বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণের জন্য হাহাকার

বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণের জন্য হাহাকার

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে পানিবন্ধী পরিবারগুলোতে।

পানিবন্দী হওয়ায় মানুষজন বাড়ি থেকে বের হতেও পারছে না। বন্যা কবলিত গ্রামগুলোতে অবস্থানকারী মানুষজন ত্রাণের জন্য অপেক্ষায় আছে। ত্রাণ না পাওয়ায় হাহাকার বিরাজ করছে।

এদিকে কিছু কিছু গ্রামে সরকারিভাবে, ব্যক্তিগত উদ্যোগে অর্থ, শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় খুবই সামন্য। সরকারী ত্রাণ দেয়া হচ্ছে এমন খবর পেলেই ছুটে আসছে দলে দলে ক্ষতিগ্রস্থরা।

কথা হয় তাহিরপুর উপজেলা সদরে সরকারি সহযোগিতা নিতে আসা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ রতনশ্রী গ্রামের বাসীন্দা ফিরোজা বেগমের সাথে। তিনি জানান, বসতভিটা ঢেউয়ের কবলে ভেঙ্গে পড়ায় তারা সবাই প্রতিবেশী ও নিকটাত্মীয়দের ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। ২ সপ্তাহ ধরে স্বামীর বাড়ি বন্যায় পানিতে ডুবে যাওয়ায় তিনিও এখন বাবার বাড়িতে উঠেছেন। কিন্তু কোন সরকারি সহযোগিতা পাচ্ছেন না। ছেলে মেয়ে নিয়ে বড় অসহায় অবস্থায় আছেন।

গবিন্দশ্রী গ্রামের কালা মিয়া(৭৮) জানান, ‘তার বাড়ি পানিতে পুরোপুরি ডুবে গেছে। কিন্তু কোন সহযোগিতা পাইনি। উপজেলার ভূমি অফিসে ত্রাণ দিচে শুনে আইয়া লাইনে দাঁড়াইছি পরে প্যাকেট দেওয়া বন্ধ করে দিছে। উপার্জন করার ক্ষমতা নাই সরকারিভাবে কিছু সহযোগিতা পাইলে বড় বেশী উপকার হইত।’


একই কথা জানালেন উপজেলার শুবলাগাঁও গ্রামের বিধবা নারী সমলা বেগম(৬৬)। তিনি জানান, স্বামী ছেলে কেউ নাই। মেয়ে ছিল তাদের বিয়ে দিয়েছি তারা এখন স্বামীর বাড়িতে। বন্যায় বাড়ি পানির নিছে। কিন্তু কোন সহযোগিতা পাচ্ছি না।

তিনি ক্ষোভের সাথে জানান, ‘ভূমি অফিসে (১৫ জুলাই) দুপুরে সরকারী ত্রাণ দিতাছে শুনে আইছি কিন্তু পাইলাম না। ৩-৪ জনরে দিয়া বন্ধ কইরা দিছে’।

একেই কথা জানান, ভাটি তাহিরপুর গ্রামের সাজিদা বেগম(৭০) ও গুলনাহার। তারা জানান, সব জায়গায় সরকারী সহযোগিতা দিতাছে। আমি পাইলাম না কবে পাইমু। সবাইত পায়। কাজ করার মত শক্তি নাই এখন সরকারি সহায়তা পাইলে একটু ভালা হইত। উপজেলা সরকারিভাবে ত্রাণ দিতাছে শুইন্না আইয়া দেখি সবাই লাইনে দাড়ায়ে ত্রাণ দিতাছে। পরে বন্ধ করে দিছে। কথাগুলো বলছিলেন সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার কয়েটি গ্রামের বাসীন্দারা।

উপজেলার হাওড়পাড়ের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, হাওড়ের প্রবল ঢেউয়ের আঘাতে তাদের বসত বাড়ি ভেঙ্গে নিশ্চিহ্ন হবার পথে। পরিবার পরিজন নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় ত্রাণ পাচ্ছেন না।

তাহিরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিলন কান্তি তালুকদার জানান, উপজেলার শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নে ৩টি, শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নে ৩টি, বালিজুড়ি ইউনিয়নে একটি ও বাদাঘাট ইউনিয়নের সোহালা গ্রামে একটি বন্যাশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণাসিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পরিমাণ বেশী। ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে তা পরিমানে কম।

এব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, তাহিরপুরের মানুষ বারবার ফসল হারিয়ে দিশেহারা এবং সাম্প্রতিক বন্যায় মানুষের বসতভিটা, রাস্তাঘাট ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সকলেই দিশেহারা। ত্রাণের পরিমান বাড়ানো খুবই প্রয়োজন।

তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন জানান, তার ইউনিয়নে দুইশতাধিক পরিবার এখনও পানিবন্ধী রয়েছে। এসব পরিবারে যে পরিমাণ চাহিদা তার ২ শতাংশ সরকারি সহযোগিতা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থরা প্রতিদিনই আমার কাছে এসে সহায়তা চাচ্ছে, কিন্তু আমি দিতে পারছি না। আমি জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে দাবী জানাই, যত দ্রুত সম্ভব আমার ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তার করার জন্য যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

এমজে/