আইসিইউতে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ফিরোজ রশীদের পুত্রবধূ, যা বললেন স্বামী!

আইসিইউতে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ফিরোজ রশীদের পুত্রবধূ, যা বললেন স্বামী!

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের পুত্রবধূ মেরিনা শোয়েব আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। তদন্তের পর পুলিশ দাবি করছে, ঘটনার সময় মেরিনার ছেলে-মেয়ে বাসায় ছিল। তারাই প্রথম গুলির শব্দ শুনে ঘরে ছুটে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। সে সময় রুমে তিনি একাই ছিলেন।

এর আগে রবিবার দিবাগতরাতে ধানমন্ডির ৯/এ নম্বর সড়কের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে মেরিনা শোয়েব ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ল্যাবএইড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মেরিনার পিঠে গুলি লেগেছে। তিনি আইসিইউতে আছেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, মেরিনা শোয়েবের সঙ্গে কাজী ফিরোজ রশীদের ছেলে কাজী শোয়েব রশীদের তিন বছর আগে বিচ্ছেদ হয়। তাদের ২০ বছরের এক মেয়ে ও ১১ বছরের একজন ছেলে আছে। ছেলে স্কুলে পড়ে। মেয়ে ‘এ’ লেভেল পাস করেছে। তবে বিচ্ছেদের পরও তিন বছর ধরে মেরিনা শ্বশুরবাড়ি সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে থাকছেন।

রবিবার রাতে যখন এ ঘটনা ঘটে তখন ধানমন্ডির ওই বাড়িতে তার ছেলে-মেয়ে, দেবর ও শাশুড়ি ছিলেন। ছেলে ও দেবর ঘরেই ক্রিকেট খেলছিল। এ সময় তার মেয়ে অন্য ঘরে ছিল। হঠাৎ করে মেয়েই প্রথম গুলির শব্দ শুনতে পায়। মেয়ে সবাইকে ডেকে ঘরে গিয়ে দেখে, মেরিনা মাটিতে পড়ে আছে। তার পাশেই একটি পিস্তল।

পুলিশ পিস্তলটি উদ্ধার করে দেখতে পায়, এটি কাজী শোয়েবের লাইসেন্স করা পিস্তল। এটি জব্দ করা হয়েছে।

ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে মেয়ে তার বাবা শোয়েব, দাদা ফিরোজ রশীদকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানায় এবং বাসার সবাই মিলে ল্যাবএইডে নিয়ে যান। সংসদ থেকে ফোন পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে ছুটে আসেন কাজী ফিরোজ রশীদ।

ঘটনা তদন্তে বাড়ির প্রধান ফটকের সিসিটিভির ফুটেজ চেয়েছে পুলিশ। তবে বিশেষজ্ঞ না থাকায় সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ফুটেজ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।

পুলিশ জানায়, গুলির ঘটনার আগে ও পরে তার স্বামীসহ সন্দেহজনক কেউ ভেতরে ঢুকেছিল কি না- সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

মেরিনার দুই সন্তান পুলিশকে জানিয়েছে, কয়েক বছর ধরেই তাদের মায়ের কথাবার্তা ও চালচলন অস্বাভাবিক ছিল। তিনি প্রায়ই তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন। কয়েকবার আত্মহত্যার হুমকিও দিয়েছেন।

এ ঘটনার পর মেরিনার পরিবারের সদস্যরা বেশ কয়েকবার থানায় গেছেন। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো মামলা করা হয়নি।

ল্যাবএইডে চিকিৎসাধীন মেরিনার শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে ল্যাবএইডের কর্মকর্তা এজিএম (কর্পোরেট কমিউনিকেশন) সাইফুর রহমান লেলিন বলেন, ‘গুলি তার পিঠ দিয়ে ঢুকেছে। এখন পেটে আছে। গতকাল (রোববার) তার একটি অপারেশন হয়েছে। কিন্তু গুলিটি বের করা যায়নি। গুলির কারণে পেটের ভেতর যেসব ড্যামেজ বা লিকেজ হয়েছিল সেগুলো রিপেয়ার করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে আইসিইউতে আছেন। তাকে ট্রায়াল হিসেবে কিছুক্ষণ পরপর ভেন্টিলেশন দেয়া হচ্ছে, আবার খুলে ফেলা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘তাকে আপাতত আশঙ্কামুক্ত বলা যাবে না। তবে সেন্স আছে।’

পুলিশের ধানমন্ডি জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) আবদুল্লাহীল কাফী বলেন, ‌‘প্রাথমিকভাবে আমাদের এটি ‘আত্মহত্যা’ বলে মনে হচ্ছে। আমরা ভিডিও ফুটেজ ও সাক্ষ্যগ্রহণ করছি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।’

মেরিনার বাবা সিরাজুল ইসলাম পাটোয়ারী বলেন, ‘২৮ বছরের সংসার ছিল তাদের। স্বামী-স্ত্রীর বনিবনা হলে এমন ঘটনা ঘটত না।’

মেয়ের গুলিবিদ্ধের ঘটনাটি আত্মহত্যা চেষ্টা কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সকালে আইসিইউতে তার সঙ্গে দেখা করেছি। সে আমাকে শুধু চিনতে পেরেছে, আর কিছু বলেনি। শোয়েব বলল, সে নাকি সে সময় বাড়িতে ছিল না। পুলিশ শোয়েবের স্টেটমেন্ট ধানমন্ডি থানায় নিয়ে গেছে। আমরা ইতোমধ্যে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছি, তবে মামলা করিনি।’

মেরিনা শোয়েব কীভাবে গুলিবিদ্ধ হলেন, এ প্রসঙ্গে সোমবার বিকালে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন কাজী শোয়েব।

কীভাবে গুলি লাগল, সে বিষয়ে কাজী শোয়েব বলেন, ‘আমি সেটা জানতে পারি নাই। আমার মেয়ে যেটা বলছে, সেটা হলো যে, ওরা আওয়াজ পেয়ে রুমে ঢুকে দেখে, ও (মেরিনা শোয়েব) পড়ে আছে, হাতের কাছে পিস্তলটা।’

পিস্তলটি কার, এ প্রসঙ্গে কাজী শোয়েব বলেন, ‘ওটা আমার লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র। কালকে হরতাল ছিল বিধায় আমি পিস্তলটা আলমারিতে রেখে বের হইছি। তারপর আর কিছু জানি না।’

মেরিনা শোয়েবের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে কাজী ফিরোজ রশীদ সংসদ ভবন থেকে এসে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান বলে জানান কাজী শোয়েব। তিনি বলেন, ‘সে (মেরিনা শোয়েব) হাসপাতালে যাওয়ার ২৩ মিনিট পরে আমি বাসায় আসছি। এসে আমি আমার ছেলেকে নিয়ে চলে গেছি। সেই ফুটেজ আছে। আমার বাবা সংসদে ছিলেন, উনি এসে নিয়ে গেছেন আমার স্ত্রীকে।’

মেরিনা শোয়েব গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় বাসায় কারা ছিলেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে কাজী শোয়েব বলেন, ‘বাসায় আমার ছেলেমেয়ে ছিল, আমার মা ছিল। আমার ছোট ভাই ছিল, সে উপরে থাকে। আর বাসায় কাজের মেয়ে ছিল তিনজন।’

মেরিনা শোয়েবের গুলিবিদ্ধ হওয়া নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের (ধানমন্ডি জোন) অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আবদুল্লা আল-কাফী বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো মেয়ের বাবা বা কেউ লিখিত কোনো অভিযোগ দেয়নি। এটা প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যার চেষ্টা বলে ধারণা করা হচ্ছে।’

মেরিনার শরীরের কোথায় গুলি লেগেছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে ল্যাবএইড হাসপাতালের এজিএম (করপোরেট কমিউনিকেশন) সাইফুর রহমান লেনিন বলেন, ‘গুলিটি পিঠের দিক থেকে লেগে পেটে রয়েছে।’

তবে কাজী শোয়েব চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে দাবি করেন, গুলি পেটের দিক থেকে লেগেছে। তিনি বলেন, ‘আপনি কনফার্ম হোন। সে (মেরিনা শোয়েব) পেট ধরে বাসা থেকে বের হয়েছে, ব্যান্ডেজ পেটে ছিল। সিসিটিভি ফুটেজ আছে আমার কাছে। ডাক্তার বলেছেন, “গুলিটা পেটে ঢুকেছে, পিঠে লেগে আছে। পেছন পর্যন্ত গেছে, চামড়াটা ফুটা করে বের হয়নি।”পেছন দিয়ে ঢুকলে তো পেট ফুটা করে বের হয়ে যেত।’

একই কথা বলেন ধানমন্ডি জোনের এডিসি আবদুল্লা আল-কাফী। তিনি বলেন, ‘গুলিটা সামনে থেকে লাগছে। গুলিটা বের হয় নাই।’

মেরিনা শোয়েব মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল বলে দাবি করেন তার স্বামী কাজী শোয়েব। তিনি বলেন, ‘সে (মেরিনা) মেন্টালি ডিপ্রেসড ছিল। সে বলত, “আত্মহত্যা করবে। ”আমাকে প্রায়ই বলত, সে ছাদ থেকে করবে (আত্মহত্যা)। আমার বাচ্চাদেরকেও প্রায়ই বলত। আমার বাচ্চা যদি বলত, “মা স্কুলে যাবো, নিয় যাও, নাস্তা বানিয়ে দাও”। তখন সে (মেরিনা) বলত, “আত্মহত্যা করব।” এটা আমার মেয়ে গতকাল মন্তব্য করছে।’

কাজী শোয়েব দাবি করেন, মেরিনার সঙ্গে তার ২০১৬ সালে বিচ্ছেদ হয়েছে। কিন্তু তারপরও তিনি শোয়েবের বাসায় আসতেন ও থাকতেন। গতকাল তার বাসাতেই গুলিবিদ্ধ হন মেরিনা।

বিচ্ছেদের পর বাসায় মেরিনার বাসায় আসা প্রসঙ্গে কাজী শোয়েব বলেন, ‘আমি কখনো বাধা দেইনি বাসায় আসতে। আমার বাচ্চাদের জন্য আমি বাধা দেইনি। কারণ তাহলে তো সে আসতেই পারত না ডিভোর্সের পরে। মানসিক একটা চাপ বাচ্চাদের ওপর পড়ুক, সেটা আমি চাইনি। এইটাই আমার ভুল হয়েছে।’