নুসরাত হত্যা মামলা থেকে পাঁচজনকে অব্যাহতি

নুসরাত হত্যা মামলা থেকে পাঁচজনকে অব্যাহতি

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত। একই সঙ্গে মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ২১ আসামির মধ্যে পাঁচজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে সাতজনের জামিন চাওয়া হলে আদালত তা নামঞ্জুর করেন।

আজ সোমবার এই আদেশ দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রিজন ভ্যানে করে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা মধ্য দিয়ে আসামিদের আদালতে আনা হয়। পরে আসামিদের উপস্থিতিতে মামলার শুনানি শেষে আগামী ২০ জুন অভিযোগ গঠনের জন্য পরবর্তী দিন ধার্য করেন আদালত।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী এম. শাহজাহান সাজু বলেন, বাদীর আপত্তি না থাকায় আজকে আদালত চার্জশিট গ্রহণ করেন। মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে অব্যাহতি প্রাপ্তরা হলেন, নুসরাতের সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন ও সাইদুল ইসলাম।

আইনজীবী এম. শাহজাহান সাজু আরও বলেন, চার্জশিটভুক্ত সাতজন আসামির জামিন চাওয়া হয়েছে আজকের আদালতে। বাদী, আসামি ও সরকার পক্ষের শুনানি শেষে সব আসামির জামিন নামঞ্জুর করেন আদালত। আগামী ২০ জুন এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য করা হয়েছে। ওই দিন অভিযোগ গঠন হলে স্বাক্ষীর পর্ব ও মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে।

মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন, সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আবদুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি (১৯), আবদুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদ্রাসার সাবেক সহসভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।

মামলার বাদী নিহত নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, ‘মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে আমরা সন্তুষ্ট। আমাদের কোনো আপত্তি নেই। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মামলাটি তদারকি করছেন। আশা করি, শিগগির ওসি মোয়াজ্জেম গ্রেপ্তার হবেন।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু বলেন, ‘বিচারক আংশিক ন্যায় বিচার করলেও পুরো ন্যায় বিচার করেননি। যারা ছাদে নুসরাতের গায়ে আগুন দিয়েছিল সেই পাঁচজন ছাড়া বাকি ১০ জনেকে একই গ্রাউন্ডে জামিন দেওয়া উচিত ছিল। মামলার তদন্ত প্রতিবেদনটি পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এই মামলায় যে অর্ডার হয়েছে তা আইন সম্মত নয় বরং বেআইনি।’

আদালত সূত্রে জানা যায়, খুব স্পর্শকাতর এ মামলার অভিযোগপত্র এবং প্রায় ৮০৮ পৃষ্ঠার সামগ্রিক নথিটি গত ২৮ মে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচার বিভাগীয় হাকিম জাকির হোসাইনের আদালতে দাখিল করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তারা।

ওই দিন অভিযোগপত্রসহ কেস ডকেট (সার্বিক নথি) জমা দিলেও বিচারক অভিযোগপত্রটি পর্যবেক্ষণ করে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুন উর রশিদের আদালতে পাঠিয়ে দেন। এরপর গত ৩০ মে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে আসামিদের হাজির করা হলেও বিচারক সেদিন অভিযোগপত্র গ্রহণের ওপর শুনানি না করে ১০ জুন শুনানির তারিখ ধার্য করেন।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়ের দায়ে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। পাঁচ দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মারা যায় নুসরাত।

এমজে/