ভোট হচ্ছে। বিভিন্ন সমস্যার কারণে ১২টি উপজেলায় এবছর ভোট হবে না। সর্বশেষ ২০১৪ সালের মার্চ- থেকে মে মাসে ছয় ধাপে এর অধিকাংশগুলোতে ভোট হয়েছিল। আইনে মেয়াদ শেষের পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট করার বাধ্যবাধকতা থাকায় এই নির্বাচন করতে হচ্ছে।

১৯৮৫ সালে উপজেলা পরিষদ চালু হওয়ার পর ১৯৯০ ও ২০০৯ সালে একদিনেই ভোট হয়েছিল। ২০১৪ সালে ছয় ধাপে ভোট করেছিল তৎকালীন ইসি।