তিন সপ্তাহে হাসপাতালে সাড়ে ৪ হাজার ডেঙ্গু রোগী

তিন সপ্তাহে হাসপাতালে সাড়ে ৪ হাজার ডেঙ্গু রোগী

রাজধানীজুড়ে এখন চলছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। এই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ৬ মাসে যে পরিমাণ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, চলতি মাসের গত ২১ দিনে তার সংখ্যা দ্বিগুন হয়ে গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মোট ২ হাজার ১১১ জন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু চলতি মাসের গত ২১ দিনেই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৪৩৩ জন।

সরকারি প্রতিষ্ঠানের এই হিসাবই বলে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। কিন্তু সে অনুযায়ী ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের কার্যকরী কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না বলে জানিয়েছেন নগরবাসী। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রাজধানীতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত যারা হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন তাদের তথ্য সংগ্রহ করছে । রাজধানীর সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ৪৭টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান থেকে এই তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের তথ্যানুযায়ী, রাজধানীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৮৫ জন। গত ১ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত মাত্র তিন সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৪৩৩ জন।

এছাড়া বর্তমানে আক্রান্ত ১ হাজার ৫৫৮ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এপ্রিল থেকে অক্টোবর ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশার উপদ্রব বাড়ে। কিন্তু এবার ফেব্রুয়ারিতে আগাম বৃষ্টি হওয়ায় মশার উপদ্রব আগে থেকেই বেড়েছে। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকায় এডিস মশার প্রজনন বাড়ে। ডেঙ্গু আর চিকুনগুনিয়া জ্বর থেকে বাঁচতে এডিস মশা যাতে বংশবিস্তার করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাড়ি বা আঙিনায় কোথাও যেন পানি জমে না থাকে, সে ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুুল্লাহ বলেন, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এখন অনেক ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছেন। আমরা প্রাইভেট চেম্বারেও ডেঙ্গু রোগী পাচ্ছি। যেসব রোগীর প্লাটিলেট ১ লাখের নিচে তাদের হাসপাতালে ভর্তি পরামর্শ দেওয়া হয়। আর যাদের প্লাটিলেট ১ লাখের বেশি তাদের ২৪ ঘণ্টা বা দুইদিন পর রক্ত পরীক্ষা করে প্লাটিলেট দেখার পরামর্শসহ প্রেসক্রাইব দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ বলেন, এখন জ্বর হলেই ডেঙ্গুর বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। কারণ কোনো রোগীর প্লাটিলেট ১ লাখের নিচে এলে তাকে ডেঙ্গু হেমরেজিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ডেঙ্গু হেমরেজিক হলে বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ (মাড়ি, নাক অথবা মলের সঙ্গে) রক্তক্ষরণ শুরু হয়। মল ও প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত গেলে সেটি রোগী হয়তো বুঝতে পারে না। অধিক রক্তক্ষরণের ফলে অনেক রোগী শক সিনড্রোমে চলে যায়। এতে রোগীর শরীরের জলীয় উপাদান কমে যায়, রোগীর পালস পাওয়া যায় না, লিভার, কিডনি, ব্রেনসহ বিভিন্ন অঙ্গ আক্রান্ত হয়। একপর্যায়ে রোগীর হার্টফেইলিওর, ব্রেন হেমারেজ, কিডনি বিকল হয়ে যায়। ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হলে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, কেউ জ্বরে আক্রান্ত হলে ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং পরীক্ষা করতে হবে। কোনোভাবেই দেরি করা যাবে না। অনেক রোগী আছেন এক হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আরেক হাসপাতালে যাচ্ছেন ভর্তির জন্য, এটি বন্ধ করতে হবে। ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এতে আক্রান্তদের চিকিৎসা প্রদানে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।

এমজে/