খালেদা জিয়ার জীবন ও নিরাপত্তা নিয়ে বিএনপির উদ্বেগ

খালেদা জিয়ার জীবন ও নিরাপত্তা নিয়ে বিএনপির উদ্বেগ

বিএসএমএমইউতে বোমাসদৃশ বস্তু উদ্ধারের ঘটনায় সেখানে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জীবন ও নিরাপত্তা নিয়ে দলের পক্ষ থেকে আবারো উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আবারও বোমা উদ্ধারের ওই রহস্যজনক ঘটনায় খালেদা জিয়ার সার্বিক নিরাপত্তা ও সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি। এই মুহূর্তে তার মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।’

শুক্রবার (৭ জুন) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে ফিনল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলতে চাই, যে দেশে মধ্যরাতে নির্বাচন হয়, তার আগে ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন ও ১৫৩টি আসনে ক্ষমতাসীনরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়; তাহলে কি তাতে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়?’ 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার (৬ জুন) ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় কমিটির সংবর্ধনায় বলেন, ‘বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট বিদেশে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ এগুলোর বিরুদ্ধে সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উপযুক্ত জবাব দেওয়ার জন্য বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে এ প্রশ্ন তুললেন রিজভী।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘এ ধরনের অপকর্মকে কীভাবে আপনি দেশ-বিদেশের মানুষের চোখ থেকে আড়াল করতে পারবেন? সবাই জানেন, ক্ষমতায় মোহাবিষ্ট প্রধানমন্ত্রী কীভাবে বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচনকে নিরুদ্দেশ করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছেন। গণতন্ত্রের শাশ্বত বাণী মত-পথ ও আদর্শের ভিন্নতার মধ্যে ঐক্যের মিলিত সুরকে তিনি হিংসা-প্রতিহিংসার ছোবলে ক্ষতবিক্ষত করেছেন। দেশকে চিরস্থায়ী বিভেদ-বিভাজনের সর্বনাশা নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। একটি ভয়ঙ্কর উদাহরণ—প্রধানমন্ত্রী, আপনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়ার কারণে দেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ খালেদা জিয়াকে বন্দি করেছেন। তাকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করে দেশব্যাপী গুম-খুন-ক্রসফায়ারের মতো মনুষ্যত্বহীন প্রাণবিনাশী কর্মকাণ্ডের সংস্কৃতি চালু করে মানবতার খোলা বাতাস বন্ধ করে দিয়েছেন।’ তিনি প্রশ্ন করেন, ‘এরপরও কি এগুলোকে আপনি অপপ্রচার বলবেন?’

বিএনপির এই নেতা বিগত কয়েক বছরের নানা ঘটনা উল্লেখ করেন সংবাদ সম্মেলনে। তিনি ‘বিডিআর বিদ্রোহ, সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনি হত্যা; ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু ও চৌধুরী আলমসহ অসংখ্য বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী গুম; জিয়া বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন, খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ, শেয়ারবাজার লুট, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভসহ সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুট, সীমান্তে ফেলানী হত্যা, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি, রানা প্লাজায় রেশমা উদ্ধারের নাটক, ব্লগার হত্যাকাণ্ড, সুরঞ্জিতের কালো বিড়াল, পদ্মা সেতু দুর্নীতি, নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুন; নাটোরের বিএনপির উপজেলা চেয়ারম্যান ও নরসিংদীর নিজ দলীয় পৌর মেয়র খুন; বিএনপি’র স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন গুম ও ভারতে ফেলে আসা, জালিয়াতির রেকর্ড ভঙ্গ করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, বেগম খালেদা জিয়ার অফিসের সামনে বালির ট্রাক দিয়ে অবরুদ্ধ করা, কিশোর শ্রমিক বিশ্বজিৎ হত্যা, নকল ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের মহোৎসব, একের পর এক জঙ্গি হামলার নাটক, রামপালে বিতর্কিত বিদুৎকেন্দ্র নির্মাণ, জুমার নামাজে সরকারি খুতবা, গোয়েন্দাদের দিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা’ প্রভৃতি ঘটনা উল্লেখ করেন।

রিজভী বলেন, ‘উল্লিখিত ঘটনাগুলো এই সরকারের ব্যর্থতা ও আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ঘটেছে। খুন, জখম, ধর্ষণসহ নানা অপরাধের হোতারা বিচারের আওতামুক্ত থেকেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব ঘটনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেছে। এসব ঘটনার কোনোটি দেশ-বিদেশের মানুষের অজানা নেই।’

বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, ‘ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তির শেষ ছিল না। তাছাড়া দুর্ঘটনাও ঘটেছে অনেক। সড়ক মন্ত্রীর স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রার ঘোষণা যে সম্পূর্ণ বাকোয়াজ ছিল, সেটিরই প্রমাণ মিলেছে। ঈদের দিন দেশের বিভিন্ন জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। ঈদের পরের দিনেও জামালপুর ও মাদারীপুরে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির খবর প্রকাশিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ জনগণের সামনে বরাবরই মিথ্যা অঙ্গীকার করেছে।’