মেয়াদোত্তীর্ণ তিস্তা রেল সেতুতে চলছে ১৮ ট্রেন

মেয়াদোত্তীর্ণ তিস্তা রেল সেতুতে চলছে ১৮ ট্রেন

মেয়াদোত্তীর্ণের ৮৫ বছর পরও ঝুঁকি নিয়ে লালমনিরহাটের তিস্তা রেলসেতুতে পারাপার হচ্ছে দৈনিক ১৮ জোড়া ট্রেন। পাশে আরেকটি সেতু নির্মাণে সরকারি পরিকল্পনা থাকলেও নেই বাস্তবায়নের উদ্যোগ।

রেলওয়ে ও স্থানীয়রা জানান, সারা দেশের সঙ্গে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম অঞ্চলে রেল যোগাযোগ সৃষ্টি করতে ১৮৩৪ সালে তিস্তা নদীর উপর ২ হাজার ১১০ ফুট লম্বা এ তিস্তা রেলসেতু নির্মাণ করে তৎকালীন বৃটিশ সরকার। তখন দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রেলসেতু হিসেবে এটির পরিচিতি ছিল। সেতুটির উত্তর পাশে লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা এলাকা এবং দক্ষিণ পাশ যুক্ত হয়েছে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার সঙ্গে। ১৮৫ বছর বয়সের এ সেতুটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল একশত বছর। ৮৫ বছর আগে সেতুটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও জোড়াতালি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে দৈনিক ছুটছে ১৮টি ট্রেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সেতুটিতে মিত্রবাহিনী বোমবিং করায় একটি গার্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে সেতুটি পুনরায় চালু করা হয়। ১৯৭৭ সালে রেলওয়ে ও সওজ বিভাগ যৌথভাবে রেলসেতুতে মিটারগেজ লাইনের পাশে ২৬০টি স্টিলের টাইফ প্লেট ও কাঠের পাটাতন স্থাপন করে। ১৯৭৮ সালে ট্রেনের পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগ শুরু করা হয়। তখন থেকেই সেতু দিয়ে ট্রেন ও যাত্রীবাহী বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করতো। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত মালবোঝাই ট্রাক পারাপারের ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।

২০০১ সালে রেলসেতুর পূর্ব পাশে তিস্তা সড়ক সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তিতে ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বরে বতর্মান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতু উদ্বোধন করেন। আর সড়ক সেতু চালু হওয়ায় মেয়াদোত্তীর্ণ রেল সেতুর যানবাহন চলাচল বন্ধ হলেও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকে। সেতুর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও দীর্ঘদিন থেকে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চলাচল করছে এ সেতুতে। অযত্ন আর অবহেলায় সেতুটির লাইনে বেশ কিছু স্লিপার নষ্ট হয়েছে। খুলে পড়ে গেছে অনেক স্লিপারের প্লেট ও নাট-বল্টু। ফলে যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। দুর্ঘটনার আগেই সেতুটির কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান যাত্রীসাধারণ ও স্থানীয়রা।

তিস্তা এলাকার বাসিন্দা সামাদ মিয়া, তোজাম আলী, রহিম মিয়া বলেন, তিস্তা রেল সেতুটির ওপর ট্রেন উঠলে সেতুটি কেঁপে ওঠে। সব সময় আতঙ্কে থাকি। কখন যে কি দুর্ঘটনা ঘটে। মাঝে মাঝে লোক দেখানো নামমাত্র মেরামতের কাজ হলেও উন্নতি ঘটেনি। ফলে যেকোনো সময় এখানে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে।

নিয়মিত ট্রেনের যাত্রী আসাদুজ্জামান খান্দকার, আরিফ ও তোফায়েল বলেন, তিস্তা রেল সেতুতে ট্রেন উঠলে বুকটা কেঁপে উঠে। সেতুটি অতিক্রম না করা পর্যন্ত বুক কাঁপতে থাকে। দীর্ঘ দিন ধরে জোড়াতালি দিয়ে সেতুটিতে ট্রেন চলাচল করছে। সম্প্রতি সিলেটের কুলাউড়ার মতো বড় ধরনের দুর্ঘটনার আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানান তারা।

কয়েক মাস আগে তিস্তা রেলসেতু পরিদর্শন করে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের বলেন, কানেক্টিভিটি বাড়াতে তিস্তা রেলসেতুতে ট্রেনের গতি ও সংখ্যার বাড়ানো হবে। তাই তিস্তায় আরেকটি রেল সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুরাতন সেতুর পশ্চিম পাশেই আরেকটি ডুয়েল গেজ সেতু নির্মাণে খুব দ্রুত কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে।

এদিকে এ বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় হতাশ স্থানীয় যাত্রীসাধারণ।

রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় ম্যানেজার মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার (২৫ জুন) একনেকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এ বিভাগের ছোট বড় ৪০৮টি সেতু'র খোঁজ খবর নেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু সেতুতে ইতিপূর্বে মেরামত কাজ শুরু হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কোনো সেতু নেই। তিস্তা রেলসেতু মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তবুও তিস্তা রেলসেতুর পশ্চিম পাশে নতুন করে আরো একটি ডুয়েল ব্রডগেজ সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

এমজে/