ধর্ষণ মামলায় মেয়রপুত্র আবারো কারাগারে

ধর্ষণ মামলায় মেয়রপুত্র আবারো কারাগারে

শরীয়তপুরের জাজিরা পৌরসভার মেয়র ইউনুছ ব্যাপারীর ছেলে মাসুদ ব্যাপারীকে কলেজছাত্রী ধর্ষণ মামলায় আবারো কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে হাজির হলে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন জেলা ও দায়রা জজ প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস।

গত সোমবার এ মামলায় একই আদালতের একজন ভারপ্রাপ্ত নারী বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাসুদ ব্যাপারীকে অন্তবর্তীকালীন জামিন দেন।

এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মির্জা হযরত আলী বলেন, ‘ধর্ষণ মামলার আসামিকে ওই দিন জামিন দেওয়ার বিরোধিতা করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। কিন্তু আদালত তা আমলে নেননি। তখন আদালতের কাছে রাষ্ট্রপক্ষ অসহায় হয়ে পড়ে। গুরুতর অপরাধের মামলার আসামিকে দ্রুত সময়ে জামিন দেওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। ’

তিনি আরো জানান, বৃহস্পতিবার মাসুদ আদালতে হাজির হলে জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষ। তখন দায়রা ও জজ আদালতের বিচারক জামিন বাতিল করে মাসুদকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

পুলিশ জানায়, গত ২৯ জুন রাতে ওই কলেজছাত্রী ধর্ষণের শিকার হন। ঘটনার দিন মাসুদ তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার কথা বলে ওই ছাত্রীকে বাড়িতে আসতে বলেন। ওই ছাত্রী রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের কাজ শেষ করে সন্ধ্যা ৭টার দিকে মাসুদের বাড়িতে যান। সেখানে মাসুদের পরিবারের কাউকে না দেখে ওই ছাত্রী ফিরে আসার চেষ্টা করেন। তখন মাসুদ তাকে ঘরে আটকে রেখে দুই দফা ধর্ষণ করেন।

ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে ওই ছাত্রীকে হত্যার চেষ্টা করেন মাসুদ। পরে ওই ছাত্রী সেখান থেকে পালিয়ে আসেন। মাসুদের বাড়ি থেকে বের হয়ে চিৎকার করলে ওই মহল্লার কয়েকজন নারী তাকে উদ্ধার করেন। পরে তার পরিবারের সদস্যরা রাত ১০টার দিকে তাকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা করান। রাতেই তাকে বাড়ি নেওয়া হয়।

পুলিশ আরো জানায়, এ ঘটনায় ৩০ জুন দুপুরে জাজিরা থানায় মাসুদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন ওই ছাত্রী। এর পরের দিন আদালতের মাধ্যমে মাসুদ ব্যাপারীকে শরীয়তপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর গত রোববার তার জামিনের আবেদন করা হয় শরীয়তপুর জেলা আমলি আদালতে।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। আমলি আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন জামিন ও রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী জয়নব আক্তার ইতি পরেরদিন জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিস আপিল করেন। তিনি ওই দিনই আরেক আবেদনে আসামির জামিন প্রার্থনা করেন। এরপর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মরিয়ম মুন মঞ্জুরি জামিন আবেদন মঞ্জুর করে তাকে অন্তবর্তীকালীন জামিন দেন।

এরপর বৃহস্পতিবার দুপুরে মাসুদ ব্যাপারী আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। পরে শরীয়তপুর জেলা ও দায়রা জজ তাকে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্রী বলেন, ‘মাসুদ আমার আত্মীয় হন। তারপরও ধর্ষণ করতে পিছ পা হননি। আমি তার পায়ে ধরে কেঁদেছি, তারপরও রেহাই পাইনি। মামলা করার পর থেকেই চাপে রয়েছি। এরই মধ্যে মাসুদ জামিন পেয়ে যায়। এতে আমার শঙ্কা বেড়ে যায়। আমাকে মেরে ফেলে কি-না তা নিয়ে আমি হুমকিতে আছি। তাকে আবার কারাগারে পাঠানোর ফলে কিছুটা শঙ্কামুক্ত আছি। আমি তার উপযুক্ত বিচার চাই।’

এমআই