নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা: চেপে ধরেন মনি, গায়ে কেরোসিন ঢালেন জাবেদ

নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা: চেপে ধরেন মনি, গায়ে কেরোসিন ঢালেন জাবেদ

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসামি জাবেদ হোসেন বলেছেন, তিনি নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢালেন। এরপর আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

আরেক আসামি কামরুন নাহার মনি বলেছেন, নুসরাতকে ছাদে জোর করে শোয়ানোর পর তাকে চেপে ধরেছিলেন তিনি। জাবেদ পরিচয় গোপন করার জন্য বোরকা পরে ছিলেন।

জাবেদ ও মনিকে শনিবার ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শরাফ উদ্দিন আহমেদের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সেখানেই এসব তথ্য জানান তারা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, কামরুন নাহার মনিকে ১৬ এপ্রিল গ্রেফতার করে পরদিন পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। তিনি হত্যার ঘটনায় অংশ নেয়া পুরুষদের জন্য তিনটি বোরকা সরবরাহ করেন।

অপরদিকে জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদকে ১৩ এপ্রিল গ্রেফতার করে ওই দিনই আদালতের মাধ্যমে সাত দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। শুক্রবার আবার আদালতে হাজির করে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয় তাকে।

জাবেদ হোসেন ও কামরুন নাহার মনি দুজনই ওই মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী এবং নুসরাতের সহপাঠী।

এর আগে নুসরাত হত্যায় পাঁচজন আসামি নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, আবদুর রহিম শরিফ, আবদুল কাদের ও উম্মে সুলতানা পপি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

তারা পাঁচজনই নুসরাত হত্যাকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে তথ্য দিয়েছেন।

আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর আগে যারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন, তাদের আদালতে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, কারাগার থেকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার পরামর্শ ও নির্দেশেই নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। অধ্যক্ষ সিরাজ গ্রেফতার হওয়ার পর আসামিরা একাধিকবার তার সঙ্গে ফেনী কারাগারে দেখা করেন।

অধ্যক্ষের পরামর্শ অনুযায়ীই ৪ এপ্রিল সকাল ১০টায় ‘অধ্যক্ষ সাহেব মুক্তি পরিষদের’ সভা হয় মাদ্রাসায়। একই দিন রাত ১০টার দিকে আবারও সভা হয় মাদ্রাসার শিক্ষক কাদেরের শয়ন কক্ষে।

ওই সভায় জাবেদসহ ১২ জন উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই হত্যার মূল পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা মতো ৬ এপ্রিল পরীক্ষার আগে কাদের, নুর উদ্দিন, রানা, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ ও ইমরানসহ কয়েকজন মাদ্রাসার গেটে পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন।

নুসরাতকে সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে ডেকে নেয়া ও ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়ার ঘটনায় পাঁচজন অংশ নেন।

তাদের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও দুজন নারী ছিলেন। শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম, জোবায়ের আহমেদ, জাবেদ হোসেনসহ তিনজন পুরুষ বোরকা পরা ছিল। নারীদের মধ্যে উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ও কামরুন্নাহার ওরফে মনি ছিলেন।

মাদ্রাসার গেটের বাইরে মাদ্রাসার শিক্ষক আফছার পাহারায় ছিলেন। আর সাইক্লোন শেল্টারের নিচে মো. শামীম, মহিউদ্দিন শাকিল দুজন পাহারায় ছিলেন।

নুসরাত হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত আট আসামিসহ এখন পর্যন্ত মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এমআই