গণতন্ত্রের সূচকে ৮ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ

গণতন্ত্রের সূচকে ৮ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ

ঢাকা, ১ ফেব্রুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)-এর গণতন্ত্রের সূচকে বাংলাদেশ মাত্র এক বছরে ৮ ধাপ পিছিয়েছে৷ এক দশকে এটা সর্বনিম্ন৷ বাংলাদেশের বিশ্লেষকরা এই সূচকে অবাক নন, বরং একে স্বাভাবিকই মনে করছেন৷

লন্ডনভিত্তিক ‘দ্য ইকোনমিস্ট' গ্রুপের গবেষণা ও বিশ্লেষণ বিভাগ ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট সূচকটি প্রকাশ করেছে বুধবার৷ তাতে বলা হয়, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের স্কোর ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে কমেছে৷ বাংলাদেশ ৮ ধাপ পিছিয়েছে৷ ২০১৭ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৯২তম এবং স্কোর ১০-এর মধ্যে ৫ দশমিক ৪৩৷ অথচ ২০১৬ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৮৪ তম এবং তখন স্কোর ছিল ৫ দশমিক ৭৩৷ ১৬৭টি দেশ নিয়ে সূচকটি তৈরি করা হয়েছে৷ বাংলাদেশ গণতন্ত্রের সূচকে ভারতের চেয়ে পিছিয়ে আছে৷ ভারতের অবস্থান ৪২তম৷

৫টি মানদণ্ড অনুসরণ করে ইকোনমিস্টের গবেষণাটি করা হয়েছে৷ মানদণ্ডগুলো হলো: নির্বাচনগুলো অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে কিনা, সরকারে ভারসাম্য আছে কিনা, জনগণকে রাজনীতিতে যুক্ত করা হয় কিনা, জনগণ তাদের সরকারকে সমর্থন করে কিনা এবং তারা মত প্রকাশের স্বাধীনতা পায় কিনা৷

গণতন্ত্রের সূচক নির্ধারণে সর্বোচ্চ স্কোর ১০৷ এর মধ্যে যাদের স্কোর ৮, তাদেরকে পূর্ণ গণতন্ত্রের দেশ বলে বিবেচনা করা হয়৷ ইকোনমিস্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশেরও কম মানুষ ‘পূর্ণ গণতন্ত্রের' মধ্যে থাকে৷

এবার সারা বিশ্বের সার্বিক গণতান্ত্রিক পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ইকোনমিস্ট৷ ২০১৬ সালে ১০ স্কোরের মধ্যে সারাবিশ্বের গড় অর্জন ছিল ৫ দশমিক ৫২৷ কিন্তু এবার সার্বিক গড় ৫ দশমিক ৪৮৷ মহাদেশগুলোর মধ্যে এশিয়া সার্বিক সূচকে নিচের দিকে রয়েছে৷ ১০ পয়েন্টের মধ্যে এশিয়ার গড় অর্জন ৫ দশমিক ৬৩৷

গণতন্ত্রের এই সূচকে আগের মতো এবারও শীর্ষস্থান দখল করেছে নরওয়ে৷ আর মাত্র ১ দশমিক ০৮ স্কোর নিয়ে সূচকের একদম নীচে রয়েছে উত্তর কোরিয়া৷

বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অবনমন নিয়ে ইকোনমিস্টের এই জরিপের সঙ্গে একমত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজউদ্দিন খান৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, আমি তাদের এই পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত৷ তাদের গবেষণায় বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সঠিক চিত্রই প্রতিফলিত হয়েছে৷

তিনি বলেন, গণতন্ত্র বাংলাদেশে একদম তলানিতে আছে৷ এখানকার সমাজ ব্যবস্থা, কাঠামো, সংস্কৃতি কোনো কিছুতেই গণতান্ত্রিক অগ্রগতি নাই৷ আমরা উন্নত হওয়ার বিপরীতে দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছি৷ এখানে মানবাধিকার নাই৷ এখানে আইনের শাসন নাই৷ সবকিছুতে দলীয়করন৷ ফ্রি ইলেকশন হয় না৷

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমাদের নিজেদেরই গণতান্ত্রিক হতে হবে৷ আপনাকে গণতান্ত্রিক হতে হবে৷ গণতন্ত্রের যে শর্তগুলো আছে, সেগুলো পূরণ করতে হবে৷ তাহলে আমাদের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির উন্নতি হবে৷

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, আমাদের দেশের সমাজের যেদিকেই তাকাই আইনের শাসন তো নাই৷ যেখানে মানুষকে তুলে নেয়া হয় আর খুঁজে পাওয়া যায় না, সেখানে মানবাধিকার কতটা আছে, তা নিয়ে তো প্রশ্ন করাই যায়৷ এটা যে খুব একটা উন্নত গণতান্ত্রিক সমাজ নয়, সেটা তো যে-কোনো সাধারণ মানুষই বলবে৷ মানুষের যে মর্যাদা, তা আইনের শাসন এবং মানবাধিকার রক্ষার মাধ্যমে সমুন্নত রাখতে হবে৷ সেই মর্যাদাই তো প্রশ্নের মুখে৷

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাধারণভাবে মনে হবে, সরকার বাকস্বাধীনতার বিরুদ্ধে কোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেনি৷ কিন্তু সব মিলিয়ে এমন একটা পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে যে, মানুষ কথা বলতে ভয় পায়৷ জোরে কথা বলে না৷ এক ধরনের সেল্ফ সেন্সরশিপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন নাগরিকরা৷

আর সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, বাংলাদেশ যে গণতন্ত্রের সূচকে ৮ ধাপ নেমেছে তাতে তো আশ্চর্য হওয়ার কিছু নাই৷ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর সরকার একটি অদ্ভূত তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছে৷ উন্নয়ন বনাম গণতন্ত্র৷ আমরা যদি বেশি উন্নয়ন চাই, তাহলে গণতন্ত্রকে ছাড় দিতে হবে৷ সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে উন্নয়নে, তাই আমরা গণতন্ত্রে পিছিয়ে গেছি, এটাই তো স্বাভাবিক৷ কিন্তু এটা ভ্রান্ত ধারণা৷ আমাদের গণতন্ত্রও দরকার, উন্নয়নও দরকার৷ দু'টো না হলে এই উন্নয়ন টেকসই হবে না৷ অমর্ত্য সেন যেমন বলেছেন, ডেভেলপমেন্ট ইজ ফ্রিডম৷ উন্নয়নের লক্ষ্যই হলো মানুষের অধিকার সম্প্রসারণ৷

তিনি আরো বলেন, আশা করি, সরকার তার ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে উন্নয়নকে বেগবান করার উদ্যোগ নেবে৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে।

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২০৫৭ঘ.)