ছিনতাই ঠেকাতে পারছে না পুলিশ

ছিনতাই ঠেকাতে পারছে না পুলিশ

ঢাকা, ২৯ জানুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : নৃশংস হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারীরা। একের পর এক প্রাণহানি ঘটলেও ছিনতাইকারীদের ঠেকাতে পারছে না পুলিশ। ভুক্তভোগীরা বলছেন, রাতের বেলা রাজধানীর রাস্তায় টহল পুলিশ দেখা যায় না। কোথাও কোথাও নামমাত্র তল্লাশিচৌকি থাকলেও সেগুলো কাজ করে না। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত অনেক সড়ক ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, ছিনতাই ঠেকাতে পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছেন কমিশনার। ছিনতাই বন্ধে টহল পুলিশের কার্যক্রম জোরদার করা এবং পুলিশ ক্যাম্প ও ফাঁড়িগুলোকে সক্রিয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরও এসব দাওয়াই কোনো কাজে আসছে না। ছিনতাই পরিস্থিত নিয়ে এখন পুলিশ কর্মকর্তারাও উদ্বিগ্ন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, দেড় কোটি মানুষের বাসের এই শহরে হঠাৎ করে সেদিন দুটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় দুজন নিহত হন। এতে ছিনতাই বাড়েনি। তারপরও ডিবি ও থানা পুলিশকে দিয়ে টিম গঠন করে ছিনতাই বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত দুই মাসে ছিনতাইকারীর হাতে শিশু, নারীসহ চারজন খুন হয়েছেন। এর মধ্যে গত শুক্রবারই পৃথক ঘটনায় নারীসহ দুজন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। শুক্রবার ভোরে ধানমন্ডি ৭ নম্বর রোডের মাথায় ব্যাগ ধরে হ্যাঁচকা টান দেওয়ায় গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান বেসরকারি হাসপাতালের কর্মী হেলেনা বেগম। প্রায় একই সময় সায়েদাবাদ এলাকায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন খুলনার ব্যবসায়ী ইব্রাহিম। এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর সকালে দয়াগঞ্জ এলাকায় ছিনতাইকারীদের হ্যাঁচকা টানে মায়ের কোল থেকে পড়ে প্রাণ হারায় ছয় মাসের শিশু আরাফাত। মা তাঁর সন্তানকে কোলে নিয়ে রিকশায় করে বাসায় ফিরছিলেন। গত ৫ ডিসেম্বর একইভাবে ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে মারা যান জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ফরহাদ আলম (৪০)। আর ৮ অক্টোবর টিকাটুলিতে ছিনতাইকারী ধরতে গিয়ে তাদের ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আবু তালহা খন্দকার। এ রকম ছিনতাইয়ের ঘটনা এখন প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর কোথাও না কোথাও ঘটছে।

ভুক্তভোগী ব্যক্তি, হাসপাতালসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, গত দুই মাসে (ডিসেম্বর থেকে গত ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত) রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অন্তত ২০০ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু মহানগর পুলিশের সদর দপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১ মাস ২৭ দিনে ছিনতাই ও দ্রুত বিচার আইনে মামলা হয়েছে মাত্র ১৫টি।

বেশির ভাগ ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ছিনতাইয়ের অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে সাধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দেয়। এমন ঘটনার শিকার হয়েছেন মিরপুরের বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন। গত ২৬ ডিসেম্বর রাত পৌনে আটটার দিকে মিরপুর বেড়িবাঁধে বিরুলিয়া সেতুর কাছে অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাইকারীরা তাঁর কাছ থেকে একটি মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তিনি রূপনগর থানায় গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে জিডি করার পরামর্শ দেয়। নিজাম উদ্দিন বলেন, তিনি মামলা করতে না পেরে বাসায় ফিরে যান।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গত কয়েক দিনে দেখা গেছে, দিনের আলো ওঠার আগে টার্মিনাল থেকে গন্তব্যের উদ্দেশে যাওয়ার সময় লোকজন ছিনতাইকারীর কবলে পড়ছেন। তিনি যাত্রীদের দিনের আলো ফোটার পর রাস্তায় বের হওয়ার পরামর্শ দেন।

জানা গেছে, রাজধানীর অধিকাংশ সড়কে পুলিশের তল্লাশিচৌকি ও টহল না থাকায় ভোরবেলা বাসস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলস্টেশন থেকে আসা যাত্রীরা ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ছে।

মিরপুর বেড়িবাঁধের বাসিন্দা বেলায়েত হোসেন বলেন, রাতে মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় পুলিশের তল্লাশিচৌকি কিংবা টহল দেখা যায় না। তখন এলাকা ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। গত ৩১ ডিসেম্বর রাতে বেড়িবাঁধ থেকে পেঁয়াজ, রসুন ও আদাভর্তি একটি পিকআপ নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ছিনতাইকারীদের হাতে একের পর প্রাণহানির ঘটনা উদ্বেগজনক। ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এতে তাদের সহযোগীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে।

(জাস্ট নিউজ/ওটি/১৫৪৫ঘ.)