উত্তরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বানভাসীদের খোঁজ নেয়নি কেউ

উত্তরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বানভাসীদের খোঁজ নেয়নি কেউ

প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উত্তরের তিস্তা নদীর পানিতে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভাষ্যমতে, ব্যাপক হারে পানি আসছে। ফলে ফুলছড়ি পয়েন্টে যমুনা নদীতে এখন বিপদ সীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, শনিবার ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার, তিস্তা ৯ সেন্টিমিটার, ও ঘাঘট নদীর পানি ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া যমুনা, ও করতোয়া নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। ফলে সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা এবং সদর উপজেলায় নদী তীরবর্তী ও বিভিন্ন চরাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ওইসব এলাকার বিভিন্ন ফসলী জমি ও রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলের নিচু এলাকাগুলো তলিয়ে যাওয়ায় সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

এদিকে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর উড়িয়া, কাবিলপুর, গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারী, গলনা, ফুলছড়ি ইউনিয়নের দেলুয়াবাড়ী, ফজলুপুর ইউনিয়নের পূর্ব খাটিয়ামারী, উজালডাঙ্গা, বাজে তেলকুপি, এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের হরিচন্ডি, জিগাবাড়ী, সন্যাসীর চর এবং সুন্দরগঞ্জের হরিপুর, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর ইউনিয়নের বেশকিছু এলাকায় তিস্তার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
গত এক সপ্তাহে ফুলছড়ি ও সুন্দরগঞ্জের ওইসব এলাকায় শতাধিক পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে।

ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজ জানান, সদর উপজেলার রায়দাসবাড়ি, ফুলছড়ি উপজেলার দেলুয়াবাড়ি, জামিরা, গজারিয়া ইউনিয়নের গলনা, ফজলুপুর এখন বন্যা কবলিত। এই সমস্ত এলাকায় নদী ভাঙনও তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ পর্যন্ত এলাকার ১২০টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, নদীর পানি যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে ঘাঘট, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর বাঁধ হুমকির মুখে পড়বে। পাহাড়ি ঢলে ও প্রবল বর্ষণে কুড়িগ্রামের ধরলা, তিস্তা এবং দুধকুমার নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও অন্তত: ৩০টি চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কুড়িগ্রামের রৌমারী, রাজিবপুর, চর ডাকাতিয়া এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুর, বেলকা, কাপাসিয়া, কামারজানি, মোল্লারচর, চরকালাসোনা, উড়িয়া, রতনপুর, রায়দাসবাড়ি, কীর্তনের পাড়া, এরেন্ডাবাড়ীসহ ৪৪ টি চরের বিস্তীর্ণ এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে।

এসব এলাকার অন্তত ৫০ হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। পানিবন্দি লোকজন তাদের গবাদী পশু বাঁচাতে উঁচুস্থান ও নদী পার করে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। মানুষজন বাড়িতে থাকলেও তাদের বিছানা উঁচু করে কোনমতে মানবেতর জীবন অতিবাহিত করছেন।

মোল্লার চরের চেয়ারম্যান জানান, পানিবন্দি অনেক মানুষ নানা অসুবিধায় আছেন। কেউ খোঁজ নিতে আসেনি। তারা কিভাবে দিনযাপন করছে, তাও জানে না প্রশাসন। পানিবন্দি দূর্গত মানুষ যোগাযোগ ব্যবস্থার মারাত্বক সমস্যার কারণে মলমুত্র ত্যাগ ও খাবার সঙ্কটে পড়েছে। বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে বেশ কিছুদূর থেকে। ভারী বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধার নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

দুর্গত এলাকায় জরুরি ত্রাণ বিতরণের প্রয়োজন হলেও প্রশাসনের লোকজন এমনকি চেয়ারম্যান মেম্বারও ওইসব এলাকায় মানুষের খোঁজ খবর নিতে যাননি। বৃষ্টি আর পানি বৃদ্ধির কারণে লোকজন রান্না করতে পারছে না। ফলে একদিন রান্না করে দু’দিন-তিনদিন খাচ্ছে।

গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় জানান, বন্যা দূর্গত মানুষের জন্য আজ গাইবান্ধার গোঘাট ও রায়দাসবাড়ি এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করছেন। তারা বন্যা দূর্গত মানুষের খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য আজ ব্রহ্মপুত্র নদী এলাকায় যাবেন।

এমআই