স্মার্টকার্ড মুদ্রণ আবার বন্ধ হয়ে গেছে

স্মার্টকার্ড মুদ্রণ আবার বন্ধ হয়ে গেছে

উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্টকার্ড) মুদ্রণ আবার বন্ধ হয়ে গেছে। ফ্রান্সের কোম্পানি অবার্থুরের চলে যাওয়ার পরে দেশি একটি আইটি প্রতিষ্ঠানের টেকনিক্যাল সাপোর্টে মুদ্রণের কাজ চলছিল। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের (এনআইডি) লেনদেন জটিলতায় স্মার্টকার্ড মুদ্রণ তখন বন্ধ হয়ে যায়। পরে চালু হলেও সম্প্রতি আবার বন্ধ হয়ে গেছে।

আমদানিকৃত দশটি মেশিনের ৯টি প্রায় ছয় মাস ধরেই বন্ধ। ভিআইপি ও জরুরি মুদ্রণের জন্য একটি মেশিন চালু থাকলেও প্রায় দেড় মাস ধরে সেটিও বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, এটা ডিটেইল আপডেট আমি জানি না। আমাকে ইনফর্ম করা হয়নি।

এই প্রকল্পের পিডি সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। প্রকল্পের পিডি ও পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রায় ছয় মাস ধরে নয়টি মেশিনে প্রিন্টিং বন্ধ রাখা হয়। একটি মেশিন চলছিল, সেটিও প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এই মেশিন চলতে থাকলে তা পরিষ্কার করতে হয়। প্রতিনিয়ত পরিষ্কার না করলে একটা সময় বন্ধ হয়ে যায়।

মেশিনগুলো পরিষ্কার ও তদারকির জন্য এনআইডি কিংবা ইসির দক্ষ জনবল নেই। জানা গেছে, স্মার্টকার্ড মুদ্রণে ইসির দক্ষ জনবল নেই। বিদেশি কোম্পানির বিদায়ের পরও মেশিন পরিচালনায় জনবল তৈরি করা হয়নি। জাতীয় তথ্যভা-ারের মতো স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় আউটসোর্সিংয়ের নিয়োগ করা কর্মীদের মাধ্যমে।

এমনকি আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পের যেসব টেকনিক্যাল এক্সপার্ট রয়েছে, তাদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। ফলে মেশিন পরিচালনাসহ বাইরের লোকের ওপরই সব সময় নির্ভর করে চলতে হয়। সম্প্রতি সেটি না করার ফলে স্মার্টকার্ড মুদ্রণ বন্ধ রয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও ইউএনডিপির সহায়তায় আইডিইএ প্রকল্পের আওতায় ২০১১ সালের জুলাইয়ে ৯ কোটি নাগরিককে স্মার্টকার্ড দেওয়ার চুক্তি হয়।

এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে স্মার্টকার্ড উৎপাদন-বিতরণে ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান অবার্থুর টেকনোলজিসের সঙ্গে চুক্তি করে ইসি। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের জুনে। পরে মেয়াদ ১৮ মাস বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগেই ফ্রান্সের কোম্পানিটির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ইসি।

এর পর টাইগার আইটি নামের দেশীয় প্রতিষ্ঠানটি স্মার্টকার্ড মুদ্রণের সহায়তা দিয়ে আসছিল। ২০১৮ সালের প্রথমার্ধে কোম্পানিটির সঙ্গে আর্থিক লেনদেনে জটিলতা দেখা দিলে তারা কাজ বন্ধ করে দেয়। সে সময় স্মার্টকার্ড মুদ্রণ বন্ধ হয়ে যায়। দেশের বর্তমান ভোটারসংখ্যা ১০ কোটি ৪২ লাখ। এর মধ্যে ৯ কোটি ভোটারকে ২০১৭ সালের মধ্যে স্মার্টকার্ড প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয় ইসি। বারবার সেটি পিছিয়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, চুক্তি বাতিলের আগে ফ্রান্সের কোম্পিানিটির কাছ থেকে সাড়ে ছয় কোটি ব্লাংক স্মার্টকার্ড পেয়েছে ইসি। এর মধ্যে মাত্র চার কোটি কার্ড প্রিন্ট করা হয়েছে। ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত জেলার সদর উপজেলায় কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। কিছু উপজেলায় স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হলেও অধিকাংশ উপজেলায় স্মার্টকার্ড পৌঁছেনি।

সবার হাতে কবে নাগাদ স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেওয়া হবে, সে বিষয়ে এখন কোনো তারিখ না জানালেও তা ২০২০ সাল গিয়ে ঠেকছে বলে জানা গেছে। তবে ইসির নিজস্ব জনবল তৈরি না হলে তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। ইসি কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে ৯ কোটি ভোটারকে স্মার্টকার্ড দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও ইসির কাছে ব্লাংক কার্ডসহ মোট কার্ড রয়েছে সাড়ে ছয় কোটি।

বাকি আড়াই কোটি দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেওয়ার আলোচনা চলছে। এ ছাড়া বাকি তরুণ ভোটারদের (প্রায় দেড় কোটি) স্মার্টকার্ড দেওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ফ্রান্সের কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি বাতিলের পরে এ প্রকল্পে আর অর্থায়নে আগ্রহ দেখায়নি বিশ্বব্যাংক ও ইউএনডিপি।

এর পর প্রকল্পের ব্যয় না বাড়িয়ে এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবে জিওবি অর্থায়স্ত্রে প্রকল্প বাস্তবায়নের নিশ্চয়তাসাপেক্ষে সকারের অর্থ বিভাগের অনাপত্তি দেয়। পরে আরো ছয় মাস বৃদ্ধি করা হয়। কয়েক দফা বাড়ানোর পরও স্মার্টকার্ডে বিতরণের জন্য আট বছর আগে গৃহীত আইডিইএ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী মাসে, অর্থাৎ জুনে। সব নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দিতে তাই নতুন করে ভাবতে হচ্ছে ইসিকে। সুত্র: দৈনিক আমাদের সময়।

এমআই