বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের আক্ষেপ

‘মেনে নিন নয়তো দেশ ছেড়ে চলে যান’

‘মেনে নিন নয়তো দেশ ছেড়ে চলে যান’

ঘটনার ৭ দিন পর শ্লীলতাহানি ও মারধরের অভিযোগে মামলা করেছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষক রাশিদুল ইসলামের স্ত্রী।

তিনি শুক্রবার দুপুরে বোয়ালিয়া থানায় বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত ৪ তরুণ ও ৪ তরুণীকে। অবশ্য ঘটনার পরদিন গত রোববার সামাজিক মাধ্যমে বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ নিবারন চন্দ্র বর্মন বিষয়টি দেখতে পেয়ে নিজেই সাধারণ ডায়েরী করে রেখেছিলেন।

ঘটনা নিয়ে গত ১০ আগস্ট রুয়েটের শিক্ষক রাশিদুল ইসলাম তার ফেসবুক ওয়ালে বিস্তারিত জানান। “মেনে নিন নয়তো দেশ ছেড়ে চলে যান” শিরোনামে তার পোস্টটি এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো–

“এদেশে আপনার চোখের সামনে আপনার মা, বোন অথবা বউ ধর্ষিত হলেও প্রতিবাদ করবেন না, আশেপাশে কাউকে পাবেন না। মার খেয়ে মরবেন। কারণ আপনি একটা জানোয়ার, আমিও একটা জানোয়ার, জানোয়ারে ভরা সমাজ আমাদের।

আজকের ঘটনাটা সংক্ষেপে বলি। সাহেব বাজার মনিচত্তর এর মত জনবহুল এলাকাতেও আমার বউ যৌন হয়রানির শিকার হয়। এক পাল ছেলের মধ্যে একজন আমার বউকে পিছন থেকে কয়েকবার ইচ্ছাকৃত ধাক্কা দেয়। দুই-তিনবার সহ্য করলেও পরেরবার প্রতিবাদ করি। ব্যাস, সোনার ছেলেদের দাপট শুরু। শেষে আমাকে সোনা-দীঘি মসজিদের সামনে ৫-৭ মিলে ঘিরে ধরে মারা শুরু করে। এই পর্যন্তও না হয় মেনে নিলাম। কিন্তু ওখানে কম করে হলেও ৫০ জন আমার মার খাওয়া দেখছিল। একজনও এগিয়ে আসেনি। মার খাওয়ার এক পর্যায়ে আমি দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলি, “বাঁচান আমাকে”, কোন রেস্পন্স পায়নি। একজন মোটরসাইকেল থামিয়ে আমার মার খাওয়া দেখছিল, আমি হেল্প চাওয়ার সাথে সাথে মোটরসাইকেল চালিয়ে চলে গেল।

মার খেয়ে কাপুরুষ আমি দর্শকদের বলি, “আপনারা আজ এগিয়ে এলেন না, একদিন আপনার বউ এর সাথে এমন হলেও কেউ এগিয়ে আসবেনা। ও আমার বউ, গার্লফ্রেন্ড না, কাবীননামা দেখাতে হবে আপনাদের?” একজন ভিড়ের মধ্য থেকে বলে বসলো, “হ্যাঁ, কাবীননামা নিয়েই চলাফেরা করতে হবে”। তখন আবার মনে পড়লো আমি জানোয়ারের সমাজে বাস করি, এমন উত্তরই আমার প্রাপ্য।

ধরেন, দ্বিতীয়বার আক্রমণে ওরা আমাকে মেরে ফেলল। কি করবেন? ফেইসবুকে কান্নাকাটি? জাত গেল জাত গেল রব তুলবেন? কোনটায় করবেন না দয়া করে, এতে কিছু আসে যাই না। আর যারা করবে, তাদের গিয়ে থুথু দিয়ে আসবেন।

ধরেই নিয়েছিলাম, পিএইচডি শেষ করে দেশে ফিরব, মা বাবা চান না বাইরে স্যাটেল করি। এই ঘটনার পর দ্বিতীয়বার ভাববো অবশ্যই।”