বড় ভাইয়ের হাত ফসকে ট্রেনের নিচে পড়ে ছোট ভাইয়ের করুণ মৃত্যু

বড় ভাইয়ের হাত ফসকে ট্রেনের নিচে পড়ে ছোট ভাইয়ের করুণ মৃত্যু

তাহের আলীর বয়স ৩০ পেরিয়ে গেলেও দেখা হয়নি রাজধানী ঢাকা। বাড়ি সীমান্তবর্তী এলাকা নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থানার দক্ষিণ রাজিবপুর গ্রামে। বাবা এনামুল কবির পেশায় কৃষক। বড় ভাই দেলোয়ার চাকরি করেন রাজধানী ঢাকার বেক্সিমকোতে। ছোট ভাইকে ঢাকা দেখাবেন বলে ডেকে নিলেন ব্যস্ত নগরীতে। যতটা পারলেন সময় দিলেন ছোট ভাইকে। ঢাকা দর্শন শেষে ছুটিও মিললো বড় ভাই দেলোয়ারের। বাড়ির উদ্দেশ্যে তাই শুক্রবার দুই ভাই চেপে বসলেন নীলফামারীগামী রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে।

কিন্তু একটানা ট্রেনের গুমোট পরিবেশ ভাল লাগছিল না তাদের। তাই একটু খোলা হাওয়ার পরশ পেতে দাঁড়িয়েছিলেন ট্রেনের খোলা দরজার পাশে। বড় ভাইয়ের হাতে হাত রেখে খোলা দরজার পাশে বসলেন তাহের।

এই অবস্থায় আচমকা এক ঝাঁকিতে বড় ভাই দেলোয়ারের হাত থেকে ছুটে গেলেন তাহের। পড়লেন ট্রেনের নিচে। ট্রেনটি পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার কৈডাঙ্গা গ্রামে পৌঁছলে এ ঘটনা ঘটে। পাশেই বড়ালব্রিজ রেলওয়ে স্টেশন। যাত্রা বিরতি না থাকায় ট্রেন থেকে নামার জন্য পনের কিলোমিটার দূরের চাটমোহরে স্টেশন পর্যন্ত যেতে হবে দেলোয়ারকে। ছোট ভাইকে রেখে অসহায় দেলোয়ার দূরে সরে যেতে থাকলেন।

এদিকে, দুপুর দেড়টার দিকে কৈডাঙ্গা গ্রামের লোকজন ট্রেন থেকে তাকে পড়তে দেখেন। এগিয়ে আসেন তারা। সেখানে উপস্থিত কয়েকজন যুবক তাকে অচেতন অবস্থায় দ্রুত ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক আহতের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন বুঝতে পেরে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদর হাসপাতালে রেফার করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে জেলা সদর হাসপাতালের দূরত্ব ৪৭ কিলোমিটার।

আহত যুবকের পকেটে একটি বন্ধ মোবাইল পাওয়া যায়। পড়ে যাওয়ায় সেটি ভেঙে গেছে। ওই মোবাইল থেকে সিমকার্ড খুলে উদ্ধারকারীদের একজনের নিজের মোবাইলে লাগাতেই দেলোয়ারের কল আসে। তিনি তখন শোকে প্রলাপ করছেন।

দেলোয়ার চাটমোহর স্টেশনে নেমে স্থানীয় লোকের সহায়তায় ছুটে চলেন ভাইকে খুঁজতে। পথিমধ্যে দেখা হয় অচেতন তাহেরকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে। রাস্তা থেকে তাকেও তুলে নেয়া হয়। ত্রিশ মিনিট পর তারা পৌঁছলেন পাবনা সদর হাসপাতালে। কিন্তু ডাক্তারদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে তাহের চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ভাইয়ের হাত ধরে তার আর মায়ের কোলে ফেরা হল না তার।

ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার আবদুুর রহমান জানান, যুবকের মাথায় বড় ধরনের ইনজুরি ছিল। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে পাবনা সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই। পরে জানতে পারি তিনি মারা গেছেন। মুঠোফোনে তাহেরের দুলাভাই লিয়াকত জানান, আজ (শনিবার) সকাল দশটায় তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

এমআই