রামুতে চাল সংগ্রহে ফের চালবাজি, ৪০ লাখ টাকার কেলেঙ্কারি

রামুতে চাল সংগ্রহে ফের চালবাজি, ৪০ লাখ টাকার কেলেঙ্কারি

কক্সবাজারের রামু উপজেলার সরকারি খাদ্যগুদামে ফের চাল নিয়ে চালবাজির ঘটনা ঘটেছে। সরকারি বিনির্দেশ (নীতিমালা) লঙ্ঘন করে নিম্নমানের চাল সংগ্রহ করে প্রায় ৪০লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে রামু খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কফিল উদ্দিনের বিরুদ্ধে।

সরকারিভাবে কেজি প্রতি ৩৫ টাকা চালের দাম দেওয়া হলেও মিলারদের কাছ থেকে টন প্রতি ২৫ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়ে ২৪ থেকে ২৫ টাকা বাজার মূল্যের চাল গ্রহণ করা হয়েছে।

খাদ্য বিভাগের অফিসিয়াল তদন্তে এসব অনিয়ম ধরা পড়ায় নিম্নমানের এসব চাল সরিয়ে বিনির্দেশ অনুযায়ী চাল সংগ্রহ এবং অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়াসহ চারটি সুপারিশ করে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে নির্দেশনা দিয়েছেন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মাহবুবুর রহমান।

ইতোমধ্যে ওই নিদের্শনার তিনদিন পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং এরই মধ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে খাদ্য পরিদর্শক থেকে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক পদে পদোন্নতি নিয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা কফিল উদ্দিন সটকে পড়ার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে বলে জানা গেছে।

অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন খাতে উপকারভোগীদের অনুকূলে স্থানীয়ভাবে বিতরণের জন্য বোরো আতপ/২০১৯ মৌসুমে রামুর স্থানীয় মিল মালিকদের কাছ থেকে ১ হাজার ৩৪২ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের জন্য ১৮ জন মিল মালিকের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। এসব মিলারদের কাছ থেকে গত ১৯ জুন পর্যন্ত ১ হাজার ৭০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু এসব চাল নিম্নমানের বলে অভিযোগ ওঠায় গত ১৯জুন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে একটি টিম সংগ্রহ করা চালের মান যাচাইয়ের জন্য রামু খাদ্য গুদাম পরিদর্শনে আসেন। এসময় পরিদর্শক দল গুদামে থাকা ৬টি খামালে ( নম্বর-৯৩/৭৬০৭৭৮,৯৪/৭৬০৭৭৯,৯৫/৭৬০৭৮০,১০৭/৭৭৪৭৫৪ ও ১০৮/৭৭৪৭৫৬ ) নিম্নমানের চাল পায়। এমন কি ওইসব খামাল থেকে সংগ্রহ করা নমুনার ভৌত পরীক্ষায়ও চালগুলো নিম্নমানের বলে প্রমাণ মিলেছে।

এসব বিষয় তুলে ধরে গত ২৩ জুন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মাহবুবুর রহমান নিম্নমানের এসব চাল অপসারণ করে মানসম্মত চাল গুদামে প্রতিস্থাপন এবং অভিযুক্ত কর্মকর্তা মো. কফিল উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার খসড়া পাঠানোসহ চারটি নির্দেশনা দিয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে চিঠি পাঠায়। যার স্মারক নম্বর-২৪৯২।

ওই চিঠিতে বিনির্দেশ বহির্ভূত চাল সরবরাহকারি মিলারের তালিকা, একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে মিলারদের নিজ খরচে নিজ দায়িত্বে সম্মত চাল গুদামে প্রতিস্থাপন করে প্রতিবেদন পাঠানো, অভিযুক্ত কর্মকর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার খসড়া ও জেলার অন্যান্য খাদ্যগুদামে বিনির্দেশ সম্মত (মানসম্মত) চাল কেনা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

কিন্তু এসব বিষয়ে ব্যবস্থা না নিয়ে ১৯ থেকে ২৬জুন পর্যন্ত ওইসব মিলারদের কাছ থেকে উল্টো ২৭২টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মিল মালিক জানান, চাল ভালো খারাপ যাই হোক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে টন প্রতি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা উৎকোচ দিতে হয়েছে। সে হিসাবে তিন হাজার টাকা ধরা হলেও ২৬ জুন পর্যন্ত সংগ্রহ করা ১ হাজার ৩৪২ মেট্রিক চালে ৪০ লাখ ২৬ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়েছেন মো. কফিল উদ্দিন।

এ বিষয়ে মিল মালিক ও চালকল মালিক সমিতির অর্থ-সম্পাদক আব্দুল করিম সওদাগর বাংলানিউজকে বলেন, সবাই নয়, দুই-তিনজনের চাল খারাপ পড়েছে। এগুলো পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। তবে টনপ্রতি উৎকোচ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে জানান।

অভিযুক্ত কফিল উদ্দিন বলেন, এখন কোনো অভিযোগ নেই, সব ঠিক হয়ে গেছে। আমার প্রমোশন হয়েছে। আপনাদের দোয়ায় কিছুদিনের মধ্যে আমি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসাবে কুমিল্লার দেবিদ্বারে যোগদান করবো। আগামী ৩০ জুন নতুন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবেন বলেও জানান।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে ডিসি ফুড বরাবর পাঠানো চিঠির বিষয়ে তিনি বলেন, গত ১৯ জুন কিছু লোক এসেছিলেন, তারা দু’টি খামালে কিছু নিম্নমানের চাল পেয়েছে, তবে ৬টি খামাল নয়। এগুলো আমি ঠিক করে নিয়েছি। আর এখন যেগুলো নিচ্ছে সব মানসম্মত চাল।

জেলা ভারপ্রাপ্ত ডিসি ফুড দেবদাস চাকমা বলেন, এ ঘটনায় একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। এরপর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, জানতে পেরেছি ৩৪ বস্তা চাল খারাপ পড়েছে। তবে বিষয়টি সুষ্ঠু সমাধান করতে না পারলে ওই কর্মকর্তার প্রমোশন আটকে যাবে, তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে।

এমজে/