মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কা, বর-কনেসহ নিহত ১১

আনন্দ যেখানে পরিণত হলো বিষাদে!

আনন্দ যেখানে পরিণত হলো বিষাদে!

দুজনেরই স্বপ্ন ছিলো নতুন ঘর বাঁধার। হাতে হাত রেখে জীবনকে ভাগাভাগি করে নেবার। সে স্বপ্ন আর পূরণ হলোনা রাজন আর সুমাইয়ার। রেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের সঙ্গে বরবাহী মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে বিয়ে পরিণত হলো বিষাদে!

ঘটনাটি ঘটেছে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়। সোমবার বিকাল সাড়ে ৬টার দিকে বিয়ের গাড়িবহরের একটি মাইক্রোবাসে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় বর ও কনেসহ ১১ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও ট্রেনের সামনে থেকে ছিটকে পড়ে ও মাইক্রোবাসে থাকা কয়েকজন আহত হয়েছেন। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা দাগ কেটেছে সবার মনে। নিহতদের বাড়িসহ আশ-পাশের এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

সিরাজগঞ্জ জিআরপি থানার ওসি হারুন মজুমদার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আহতদের সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

নিহতরা হলেন- বর রাজন হোসেন (২৫) সিরাজগঞ্জ জেলা সদরের কান্দাপাড়া গ্রামের আলতাব হোসেনের ছেলে এবং উল্লাপাড়ার চরঘাটিনায় কনে সুমাইয়া খাতুনের (২০), বরের মামাতো ভাই শিশু আলিক (১০), মাইক্রোবাস চালক কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল এলাকার মন্টু সেখের ছেলে স্বাধীন (৩০), বরযাত্রী শহরের রামগাতি মহল্লার আব্দুল মতির ছেলে আব্দুস সামাদ (৫০), তার স্ত্রী হাওয়া বেগম (৪৫), ছেলে শাকিল (২০), কালিয়া হরিপুর চুনিয়াহাটির মৃত মহির উদ্দিনের ছেলে ভাষান সেখ (৫৫), শহরের সয়াধানগড়া মহল্লার সুরুত আলীর ছেলে আব্দুল আহাদ (২৫) এবং নূর আলম (৩৫)।

স্থানীয়রা জানান, বরযাত্রীসহ মাইক্রোবাসটি উল্লাপাড়ার ঘাটিনা থেকে সিরাজগঞ্জ জেলা সদরের কান্দাপাড়ায় যাচ্ছিল। সলপ স্টেশনের উত্তরে পঞ্চক্রোশী আলী আহম্মদ উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে উন্মুক্ত লেভেল ক্রসিং পারাপারের সময় মাইক্রোবাসটির সঙ্গে ট্রেনের ধাক্কা লাগে।

সন্ধ্যার পর সিরাজগঞ্জ জিআরপি থানার ওসি হারুন মজুমদার জানান, শুনেছি ৯ জন মারা গেছেন।

অরক্ষিত রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং-এর কারণেই এ দুর্ঘটনাটি ঘটে বলে জানিয়েছেন উল্লাপাড়া থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. গোলাম মোস্তফা। তিনি জানান, উন্মুক্ত লেভেল ক্রসিং পারাপার হওয়ার সময় বিয়ের গাড়িবহরের একটি মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই বেশ কয়েকজন মারা যান। রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং-এ কোনও ব্যারিয়ার বা বার্জ ছিল না। এমনকি সেখানে রেল বিভাগের কোনও পাহারাও ছিল না। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগের পাকশীর বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মিজানুর রহমান জানান, এটা রেল বিভাগের নির্ধারিত কোনও লেভেল ক্রসিং নয়। স্থানীয় লোকজন নিজেদের স্বার্থে চলাচলের জন্য সেখানে উন্মুক্ত রেখেছে। দুর্ঘটনার পর দেড়ঘণ্টা দেরিতে ট্রেনটি ছেড়ে ঢাকার দিকে গেছে। এছাড়াও দুর্ঘটনার জন্য মাইক্রোবাস চালকের অস্থিরতাকে দায়ী করে তিনি বলেছেন, ‘ট্রেন দেখার পরও তাড়াহুড়া করে রেল লাইন পার হওয়ার চেষ্টার কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে।’

সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রোকনউজ্জামান জানান, আহত অবস্থায় তিন জনকে হাসপাতালে আনা হলে আব্দুল আহাদ মারা যায়। আহতদের মধ্যে সুমনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। নাজমুল আহসান নামে একজন অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

জিএস/