কর্মস্থলে ফেরা যাত্রীদের দুর্ভোগ

কর্মস্থলে ফেরা যাত্রীদের দুর্ভোগ

কমলাপুর রেল স্টেশনে ঢাকায় আসা যাত্রীদের ভিড় ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থল ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন অনেকেই। আগামীকাল রবিবার (৯ জুন) ঈদের পর প্রথম কর্মদিবস। এ দিন অফিসে যোগ দিতে আজ শনিবার ঢাকার পথে রওনা দিয়েছেন কর্মজীবীরা।

গণপরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে তারা যেমন দুর্ভোগে পড়েছেন, তেমনি বাস ও ট্রেন ছাড়তে দেরি করায় ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। পাশাপাশি পরিবহন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এবার ঈদের ছুটি শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শুক্র ও শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি।

শনিবার নগরীর টার্মিনালগুলোতে ঢাকামুখী মানুষের ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। প্রতিটি পরিবহনেই যাত্রী ভর্তি আসছে। তবে যাওয়ার সময়ও খালি যাচ্ছে না। যারা ঈদে অফিস করেছেন তারা এখন বাড়ি ফিরছেন। সকালে কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড়। কমলাপুরের প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে অনেক মানুষ। দুর্ভোগ ও ভোগান্তি সহ্য করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার পর কমলাপুর প্ল্যাটফর্মে যখন নামছেন তখনই খুশির হাসি দেখা গেছে সবার মুখে।

রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী নাবিলা আক্তার বলেন, ‘স্টেশনে ট্রেন দেরিতে এসেছে। ঢাকায় পৌঁছতেও দেরি হয়েছে। এরপরও নিরাপদে পৌঁছতে পেরেছি এ কারণে ভালো লাগছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমলাপুর রেল স্টেশনের ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘আজ (শনিবার) বিভিন্ন এলাকা থেকে ৬৯টি ট্রেন ঢাকায় ফিরবে এবং ৬৯টি ঢাকা ছেড়ে যাবে। প্রতিটি ট্রেনে যাত্রী ভর্তি রয়েছে। ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার সময়ও যাত্রী রয়েছে। যারা ঈদে যেতে পারেনি তারা এখন যাচ্ছে। এসব ট্রেনে কমপক্ষে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ ঢাকায় ফিরবে।’

তিনি জানান, ‘যাত্রী চাপের কারণে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা সুন্দরবন এক্সপ্রেস, রংপুর থেকে আসা রংপুর এক্সপ্রেস ও দিনাজপুর থেকে আসা একতা এক্সপ্রেস ঢাকায় পৌঁছতে কিছুটা দেরি হয়েছে। এসব ট্রেন কমলাপুর থেকে যতটা সম্ভব দ্রুত ছাড়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বেলা ১২টা নাগাদ ২২টি ট্রেন ঢাকা ছেড়েছে। একই সময় বিভিন্ন গন্তব্য থেকে ২১টির মতো ট্রেন ঢাকায় এসেছে।’

অপরদিকে সকালে সদরঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, টার্মিনালে আসা প্রতিটি লঞ্চের কেবিন থেকে শুরু করে ডেকের কোথাও ফাঁকা জায়গা নেই। বিপুল সংখ্যক যাত্রী নিয়েই লঞ্চগুলো ঢাকায় ফিরছে। চাকরিজীবী প্রতিটি যাত্রীর লক্ষ্য আগামীকাল রবিবার প্রথম কর্মদিবসে অফিসে হাজির হওয়া।

ঢাকা-মনপুরা-হাতিয়াগামী লঞ্চ এমভি ফারহান-৩ এর ম্যানেজার আব্দুর রহিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত দুইদিনের তুলনায় আজ যথেষ্ট যাত্রী রয়েছে। কোথাও কোথাও বৃষ্টি হয়েছে। মানুষ ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঢাকায় ফিরছে। তবে এখন পর্যন্ত গার্মেন্টস শ্রমিকদের চাপ কম।’

হাতিয়া থেকে এমভি ফারহান-৪ যোগে ঢাকায় আসা যাত্রী তানজিমুল ইসলাম বালেন, ‘মানুষের চাপে চেষ্টা করেও কেবিন পাইনি। ডেকে করেই আসতে হয়েছে। একটু কষ্ট হয়েছে। মালামাল নিয়ে যথেষ্ট দুর্ভোগে পড়েছি। সঙ্গে স্ত্রী ও সন্তান তো আছেই।’

অপরদিকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালেও যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। প্রতিটি বাসই যাত্রী নিয়ে ভর্তি অবস্থায় আসছে। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, স্টেশনগুলো থেকে যাত্রী ভরে গেলেই তারা ঢাকার উদেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর সড়কে যানজট কিছুটা কম।

নোয়াখালী থেকে আসা যাত্রী মো. হায়দার বলেন, ‘ভোর সাড়ে তিনটায় বাস ছাড়ার কথা, ছেড়েছে চারটায়। ভাড়াও অনেক বেশি। অন্য সময় ৩৮০ টাকা রাখলেও এখন নিচ্ছে ৫০০ টাকা। এরপরও বাস পুরো ভর্তি হওয়ার জন্য কাউন্টারগুলোতে দাঁড়িয়ে থাকে।’

ঢাকা-আলফাডাঙ্গা রুটে চলাচলকারী সূর্যমুখী পরিবহনের ম্যানেজার ইসহাক বলেন, ‘প্রায় প্রতিটি রুটে এখনও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যাত্রী নেই। যাওয়ার সময় খালি যাচ্ছে। তবে আসার সময় কিছু যাত্রী নিয়ে আসছে। আজ সন্ধ্যা থেকে চাপ আর একটু বাড়বে।’

সাধারণ সময়ে মানিকগঞ্জ-ঢাকা রুটে ভাড়া ২০০ টাকা হলেও ‘মানিকগঞ্জ এসি লিংক লিমিডেট’ যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করছে ৪০০ টাকা। ঈদ মোবারক লিখে টিকিটের উপরের ২০০ টাকার স্থলে ৪০০ টাকা আলাদা করে লিখে দিচ্ছে।
হোসেন তারেক নামে একজন যাত্রী টিকিটের ছবি তুলে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি লিখেন, ‘মানিকগঞ্জ এসি লিংক লিমিডেট, গন্তব্য: মতিঝিল টু মানিকগঞ্জ। টিকিটের মূল্য: ২০০/। ঈদ মোবারক: ৪০০ টাকা। এই মোবারক ভাইদের ধরবে কে?’