৪০ বছর পর বৈরী দেশের প্রকৃতি

৪০ বছর পর বৈরী দেশের প্রকৃতি

বৃষ্টি ভরমৌসুমেও কমছে না তাপমাত্রা। ঝুমবৃষ্টির পরও অসহ্য গরম থাকছেই। ১৯৭৯ সালের পর গত ৪০ বছরে আবহাওয়ার এমন বৈরী আচরণের সঙ্গে পরিচিত নন দেশের মানুষ। একই অবস্থা আবহাওয়া বিভাগেরও।

তাদের মতে, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ এ সময় বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে থাকার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এর অবস্থান দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর থেকে অনেক দূরে। গত কয়েক দশকে, বিশেষ করে ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ধরনে একটি অস্বাভাবিকতা অব্যাহত রয়েছে বলে আমাদের সময়কে জানিয়েছেন আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা।

গতকাল ছিল আষাঢ় মাসের ২১ তারিখ। ঋতুচক্র অনুসারে বাংলাবর্ষের এ মাসকে বর্ষার ভরা মৌসুম বলে গণ্য করা হয়। এ সময় তাপমাত্রাও থাকে সহনীয়। অথচ গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় শেরপুর জেলার নিকলীতে, ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়ার রেকর্ড বলছে, ঢাকায় সামান্য আর টেকনাফে সর্বোচ্চ ৭১ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। ১৫ জেলায় কোনো বৃষ্টিই হয়নি। আষাঢ়ের শেষ সপ্তাহেও দেশে প্রচ- খরতাপ চলছে। কখনো কখনো বৃষ্টি হলেও ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ।

চলতি বছর বৃষ্টির মধ্যেও কমছে না তাপমাত্রা। আবহাওয়ার এমন অবস্থা দেখা যায়নি গত কয়েক দশকে। চার দশক আগে আবহাওয়ার এমন সীমাহীন বৈরী রূপের দেখা মেলে, জানায় আবহাওয়া বিভাগ। আবহাওয়া গবেষক ড. মোহন কুমার দাশ মনে করেন, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এখন উত্তর আরব সাগর, দক্ষিণ গুজরাট, মহারাষ্ট্র, মধ্য প্রদেশ প্রভৃতি অঞ্চল দিয়ে অগ্রসর হয়ে বাংলাদেশের ওপর সক্রিয়।

এটি উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল অবস্থায় ছিল। ফলে বৃষ্টি না হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। সার্ক আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক আবহাওয়া বিজ্ঞানী ড. সমরেন্দ্র কর্মকার এ ব্যতিক্রমকে ১৯৭৯ সালের ঘটনার সঙ্গে মিল দেখছেন। প্রায় ৪০ বছর আগে এমনটি দেখা গিয়েছিল। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ এ সময় বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে থাকার কথা।

কিন্তু সেটি অবস্থান করছে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর থেকে অনেক দূরে। গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ধরনে একটি অস্বাভাবিকতা অব্যাহত রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন এ বিজ্ঞানী। আবহাওয়ার অবস্থা যা-ই থাকুক আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ বেশ কিছু এলাকায় বৃষ্টিপাত হওয়ার আশা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। একটানা বৃষ্টি হলে তীব্র গরম কিছুটা কমে যাবে বলেও ধারণা তাদের।

এদিকে গুমোট বাঁধা গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। এমন পরিবেশ কতদিন থাকবে এ নিয়ে চলছে জল্পনা। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আষাঢ় মাসেও এমন গরম কেন? সার্ক আবহাওয়া কেন্দ্রের সাবেক বিজ্ঞানী আবদুল মান্নান জানান, উত্তর বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছিল। এ লঘুচাপের প্রভাবে গরম বেড়েছে। লঘুচাপের প্রভাবে বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি ছিল। এই জলীয়বাষ্প দীর্ঘ সময় তাপ ধরে রাখছে।

এ কারণে রাতের বেলাও গরম পড়ছে। ঘাম হচ্ছে বেশি। তবে লঘুচাপের কারণে প্রচুর মেঘমালার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

এমআই