বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বন্ধের নির্দেশ ভিসির

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বন্ধের নির্দেশ ভিসির

 

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন দমাতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন ভিসি ড. এসএম ইমামুল হক। একইসাথে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছেন।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজের অর্থ বরাদ্দ, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোনালী ব্যাংক শাখা থেকে দেয়া হয়। ভিসির এমন নির্দেশের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এখন আর ব্যাংক থেকে বেতন-ভাতা তুলতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. এসএম ইমামুল হক স্বাক্ষরিত গত ১৬ এপ্রিলের এক নোটিশে ব্যাংকের দুটি অ্যাকাউন্ট থেকে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কোনো ধরনের অর্থ না দেয়ার জন্য ব্যাংকের ব্যবস্থাপককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে- আপনাকে (ব্যবস্থাপক) জানাচ্ছি যে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব নম্বর (০৩৩৮১১০০০০০০১) ও (০৩৩৮১১০০০০০০২) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত যাবতীয় অর্থ প্রদান (ইতোপূর্বে প্রদত্ত সব চেকসমূহ) স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করছি।

এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মিয়া বলেন, ভিসির সিদ্ধান্তটি অমানবিক। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্দোলন দমাতে ভিসি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে করে ভিসির পদত্যাগ দাবির আন্দোলন আরো বেগবান হবে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. এসএম ইমামুল হক এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। এ বিষয়ে জানতে ভিসির মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে একই ফোন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের লিয়াজোঁ অফিসের কর্মচারী পরিচয়ে এক ব্যক্তি সাংবাদিকদের বলেন, ভিসি স্যারের কাছে কোনো কিছু জানার থাকলে আমাকে বলতে পারেন। তার কাছে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিতের বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংক বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ব্যবস্থাপক দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, গত মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. এসএম ইমামুল হক একটি ই-মেইল পাঠিয়েছেন। সেখানে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দুটি স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত যাবতীয় অর্থ প্রদান স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভিসির নির্দেশনা মতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধ রাখা হয়েছে।

এর আগে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. এসএম ইমামুল হকের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের সাথে আন্দোলনে যোগ দেন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতিতে স্বচ্ছতাসহ আট দফা দাবিতে গত চারদিন (২ ঘণ্টা করে) অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

বৃহস্পতিবার থেকে তারা ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা। মানববন্ধন থেকে একযোগে ভিসির পদত্যাগ দাবি করা হয়।

মানববন্ধনে শিক্ষকরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কর্মচারীরা এখন এক দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। তা হলো ভিসির পদত্যাগ। তিনি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে। পদত্যাগ না করলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানানোর প্রতিবাদ করায় শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে আখ্যায়িত করেন ভিসি। তার ওই বক্তব্যের পর ২৮ মার্চ থেকে ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। একইদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্লাস, পরীক্ষা ও আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করে।

শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করে ওইদিনই তার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। এরপর ভিসি ২৯ মার্চ তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিলেও তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি শিক্ষার্থীরা। তারা ভিসির পদত্যাগের দাবিতে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মশাল মিছিল, রক্ত দিয়ে দেয়াল লিখন, ভিসির কুশপুতুল পোড়ানো, প্রতীকী অনশন, কালো কাপড় মুখে বেঁধে, কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে বিক্ষোভ এমনকি মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন।

তাদের চলমান আন্দোলনের মুখে বাধ্য হয়ে ভিসি ইমামুল হক ইতোমধ্যে ১৫ দিনের ছুটির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম বলেন, এই ভিসির ক্যাম্পাসে ফিরে আসার আর কোনো যৌক্তিকতা নেই। তাকে ঘটনার পর থেকেই অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। তাকে ১৫ দিনের ছুটিতে নয়, হয় তার কর্ম মেয়াদকাল ২৮ মে পর্যন্ত ছুটি নতুবা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

এমজে/