স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা আইন নিয়ে টিআইবির উদ্বেগ

স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা আইন নিয়ে টিআইবির উদ্বেগ

প্রস্তাবিত স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৯ এর খসড়ায় নিবর্তনমূলক, অস্পষ্ট ও অনেকক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক ধারা সন্নিবিষ্ট হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এ ধরণের ধারাগুলো পরিবর্তন, পরিমার্জন ও বাতিলের দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে খসড়াটি ঢেলে সাজিয়ে অনুমোদনের পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

আজ সোমবার এক বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে আমরা জানতে পেরেছি যে, সম্প্রতি দেশি-বিদেশী বিভিন্ন বেসরকারি সেচ্ছাসেবী ও সমাজকল্যাণমূলক সংস্থার নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় একটি নতুন আইনের খসড়া প্রস্তুত করেছে।

খসড়া আইনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এর বেশ কয়েকটি ধারা-উপধারা এসব সংস্থাসমূহের কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাপক বাধা তৈরি করবে। একইসাথে আইনের কয়েকটি ধারা-উপধারা ও শব্দের ব্যাখ্যায় অস্পষ্টতা থাকায় আইনটি অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হবে। বিশেষ করে, আইনের উপধারা ১১(১ ও ২)-এ নিবন্ধিত সমস্ত সংস্থাকে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নতুন করে নিবন্ধন নবায়নের বিধান এবং যথাসময়ে নবায়নে ব্যর্থ হলে বা আবেদন প্রত্যাখাত হলে সংস্থাটির বিলুপ্তি ঘোষণার বিধান; উপধারা ১৭(১, ২, ৩) অনুযায়ী কোনো সংস্থার ‘কারণ দর্শানো’ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সে সংস্থার নিবন্ধন বাতিল এবং নিবন্ধন বাতিলের তারিখ থেকে সংস্থাটি বিলুপ্তির বিধান; এসব প্রতিষ্ঠানের জনকল্যাণমূখী উদ্যোগের অযাচিত অবসান এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের উপকারভোগী ও কর্মীদের অধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি করবে, যা কোনভাবেই কাম্য নয়।”

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেন, “খসড়া আইনের ধারা ৩-এ উল্লেখ করা হয়েছে যে, আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর যা কিছুই থাকুক না কেন এই আইনের বিধানাবলী প্রাধান্য পাবে। এ বিধানের মাধ্যমে সোসাইটিস রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট ১৮৬০, ট্রাস্ট অ্যাক্ট ১৮৮২ এবং ফরেন ডোনেশন ভলান্টারি রেগুলেশন অ্যাক্ট ২০১৬-এর অধীনে নিবন্ধিত স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত এ আইন প্রযোজ্য হবে কিনা সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয় নি। আবার উপধারা ৪(১)-অনুযায়ী এই আইনের বিধানাবলী অনুসরণ ব্যতীত কোনো সংস্থা প্রতিষ্ঠা বা তা অব্যাহত রাখা যাবে না। কিন্তু বিদেশী সহায়তায় পরিচালিত এনজিওসমূহ এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে নিবন্ধিত হলেও তাদেরকেও এই আইনের আওতায় নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা তৈরি করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এছাড়া খসড়া আইনে বিদেশী সহায়তায় পরিচালিত এনজিওসমূহের ক্ষেত্রে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর পাশাপাশি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা বহাল রাখা হয়েছে। একই প্রতিষ্ঠানের উপর দুটি সরকারি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণের এই ব্যবস্থা দ্বৈত শাসন ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বৃদ্ধি করবে, যাতে সংশ্লিষ্ট এনজিওগুলোর কার্যক্রম স্থবির হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।”

নতুন আইনটি চূড়ান্ত করার পূর্বে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহসহ সকল অংশীজনের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে আইনটির নিবর্তনমূলক, অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও অস্পষ্ট ধারাসমূহ বাতিল করে খসড়াটি নতুন করে ঢেলে সাজাবার আহ্বান জানান ড. ইফতেখারুজ্জামান।

এমজে/