দেশের তিন অঞ্চলে বন্যা

দেশের তিন অঞ্চলে বন্যা

ভারতের বিহার, আসাম, মেঘালয় এবং নেপাল ও বাংলাদেশের ভেতরে ভারি বৃষ্টিপাতে ইতিমধ্যে সাত নদীর পানি বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে পরিস্থিতি বেশি খারাপ। ভারি বৃষ্টিপাত আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। এ কারণে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) থেকে বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নিম্নাঞ্চল বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।

বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত নদীগুলো হচ্ছে- সুরমা, সারিগোয়াইন, সোমেশ্বরী, কংস, সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও তিস্তা। এছাড়া যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় যমুনার পানি জামালপুর জেলায় বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এসব কারণে একদিকে সিলেটসহ কয়েকটি জেলায় স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায়ও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

এদিকে ভারি বর্ষার কারণে ফেনী, হালদা নদীর পানিও দ্রুত বাড়ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি ওই নদীগুলোর সংলগ্ন এলাকায়ও বিস্তৃত হতে পারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড দেশে ৯৪ স্টেশনে পানির সমতল পর্যবেক্ষণ করে। এর মধ্যে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার ৬৯ পয়েন্টেই পানি বেড়েছে। হ্রাস পেয়েছে ২৩ স্টেশনে। ৭ নদী ১০টি স্টেশনে সীমার উপরে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উপরে আছে সুরমা ও সাঙ্গু। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি ৮৪ সেন্টিমিটার বেড়েছে। বর্তমানে এটি বিপদসীমার ১০৪ সেন্টিমিটার উপরে আছে।

আর চট্টগ্রামের দোহাজারিতে সাঙ্গু প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার ১২৫ সেন্টিমিটার উপরে। এ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ৭৩ সেন্টিমিটার। বান্দরবানের লামা পয়েন্টে মাতামুহুরী বইছে বিপদসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার উপরে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ৭৪ সেন্টিমিটার।

তিস্তা নদীর পানি ২৫ সেন্টিমিটারসহ অনেকগুলো নদ-নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে দেখা দিয়েছে নদীভাঙনের। আর পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজারও মানুষ। দুর্গত অনেক এলাকায় খোলা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। দেয়া হচ্ছে সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির আভাব। যুগান্তর রিপোর্ট ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

নেত্রকোনা দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা: দুর্গাপুর, বারহাট্টা ও কলমাকান্দার প্রায় ১৫টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে কলমাকান্দা উপজেলার আটটি ইউনিয়নের প্রায় সবক’টি।

বন্যায় তিন উপজেলায় অন্তত দুই শতাধিক গ্রামে প্রায় ৫০ হাজারের মতো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকছে।

গ্রামীণ বেশ কয়েকটি সড়ক পানির নিচে থাকায় উপজেলা ও জেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। কলমাকান্দা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, উপজেলার ১৭২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে অন্তত ১৫২টির মাঠ পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

এর মধ্যে সংযোগ সড়ক ডুবে যাওয়ায় ১২টি বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে দুর্গাপুরের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু তাহের ভূঁইয়া জানান, ওই উপজেলার ২৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

দুর্গাপুর ইউএনও ফারজানা খানম বলেন, পাঁচটি ইউনিয়নে বন্যার পানি ঢুকে গেছে। যাদের বসতঘরে পানি ঢুকছে তাদের স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদসহ নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে দেয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আপাতত ২০ মেট্রিক টন জিআর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওই দুই উপজেলায় ৬০০ প্যাকেট শুকনো খবার সরবরাহ করা হচ্ছে।

বড়লেখা (মৌলভীবাজার): বড়লেখায় বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হওয়া টানা ভারি বর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিপাত ও উজানের পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ রাস্তাঘাট প্লাবিত হওয়ায় দেখা দিয়েছে চরম জনদুর্ভোগ।

চিলমারী (কুড়িগ্রাম): চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের পুঁটিমারী কাজলডাঙ্গা, রানীগঞ্জ ইউনিয়নের কাঁচকোল, চিলমারী ইউনিয়নের বৈলমনদিয়ার খাতা ও শাখাহাতিসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম): হাটহাজারীতে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার রাতে হাটহাজারী উপজেলার ১ নম্বর ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের উদালিয়া গ্রামের পাহাড়ে ঘেরা মনাই ত্রিপুরা পল্লীতে এ ঘটনা ঘটে। তবে স্থানীয় প্রশাসন উক্ত পল্লীতে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসরত ১৫টি পরিবারকে আগাম সরিয়ে নেয়ার কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পাওয়া গেছে।

গাইবান্ধা: গাইবান্ধার নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা এবং সদর উপজেলায় তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদী তীরবর্তী বিভিন্ন চরের নিচু এলাকাগুলোতে পানি ঢুকে পড়েছে।

ফলে ওইসব এলাকার কিছু কিছু ঘরবাড়িতেও পানি উঠেছে। এছাড়া বিভিন্ন ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। রাস্তা-ঘাট ডুবে গেছে। এদিকে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ফুলছড়ি উপজেলার বেশকিছু এলাকায় তিস্তার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

গত চার দিনে ফুলছড়ি ও সুন্দরগঞ্জের ওইসব এলাকায় শতাধিক পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়েছে। এদিকে অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলের নিচু এলাকাগুলো তলিয়ে যাওয়ায় সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় লোকজন চলাচল করতে পারছে না।

সিলেট: সিলেটের গোয়াইনঘাটসহ নিম্নাঞ্চলে ক্রমেই পানি বাড়ছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। তবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। নৌকাযোগে প্লাবিত এলাকা পরিদর্শনে থাকা গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পাল যুগান্তরকে জানান, বুধবারের চেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার পানি বেড়েছে এলাকায়। ছড়া-নদীর পানি কমতে শুরু করলেও হাওর ও নিম্নাঞ্চলে পানি বাড়ছে। তিনি জানান, বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির জরিপ হচ্ছে, পর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দ রয়েছে। ইতোপূর্বে ৬ মেট্রিক টন গম দেয়া হয়েছিল, নতুন করে আরও ১৮ টন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

এদিকে বন্যার ফলে জাফলং, বিছনাকান্দিসহ কোয়ারি এলাকাগুলোতে পাথর, বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।

রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি শহরে সরকারিভাবে ২১টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন দুই হাজারের অধিক মানুষ। অনেকে নিজ উদ্যোগে অন্যত্র নিরাপদে সরে গেছেন। বিভিন্ন জায়গায় পাহাড় ও ভূমি ধস অব্যাহত রয়েছে।

রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কায় সড়কটি। রাঙ্গামাটি-বান্দরবান এবং রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক এখনও অচল। ধসে যাওয়া রাস্তার জরুরি মেরামত চলছে।

উদ্ধার তৎপরতায় মাঠে রয়েছে, সেনাবাহিনী ও অন্যান্য সংস্থার কর্মীরা। লংগদু উপজেলায় পানির তোড়ে ভেসে গিয়ে মো. রুবেল নামে এক বোট চালক মারা গেছেন। তিনি মাইনিমুখ ইউনিয়নের জারুলছড়ির বাসিন্দা।

মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে বোট থেকে কাপ্তাই হ্রদে পড়ে নিখোঁজ হন রুবেল। বুধবার সন্ধ্যায় কাপ্তাই হ্রদের কাট্টলি বিল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়া বুধবার বিকালে বরকল উপজেলার ভুষণছড়া ইউনিয়নের অজ্যেংছড়িতে পানির তোড়ে ভেসে গিয়ে বিজুরাম চাকমা নামে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন।

বাঘাইছড়ি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে সদরসহ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বহু বাড়িঘর, ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট। ওই সব এলাকার দুর্গত লোকজন এখন আশ্রয় কেন্দ্রে।

লালমনিরহাট ও ডিমলা: লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় জেলার হাতীবান্ধায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার (৫২.৮৫ সেন্টিমিটার) উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে থাকে। প্রবল পানির চাপে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেয়া হয়েছে। তবে যে হারে পানি বাড়ছে তাতে করে প্রবল বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাশাপাশি কিছু পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রমতে, তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানির বিপদসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫২.৬০ সেন্টিমিটার। সেখানে বৃহস্পতিবার সকালে পানি প্রবাহ ছিল ৫২.৬২ সেন্টিমিটার। যা বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার ৫টি উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও চরাঞ্চলের কিছু কিছু পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

বান্দরবান: তৃতীয় দিনের মতো বান্দরবানের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে বান্দরবান সদরে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চলের কয়েকশ’ ঘরবাড়ি। সাঙ্গু নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় খোলা ১২৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন সাত শতাধিকেরও বেশি লোকজন। অব্যাহত ভারি বর্ষণে পাহাড় ধসের শঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো ছেড়ে লোকজনদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। এছাড়া লামা উপজেলার মাতামুহুরী নদীর দু’কূলবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ১০ হাজারের মতো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

খাগড়াছড়ি: চেঙ্গী ও মাইনী নদীতে পানি বেড়ে যাওয়া জেলার প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। খাগড়াছড়ির মহলছড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এছাড়া দীঘিনালার মেরুং এলাকায় পানি বেড়ে যাওয়ায় খাগড়াছড়ির দীঘিনালার সঙ্গে রাঙ্গামাটির লংগদুর সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। খাগড়াছড়ির আলুটিলা এলাকায় পাহাড়ের মাটি ধসে পড়লেও ঢাকা ও চট্টগ্রামে সঙ্গে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

টানা বৃষ্টিতে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, পানছড়ি ও দীঘিনালার নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলা শহরের বেশকিছু এলাকায় ব্রিজ-কালভার্ট ভেসে গেছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে দীঘিনালার মেরুং বাজার। বাজার তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার): বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অবিরাম বৃষ্টি শুরু হয়।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়ক ধরে বেশ কিছু গাছ শিকড়সহ উপড়ে পড়ে। সড়কের ওপর গাছ পড়ায় কমলগঞ্জের সঙ্গে শ্রীমঙ্গলের সড়ক যোগাযোগ দুপুর ১টা থেকে বন্ধ রয়েছে।

রংপুর: রংপুর অঞ্চলে নদ-নদীর চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলোর আবাদি জমি, বসতবাড়ি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার। মূষলধারে বৃষ্টি আর উজানের ঢলে তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, করতোয়া, যমুনেশ্বরী নদীতে পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা, সুন্দরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, উলিপুর, রৌমারী, চিলমারীসহ রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ডুবে গেছে। পানিবন্দি প্রায় ৩০ হাজার পরিবার তীব্র খাবার সংকটে পড়েছে। তিস্তার পানিতে ডুবে গেছে ফসলের ক্ষেত, দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।

পানির কারণে প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে পারছেন না মানুষজন। জন-জীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। এতে বড় সমস্যায় পড়েছেন শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীরা। চারদিকে পানির কারণে গবাদি পশু নিয়ে বিপদে পড়েছেন চরাঞ্চলের খামারি ও চাষিরা।

এদিকে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের অভিযোগ, এখনও মেলেনি কোনো সরকারি সহায়তা। তবে স্থানীয় জেলা প্রশাসনের আশ্বাস, দুর্গত এলাকার তালিকা তৈরি করে ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

ধোবাউড়া (ময়মনসিংহ): ধোবাউড়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার। সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় লোকজন পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

নেতাই নদীর পাড় ভেঙে কয়েকটি ঘর পানিতে ভেসে গেছে। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। পানি উঠে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। উপজেলার দুধনই রাউতি রাস্তায় খালের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রবল স্রোতে রাস্তাটি ভেঙে যায়। এতে সাধারণ মানুষ চলাচল করতে পারছেন না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানান, প্রায় ১০০ হেক্টর বীজতলা পানির নিচে নিমজ্জিত রয়েছে।

সুনামগঞ্জ, তাহিরপুর ও দেয়ারাবাজার: ৬টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে জনপদের দিকে ধাবিত হচ্ছে বানের পানি। জেলার প্রধান নদী সুরমার পানি বিকালে বিপদসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঢল ও বর্ষণে জেলার অন্তত ১৮৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়/মাদ্রাসায় বন্যার পানি প্রবেশ করার খবর পাওয়া গেছে।

এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় পাঠদান সাময়িক ভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে। দোয়ারাবাজার উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৫০ গ্রামের লাখো মানুষ।

উপজেলার হাওরগুলো তলিয়ে গেছে। তাহিরপুর উপজেলায় পানিবন্দি পরিবারের লোকজনের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলার বড়দল উত্তর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান বুধবার দুপুর থেকে মধ্যরাত অবধি পঁচিশ গ্রামের লোকজনের মধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নৌকায় এসব শুকনো খাবার বিতরণ করেন।

সুনামগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দি লোকজনকে সরকারি সহায়তা হিসাবে ৩০০ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া চলমান সমস্যা মোকাবেলায় জরুরি খাদ্য সহায়তা হিসেবে ১২৬৫ প্যাকেট শুকনা খাবার এবং নগদ ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।