ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাবেক প্রতিমন্ত্রীর বাড়িতে তাণ্ডব

প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে রাজনৈতিক পদধারীরা

প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে রাজনৈতিক পদধারীরা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাবেক প্রতিমন্ত্রীর বাড়ি ভাঙচুরে জড়িত রাজনৈতিক পদ-পরিচয় ওয়ালাদের ধরতে পুলিশের অনীহার অভিযোগ উঠেছে। তারা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে শহরে। তবে এরই মধ্যে ২-১ জন বিদেশেও পালিয়েছেন। সেখানে সেলফি তুলে নিজের ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন। এ নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে। এ ঘটনায় অনেক রাঘববোয়াল জড়িত বলে তথ্য পাওয়া গেছে। ভেঙে প্রস্তাবিত হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তা বের করার জন্য জায়গা জবরদখলে সহায়তার বিনিময়ে হাসপাতালে অংশ পেতেন তারা। তাদের শক্তিবলের কারণেই মহোৎসবে ভাঙা হয় প্রবীণ নেতার বাড়ি।

এ ঘটনা টক অব দি ডিস্ট্রিকে পরিণত হয়েছে এখন। চিহ্নিত ভূমিদস্যু সিন্ডিকেটের এই কাণ্ডে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন শহরের মানুষ। এর আগেও এখানে আরো অনেক বাড়ি-জায়গা জবরদখল হয়েছে। কিন্তু এতটা বিচলিত বা আতঙ্কিত হননি এই শহরের মানুষ। তারা বলছেন, ৫ বারের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রীর বাড়ি যদি তারা এভাবে ভেঙে দখলে উদ্যোগী হয় তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা কি হবে।

এদিকে ঘটনার হোতাদের কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি অভিযোগ দেন হারুন আল রশিদের চাচাতো ভাই শামীম রশিদ। তাদের কয়েকজনের পদ-পদবি রয়েছে আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে। তাদের একজন সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হলি ল্যাব নামে একটি হাসপাতালের পরিচালক আবু কাউসার। ঘটনার পরদিনই কাউসার সিঙ্গাপুর চলে যান। সেখানকার বিভিন্ন স্পটে ছবি উঠিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করছেন। তবে কাউসার বিদেশ যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের জানান, তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। প্রস্তাবিত হাসপাতাল কিংবা এর জায়গাতে তার কোনো মালিকানা নেই।

অভিযুক্তদের মধ্যে শহর যুবলীগের আহ্বায়ক আমজাদ হোসেন রনির নাম রয়েছে ২ নম্বরে। শহরের পৈরতলা গ্রামের ফারুক মিয়ার ছেলে রনি হারুন আল রশিদের বাড়ি ভাঙায় জড়িতদের অন্যতম বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সূত্র। তবে প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। আরেকজন শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম তৌছির। ঘটনার রাত ১২টার পর থেকে একাধিকবার হারুন আল রশিদের বাড়ির ভাড়াটিয়া মডার্ন এক্সরে ক্লিনিকের মালিক আজিজুল হককে বাড়ি ভেঙে ফেলা হবে বলে মোবাইল ফোনে হুমকি দেন তিনি। প্রস্তাবিত হাসপাতালের চেয়ারম্যান হিসেবে অভিযোগে নাম রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পুনিয়াউট গ্রামের মো. হেলাল উদ্দিনের। অভিযোগ রয়েছে শহরে দিব্যি ঘুরে বেড়ালেও রাজনৈতিক পদধারী এই অভিযুক্তদের কাউকে স্পর্শ করছে না পুলিশ। তবে এই অভিযোগ ঠিক নয় জানিয়ে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সেলিম উদ্দিন বলেন- আমরা নমনীয় নই। তদন্তে যাকে পাওয়া যাবে তাকেই গ্রেপ্তার করা হবে। মোবাইল ফোনে লোকেশন চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে জেলা সদরের বাইরে আশুগঞ্জ ও ভৈরবে অভিযান চালানো হয়েছে।

প্রস্তাবিত ডা. জাকারিয়া মা ও শিশু জেনারেল হসপিটালে যাওয়ার রাস্তা করার জন্য বাড়িটি ভাঙা হয়। সেই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাক্তার জাকারিয়া ঘটনার প্ল্যান পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে দিয়ে মালদ্বীপ চলে যান। তাকে বাড়ি ভাঙার জন্য ১ নম্বর অভিযুক্ত করা হয়।

এছাড়াও বাড়ি ভাঙনে জড়িত আরো বেশ কয়েকজনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তারা হচ্ছেন- পৌর এলাকার শেরপুরের বাছির ওরফে ধোপা বাছির, দাড়িয়াপুর গ্রামের মিজান ওরফে জামাই মিজান, উত্তর পৈরতলা গ্রামের মো. মিজান মিয়া, হলি ল্যাব হাসপাতালের পরিচালক ওবায়দুল হক সূচী, নাসিরনগরের রুবেল মিয়া। এই রুবেল বাড়ি ভাঙার সময় বেশ তৎপর ছিলেন ঘটনাস্থলে। শহরের টেংকেরপাড়ে স্ট্যান্ডার্ড হাসপাতালে একটি ফার্মেসি রয়েছে তার। ভাঙচুরের সময় মডার্ন ক্লিনিকের সামনে একটি ব্যানার টাঙিয়ে ছবিও উঠান তিনি। পুলিশ এই অভিযুক্তদের মধ্যে সূচীকে ১৫ই আগস্ট বিকালে গ্রেপ্তার করেছে। শুক্রবার ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

পুলিশ জানিয়েছে বাড়ি ভাঙায় জড়িতদের ব্যাপারে কিছু তথ্য দিয়েছেন তিনি। ওই বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকা মডার্ন এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিকের ৮২ লাখ টাকারও বেশি মালামাল লুট করে নেয়া হয় ঘটনার সময়। সেই মালামাল এখনো উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। উল্লেখ্য, ১৩ই আগস্ট রাতে শহরের প্রধান সড়কের পাশে হারুন আল রশিদের বাড়ির (চাষি ভবন) দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশের সীমানা প্রাচীর এবং ভেতরের বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। খননযন্ত্র (ভেকু), বুলডোজার, রামদা, লোহার শাবল, কুড়ালসহ নানা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাড়ি ভাঙতে সেখানে আসে শ্রমিকসহ শতাধিক লোক। সেখান থেকে মালামাল সরিয়ে নিতে ৭-৮টি ট্রাক্টর নিয়ে আসা হয়। বাড়ি ভাঙচুরের সময় সেখানকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং সিসিটিভি ক্যামেরা অচল করে দেয়া হয়। করাত দিয়ে কাটা হয় বাড়ির ভেতরের কয়েকটি পুরাতন গাছ। হারুন আল রশিদের বাড়ির পশ্চিম পাশে একটি জায়গা কিনে সেখানে হাসপাতাল করার উদ্যোগ নেন অভিযুক্তরা। সেই হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তা প্রশস্ত করতেই বাড়িটিতে তাণ্ডব চালানো হয়।