নুসরাত হত্যার চার্জশিটে ওসির নাম নেই কেন, প্রশ্ন বাদীপক্ষের

নুসরাত হত্যার চার্জশিটে ওসির নাম নেই কেন, প্রশ্ন বাদীপক্ষের

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার চার্জশিটে সোনাগাজী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের নাম না থাকায় প্রশ্ন তুলেছেন বাদীপক্ষ।

বুধবার দুপুরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফেনীর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পরিদর্শক মো. শাহ আলম মোট ১৬ জনকে আসামি করে এই চার্জশিট দাখিল করেন।

নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে তিন পুলিশ সদস্যের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ মেলে। আর ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালানোর অভিযোগে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাকে এ মামলায় আসামি করা হয়নি।

এবারের আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন নুসরাত। গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসাকেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে যান তিনি। সেখানে কৌশলে তাকে ছাদে ডেকে নিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতহানির মামলা তুলে না নেওয়ায় তাকে হত্যা করা হয় বলে পরিবারের অভিযোগ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক শাহ আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে এ মামলায় হুকুমদাতা হিসেবে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। আসামির তালিকায় আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে নির্বাচিত পৌর কাউন্সিলর ও মাদ্রাসার প্রভাষকও রয়েছে।’

আগামীকাল বৃহস্পতিবার চার্জশিটের ওপর শুনানি হবে জানিয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু বলেন, ‘ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন প্রথম থেকে হত্যার ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে প্রচারণা চালান। কিন্তু তাকে আসামি করা হয়নি।’

তিনি আরো বলেন, ‘অভিযোগপত্রের শুনানির দিন আইনজীবীরা পিবিআই’র কাছে জানতে চাইবেন কেন তাকে আসামি করা হয়নি। প্রয়োজনে মামলার বাদী নুসরাতের ভাই নোমানের সঙ্গে আলাপ করে অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি জানানো হবে।’

পিবিআই চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকাবাল বলেন, ‘পিবিআই মামলা তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার ৫০ দিনের মধ্যে ৩৩ কার্যদিবসে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রটি আদালতে দাখিল করেছে। অভিযোগপত্রে আগুন দেওয়ার ঘটনায় সরাসরি জড়িত পাঁচজনসহ মোট ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহসভাপতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমীন ও সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ আলম ওই হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নে আর্থিক সহযোগিতাসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।’

মামলার বাদী নুসরাতে বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, ‘পিবিআই আদালতে যে অভিযোগপত্রটি দিয়েছে তার বিস্তারিত আমার এই মুহূর্তে জানা নেই। আমি দেখব অভিযোগপত্রে কারা আসামি হয়েছেন। তবে আমি মনে করি আমার বোনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে এ মামলায় অভিযোগপত্রে আসামি করা উচিত ছিল। আমি আমার আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শকরে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

চার্জশিটে নাম আসা ১৬ আসামি হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ-উদ-দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ আলম কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ (১৯), হাফেজ আবদুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা (১৯), আবদুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), মোহাম্মদ শামীম (২০), রুহুল আমিন (৫৫) ও মহিউদ্দিন শাকিল (২০)।

এর আগে এ মামলায় এজাহারভুক্ত আট জনসহ ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। তাদের মধ্যে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ ১২ জন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।