ঢাকা, ২১ জানুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : গত ১৬ জানুয়ারি চট্টগ্রামে খুন হয় স্কুলছাত্র আদনান। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে স্কুলপর্যায়ে ছাত্ররাজনীতির প্রথম বলি হলো নবম শ্রেণির এ শিক্ষার্থী। আদনানের স্কুলের নাম চট্টগ্রাম সরকারি কলেজিয়েট উচ্চবিদ্যালয়। স্কুল ভবনের দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে ছাত্রদের নানা গ্রুপের নাম। হাতের লেখায় এমন একটি গ্রুপের নাম চোখে পড়ে- ‘Gunners’, অর্থাৎ ‘গোলন্দাজ’!
বই-খাতা রেখে ‘গোলন্দাজ’ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে স্কুলের শিশু-কিশোররা! সেই স্বপ্নকে ইতোমধ্যে বাস্তব রূপও দিতে শুরু করেছে। বনিবনা না হলেই বন্দুক ঠেকিয়ে অথবা ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হচ্ছে। আদনানও এমন একদল কিশোর গোলন্দাজের শিকারে পরিণত হয়েছে।
চট্টগ্রামে এভাবেই স্কুল রাজনীতির ভয়াবহ শিকার হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। তৈরি হচ্ছে নানা গ্রুপ, উপগ্রুপ। আর এসব গ্রুপে জোর করে জড়ানো হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
যমুনা টেলিভিশনকে এমনটিই জানালেন স্থানীয় কয়েকটি স্কুলের খুদে শিক্ষার্থীরা। স্কুলে রাজনীতি ও গ্রুপিং ছড়ানোর পেছনে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কিছু নেতা। নানা স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবহার করছেন শিশু-কিশোরদের।
একজন শিক্ষার্থী তার ভাষায় বলছিল, এলাকার বড় ভাইরা পাওয়ারটা দেয়। বড় ভাইদের কাছ থেকে পাওয়ার আসে।
আরেকজন জানাল, ওরা আমাদের বলে আমার গ্রুপে জয়েন করবা। তাহলে তোমরা স্বস্তিতে থাকবা, কেউ তোমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।
প্রথমে পাড়ার কিছু বেকার কিশোরকে অপহরণ, ছিনতাই, মাদক পাচারসহ নানা অপরাধে কাজে লাগানো হয়। তারপর দলে ভেড়ানো শুরু হয় আশপাশের স্কুল-কলেজের ছাত্রদের। একই স্কুলে গড়ে উঠছে বহু গ্রুপ। যাদের একটি অপরটিকে আধিপত্য বিস্তারে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে।
এ পরিস্থিতিতে সন্তানদের ভয়াবহ পরিণতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। তাদের দাবি, যে করেই হোক স্কুল শিশুদের নিয়ে এমন রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
আদনান ইসফার হত্যায় যে পাঁচ কিশোরকে আটক করা হয়েছে তারা পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের দাবি, স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা তাদের অস্ত্র সরবরাহ করেছেন।
চট্টগ্রামের প্রথম সারির দুটি কলেজ চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ। এখানকার ছাত্রদেরও দাবি, বহিরাগত সন্ত্রাসীরাই এ দুটি কলেজের ছাত্র রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এতে প্রতিনিয়ত নানা হুমকির মুখে পড়ছে ছাত্ররা।
গত বছরের ২১ নভেম্বর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটির সারা দেশের ইউনিটগুলোকে স্থানীয় স্কুল কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়। আরও আগে থেকে ছাত্রলীগের স্কুল কমিটি গঠনের কাজ চললেও এই নির্দেশনা জারির পর তা আরও বেগ পেয়েছে। এতে ছাত্রলীগের নাম করে স্থানীয় অনেক অপরাধীচক্র কিশোরদের নিজেদের গ্রুপে ভেড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে।
সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, কিশোর পর্যায়ে ‘হিরোইজম’ চর্চা করতে গিয়েই বিপথে যাচ্ছে তরুণরা। এ সময়টিতে পারিবারিক বন্ধনের অভাব, স্কুলের পরিবেশ ও প্রযুক্তির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের কারণে কিশোররা অপরাধে জড়াচ্ছে।
চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ আল মামুন বলেন, স্কুলপর্যায়ে রাজনীতিকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা উচিত। সূত্র: যমুনা টিভি
(জাস্ট নিউজ/একে/১৮৫৯ঘ.)