মশা মারার টাকায় বিদেশ ভ্রমণে ডিএসসিসির কর্মকর্তারা

মশা মারার টাকায় বিদেশ ভ্রমণে ডিএসসিসির কর্মকর্তারা

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) বিভিন্ন ওয়ার্ডে ডেঙ্গুবাহী এডিস ও কিউলেক্স মশা মারার ওষুধের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। মশার ওষুধ কম ছিটিয়ে সেই টাকায় ডিএসসিসির কর্তা ব্যক্তিরা বিদেশে প্রমোদ ভ্রমণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বৃদ্ধির ফলে, ওষুধের গুণগতমান খারাপ, নিয়মিত ওষুধ না ছিটানো এবং মশক নিধন কার্যক্রম মনিটরিং না করার অভিযোগের অনুসন্ধানে নেমে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা জানতে পারেন, মশক নিধনের জন্য বরাদ্দ টাকা খরচ করে কর্মকর্তাদের অনেকেই বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছেন।

অভিযোগ উঠেছে, মশা মারার টাকায় গত চার বছর ধরে কর্মকর্তারা বিভিন্ন দেশে ঘুরছেন। যে মুহূর্তে সারা দেশে ডেঙ্গুর মারাত্মক প্রকোপ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে, ডেঙ্গুতে মানুষ মারা যাচ্ছে, সেখানে এই মুহূর্তে ডিএসসিসির মশক নিবারণী দফতরের একজন উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা বিদেশ ভ্রমণে রয়েছেন।

নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মশক নিধনের জন্য বরাদ্দ বাজেটের টাকা নয়-ছয় হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে দুদকের একটি তদন্ত দল। দলটি ডিএসসিসির কাছে গত চার বছরের বাজেট ও ব্যয় বরাদ্দের হিসাব চেয়েছে। দুদকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, মশক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করার অভিযোগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং মশক নিবারণ দফতরে (লালবাগ, ঢাকেশ্বরী মন্দির এলাকায়) একই টিমের মাধ্যমে দুটি পৃথক অভিযান পরিচালনা করেছে দুদক। দুদক অভিযোগ কেন্দ্রে আসা এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রধান কার্যালয় থেকে মঙ্গলবার এ অভিযান পরিচালিত হয়।

দুদক টিম প্রথমে ঢাকা মশক নিবারণী দফতরে অভিযান পরিচালনা করে। দফতরের প্রধান কর্মকর্তাকে অনুপস্থিত পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে উক্ত দফতরে মজুদ মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত ঔষধের ড্রাম খালি অবস্থায় পাওয়া যায়, যা অস্বাস্থ্যকর এবং মশার বিস্তারে সহায়ক। গোডাউনে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং মশার অবাধ বিস্তার ও বিচরণ লক্ষ্য করে দুদক টিম।

পরবর্তীতে টিম ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে। টিম জানতে পারে, মশা নিধনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে মশার ওষুধ ধার নিয়ে ব্যবহার করছে। দুদক টিম আরও লক্ষ্য করে, দেশব্যাপী ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ হারে বাড়লেও আগে যে হারে ওষুধ ব্যবহার করা হতো সেই একই হারে এখনও ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে।

এ প্রেক্ষিতে গত চার বছরে কী পরিমাণ মশার ওষুধ ক্রয় করা হয়েছে এবং সেগুলো কী হারে ব্যবহার করা হয়েছে, তা আগামীকালের (৭ আগস্ট) ভেতরে জানানোর জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে অনুরোধ জানিয়েছে অভিযান পরিচালনাকারী টিম।

দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী জানান, মশা মারার ওষুধের বাজেটের টাকায় ডিএসসিসির বেশকিছু কর্মকর্তা গত চার বছর বিদেশে গিয়েছেন। সেখানে তারা কী জন্য গিয়েছেন, কতো টাকা খরচ হয়েছে, সেই দেশে গিয়ে মশক নিধনের কী উপকার হয়েছে তা খুঁজে দেখা হবে বলে জানান দুদকের এই কর্মকর্তা।

ডিএসসিসির ভান্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা (পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ) মো. লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘মশার ওষুধ কেনা হয়েছে। সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। বিদেশে প্রশিক্ষণে যাদের পাঠানো হয়েছে তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে গেছেন।’ তবে মশার ওষুধের টাকায় গেছেন কি না তা তিনি জানেন না বলে মন্তব্য করেন।

এমআই