ত্যাগের মহিমা ও উৎসব আমেজে পবিত্র ঈদুল আযহা

ত্যাগের মহিমা ও উৎসব আমেজে পবিত্র ঈদুল আযহা

ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে দুয়ারে হাজির হয়েছে দেশের মুসলিমদের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। তবে, দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবে এবারের ঈদ উদযাপনে কিছুটা শঙ্কা বিরাজ করছে।

ইসলাম ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহান আল্লাহ নবী হযরত ইব্রাহিমের ইমানের পরীক্ষা নেয়ার জন্য তার একমাত্র ছেলে হযরত ইসমাইলকে কোরবানি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। নবী ইব্রাহিমের সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার স্মরণে এ দিন সচ্ছল মুসলিমরা পশু কোরবানি করে থাকেন।

দেশের মুসলিমরা সকালে ঈদগাহে নামাজ আদায় এবং দেশ ও জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত শেষে বাড়ি ফিরবেন এবং পশু কোরবানি দেবেন।

রাজধানী ঢাকা, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ও দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ বড় ময়দানসহ সারা দেশে ঈদের জামাত আয়োজনের জন্য ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে দেশের প্রধান ঈদ জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। নামাজে ইমামতি করবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান। এতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সর্বস্তরের মানুষের সাথে ঈদের নামাজ আদায় করবেন।

বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদুল আজহার পাঁচটি জামাত হবে। প্রথম জামাত সকাল ৭টায়, দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায়, তৃতীয় জামাত সকাল ৯টায়, চতুর্থ জামাত সকাল ১০টায় এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে হবে।

জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে নারীদের নামাজ আদায়ের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকবে।

এদিকে, দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণভাবে ঈদুল আজহা পালনের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীগুলো পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। সেই সাথে তাদের সড়ক, নদী ও রেলপথে যান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

শহরের প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা এবং বাংলা ও আরবিতে ‘ঈদ মোবারক’ লেখা ব্যানারে সজ্জিত করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে কারাগার, হাসপাতাল, সরকারি শিশু কেন্দ্র, ছোটমনি নিবাস ও আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে।

বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও স্টেশনগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে।

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীসহ বিশ্বের সব মুসলিমদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, কোরবানি আত্মদান ও আত্মত্যাগের মানসিকতা সৃষ্টি করে এবং আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সাথে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেয়ার মনোভাব ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়।

বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, আবহমানকাল থেকে বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে নিজেদের ধর্ম ও আচার-অনুষ্ঠান জাঁকজমকের সাথে পালন করে আসছে। ‘এটা আমাদের সম্প্রীতির এক অনুপম ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্যকে সমুন্নত রেখে দেশ ও জাতির কল্যাণে তা কাজে লাগাতে হবে।’

রাষ্ট্রপতি সরকার নির্ধারিত স্থানে কোরবানি দেয়া ও বর্জ্য অপসারণে সবাইকে সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, ঈদুল আজহা শান্তি, সহমর্মিতা, ত্যাগ ও ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষা দেয়। ‘আসুন, আমরা সবাই পবিত্র ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’

প্রতিবারের মতো এবারও ঈদ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জীবনে সুখ ও আনন্দের বার্তা বয়ে আনবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।