ইউনূস প্রশ্নে বাংলাদেশকে হিলারির চাপ দেওয়ার প্রমাণ পায়নি যুক্তরাষ্ট্র

ইউনূস প্রশ্নে বাংলাদেশকে হিলারির চাপ দেওয়ার প্রমাণ পায়নি যুক্তরাষ্ট্র

ঢাকা, ২১ জানুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : উইকিলিকসসহ আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংবাদমাধ্যম গত বছর থেকে অভিযোগ করে আসছে, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের এক তদন্ত কার্যক্রম বন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে চাপ দিয়েছিলেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। স্বয়ং সজীব ওয়াজেদও একই অভিযোগ করে আসছেন বহুদিন ধরে। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক অভ্যন্তরীণ তদন্তে হিলারির বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি।

২০১৭ সালের এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে প্রকাশিত ডেইলি কলারের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ড. ইউনূস পরিচালিত গ্রামীণ ব্যাংকে নানা আর্থিক অনিয়মের ঘটনায় ২০১২ সালের গোড়ার দিকে তদন্ত শুরু করে বাংলাদেশ সরকারের একটি কমিশন। ওই তদন্ত বন্ধ করার উদ্দেশ্যে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর থেকে জয়ের ওপর চাপ দেওয়া হয়। সজীব ওয়াজেদ জয় ২০১৩ সালেই বলেছিলেন, ১৭ বছর ধরে বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকালে কখনও তার কোনও সমস্যা হয়নি। তবে ড. ইউনূসের ব্যাপারে তদন্তের ঘটনায় মার্কিন কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগে তদন্ত শুরুর হুমকি দেন। ‘তারা দফায় দফায় আমাকে বলেছেন, ইউনূসের অনেক প্রভাবশালী বন্ধু আছে। আর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লিনটনের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়টিও গোপন কোনও ব্যাপার নয়।’ বলেছিলেন সজীব ওয়াজেদ জয়। মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রকে উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সারকা এক প্রতিবেদনে দাবি করে, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অপসারণ না করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চাপ দিয়েছিলেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। উইকিলিকস-এর ফাঁস করা নথিতেও একই অভিযোগ পাওয়া যায়।

বিভিন্ন প্রতিবেদনে অভিযোগ ওঠার পর শীর্ষস্থানীয় একজন মার্কিন সিনেটর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনকে একটি চিঠি লেখেন। ওই চিঠিতে বলা হয়, হিলারি ক্লিনটন পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে তদন্ত তুলে নিতে বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দিয়েছিলেন। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্রের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে বাংলা ট্রিবিউনের। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর তার নথি পর্যালোচনা সম্পন্ন করেছে। এর ভিত্তিতে কংগ্রেশনাল কমিটিকে জানানো হয়েছে যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে তদন্ত তুলে নিতে পররাষ্ট্র দফতর বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দিয়েছিল-এমন অভিযোগের পক্ষে কোনও নথি পাওয়া যায়নি। এ ধরনের যোগাযোগ বা কর্মকাণ্ড কোনও নথি নেই।

সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও তার কর্মীরা যুক্তরাষ্ট্রের অফিসিয়াল চ্যানেল ব্যবহার করে ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ এবং ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের দাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন-এমন অভিযোগের ব্যাপারে তথ্য চেয়েছিলেন সিনেটর গ্রাসলে। সিনেটর গ্রাসলেকেও একইভাবে ‘প্রমাণ না পাওয়া’র কথা জানানো হয়েছে বলেমনে করা হচ্ছে। গত বছরের জুনে পররাষ্ট্র দফতরের কাছে তিনি এ সম্পর্কিত তথ্য চান।

নিজের লেখা চিঠিতে অভিযোগকারী এই সিনেটর বলেন, ‘সাংবাদিকরা এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কর বিভাগের এক নিরীক্ষায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদকে হুমকি দিয়েছিল। তাকে বলা হয়েছিল, তিনি যদি তার মাকে এই তদন্ত বন্ধ করানোর ব্যাপারে উদ্যোগী না হন তাহলে তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ এনে তদন্ত শুরু করা হবে।’

সিনেটর গ্রাসলে বলেন, ‘২০১৭ সালের ১১ মে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চিত করেছেন যে, ২০১১ সালের মার্চে হিলারির অফিস থেকে ফোন করে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পুনর্বহাল করতে বলেন। এটা ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে অনুদানের কারণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি প্রমাণ করে।’

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের কাছে এ ধরনের বেশকিছু প্রশ্ন তোলেন সিনেটর গ্রাসলে। তিনি জানতে চান, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনও কর্মী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের তদন্তের ব্যাপারে সজীব ওয়াজেদকে কর ফাঁকির অভিযোগসহ ফল বা পরিণতি বরণের কথা বলেছিলেন কিনা? বিষয়টি ইন্সপেক্টর জেনারেল বা বিচার বিভাগের পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়েছিল কিনা? যদি না হয়ে থাকে, তাহলে কেন নয়?’ সিনেটর গ্রাসলে বলেন, সজীব ওয়াজেদের বক্তব্য অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে পররাষ্ট্র দফতরের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার দফায় দফায় কথাবার্তা হয়েছে।

এই সিনেটর বলেন, ‘সজীব ওয়াজেদ বলেছেন প্রতিটি বৈঠকেই অনিবার্যভাবে ইউনূসের তদন্তের বিষয়টি উঠে আসতো। এই তদন্ত বন্ধে তাকে চাপ দেওয়া হতো।’ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অবশ্য তাদের এই তদন্তের ব্যাপারে বিস্তারিত কোনও তথ্য জানা যায়নি। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

 

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/১৯৩০ঘ.)