বায়তুল মোকাররম মসজিদের পিলার গায়েব

পরিচালককে সাসপেন্ড করে শাস্তির মুখে ডিজি

পরিচালককে সাসপেন্ড করে শাস্তির মুখে ডিজি

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) মহাপরিচালক (ডিজি) সামীম মোহাম্মদ আফজালের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে নিয়োগ, পদোন্নতিসহ নানাবিধ অভিযোগ পুরনো। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক)।

সম্প্রতি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ ভবনের ভার বহনকারী গুরুত্বপূর্ণ দুটি পিলারের একটি পিলার রাতের আঁধারে ভেঙে ফেলে তার স্ত্রীর নামে প্রাপ্ত দোকান বড় করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা সোহরাব হোসেন গাজী। পেশাগত অবস্থান ছাড়াও নৈতিক কারণে এ কাণ্ডে পিলার গায়েবকারীদের বিরুদ্ধে তার অবস্থান নেওয়ার কথা। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, তিনি প্রকাশ্যে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা ও স্ত্রীর পক্ষ নিয়েছেন। চাইছেন চাঞ্চল্যকর এ কাণ্ড ধামাচাপা দিতে।

শুধু তাই নয়, পিলার অপসারণের কারণে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ায় ইফার মসজিদ ও মার্কেট শাখার পরিচালক মুহাম্মদ মহীউদ্দিন মজুমদারকে ‘তুচ্ছ’ অভিযোগে সাসপেন্ড করেছেন তিনি। এর জেরে এখন ফের আলোচনায় সামীম মোহাম্মদ আফজাল।

অবশ্য তার গৃহীত সাসপেন্ডের সিদ্ধান্তকে ‘ক্ষমতাবহির্ভূত’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিল করে দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। একই অভিযোগে ইফার ডিজির পদ থেকে তাকে কেন বরখাস্ত করা হবে না, কেন তার চুক্তি বাতিল করা হবে না- এর কারণ জানতে চেয়ে সামীম আফজালকে চিঠি দেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে। গত সোমবার দেওয়া এ নোটিশে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পরবর্তী সাত কার্যদিবসের মধ্যে এর ব্যাখ্যা দিতে।

শোকজের এ বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাওয়ার পর ইসলামিক ফাউন্ডেশনে তো বটেই, ধর্ম মন্ত্রণালয়েও ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

গণমাধ্যমের এক অনুসন্ধানে উঠে আসে- গত বছরের শেষদিকে জাতীয় মসজিদের পিলার রাতের আঁধারে গায়েব করে দেন আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব হোসেন গাজী। স্ত্রীর দোকান বড় করতেই ঐতিহাসিক এ স্থাপনাটির ভার বহনকারী দুটি পিলারের একটি এবং এর সঙ্গে যুক্ত ১৫ ফুট দেয়াল ভেঙে ফেলেন দোকানসংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ইফার পরিচালক মহীউদ্দিন মজুমদারেরও বক্তব্য ছিল। এ কারণে তার ওপর যারপরনাই ক্ষুব্ধ হন ডিজি সামীম আফজাল। এর পর ৩০ মে মহীউদ্দিন মজুমদারকে সাময়িক বরখাস্ত করেন ডিজি। গত ১ জুন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরস’ গভর্নর ও ইফার কর্মকর্তা-কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত গভর্নর সিরাজ উদদীন আহমেদের দপ্তরে একটি আবেদন করেন পরিচালক মহীউদ্দিন মজুমদার।

এতে তিনি ইফার ডিজির দেওয়া সাময়িক বরখাস্তের আদেশ বাতিলের অনুরোধ জানান। ৩ জুন তিনি একই বিষয়ে আবেদন করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বরাবর। এর পরিপ্রেক্ষিতে একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে এ ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি করা হয় ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে। কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে বরখাস্তের ক্ষেত্রে বিধি অনুযায়ী ইফার বোর্ড অব গভর্নসের সম্মতি নেওয়া হয়নি।

এমনকি বোর্ড অব গভর্নসের চেয়ারম্যান ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর মৌখিক সম্মতি পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। উপরন্তু সাসপেন্ড করা কর্মকর্তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনে কোনো নোটিশ প্রদান করা হয়নি। এর পর ধর্ম মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত জানিয়ে শোকজ নোটিশ দেয় ইফার ডিজিকে। এতে বলা হয়- ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজালের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে নিয়োগ, পদোন্নতি, ক্রয় কার্যক্রমসহ ইফার নানা কাজে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

গণমাধ্যমে এসব নিয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে কিছু ‘সুনির্দিষ্ট’ অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে দুদক গত ৭ মে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। কাজেই একই অভিযোগে কেন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হবে না, ৭ কার্যদিবসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে এর ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি কেন তার চুক্তি বাতিলের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে না, তাও একই সময়কালের মধ্যে ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে চিঠিতে।

ইফার পরিচালক মহীউদ্দিন মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, গত বছর অক্টোবরে বায়তুল মোকাররমের একটি পিলার ভেঙে একটি দোকান বড় করা হয়। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ায় রহস্যজনক কারণে ইফার মহাপরিচালক ক্ষুব্ধ হন। পিলার গায়েবের ঘটনায় আমি থানায় জিডি করি এবং দোকানটি বন্ধ করে দিই। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে ওই দোকানদার দুদিন পর তালা খুলে ফেলেন। পরে আবার আমি পুলিশকে জানাই। সেই দোকান মালিক আমাকে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দেয়।

এ ঘটনার পর চারটি ফাইল তৈরি করে ডিজির কাছে দিলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। মে মাসে এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর নজরে আসে। ডিজি মহোদয় তখন বলেন, তার কাছে এ বিষয়ে কোনো ফাইল যায়নি। তখন আমি তৈরি করে দেওয়া চারটি ফাইলের কথা বলি। এর পর ডিজি মহোদয় আমার ওপর আরো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

মন্ত্রণালয়ের চিঠি ও অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে গণমাধ্যম থেকে ইফার ডিজি সামীম আফজালের সেলফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। প্রথমে কল কেটে দেওয়া হয়। পরে তার পিএস জাকের হোসাইন ফিরতি কলে বলেন, স্যার হাসপাতালে আছেন। তাই সার্বিক বিষয়ে সামীম আফজালের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

এমআই