স্বর্ণ খনির লোভে আগুন দেয়া হচ্ছে ‌‘পৃথিবীর ফুসফুসে’

স্বর্ণ খনির লোভে আগুন দেয়া হচ্ছে ‌‘পৃথিবীর ফুসফুসে’

আমাজনের আগুন নেভাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে ব্রাজিলের রাজপথে নেমেছেন হাজারো মানুষ। বিক্ষোভ হয়েছে জার্মানি, ফ্রান্সসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে আগুন নেভাতে সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট।

আর আল জাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আগুনের ঘটনা বাড়ার পেছনে রয়েছে, আমাজনের ব্রাজিল অংশে গড়ে ওঠা সাড়ে চারশ’র বেশি অবৈধ স্বর্ণ খনি। এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ আগুনে পুড়ছে আমাজন। ছাই হচ্ছে, পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত এই বন।

আমাজনের ৬০ শতাংশই ব্রাজিলে। দেশটির মহাকাশ গবেষণা সংস্থা বলছে, চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে রেকর্ড ৭৭ হাজারের বেশি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। যা গত বছরের তুলনায় ৮৫ শতাংশ বেশি। শুধু ব্রাজিল অংশেই নয়। ভেনেজুয়েলা, বলিভিয়া আর কলম্বিয়ার আমাজন অংশেও বেড়েছে এই হার।

এতে ধ্বংস হচ্ছে, বিশ্বের বৃহত্তর গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনটি। হুমকিতে পড়েছে পৃথিবীর জলবায়ু।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বছর আমাজনের আগুনের কারণে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে দুইশো ২৮ মেগা টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড মিশে গেছে।

স্থানীয়রা বলেন, ‘শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য পর্যাপ্ত বাতাস পাচ্ছি না। খাবার, ঘুম কিছুতেই শান্তি নেই। মনে হয় মারা যাচ্ছি।’

বলা হচ্ছে, এই আগুনের বেশিরভাগই ইচ্ছাকৃত। কৃষিসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক কাজ আর স্বর্ণ খনির লোভে আগুন দেয়া হচ্ছে, পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত এই বনে। যদিও এ জন্য এনজিওগুলোকে দুষছে, ব্রাজিল সরকার।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো বলেন, ‘আগুন লাগার যে তথ্য দেয়া হচ্ছে তা পুরোপুরি ঠিক নয়। আমাজন ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে অনেক দেশ। আমাজনের দাবানলের জন্য শুধু ব্রাজিলই দায়ী নয়। বৈশ্বিক উষ্ণতাও দায়ী।’

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে, স্বর্ণের খনির খোঁজে নজিরবিহীনভাবে আমাজনে খনন কাজ চালাচ্ছে খনি ব্যবসায়ীরা। ব্রাজিলে এমন অবৈধ খনির সংখ্যা সাড়ে ৪শ'র বেশি। যাতে গণহারে কাটা হচ্ছে গাছ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি বছর বৈধ উপায়ে আমাজনের জঙ্গলে যে পরিমাণ সোনা বেচাকেনা হয়, তার চেয়ে ছয়গুণ (এক দশমিক এক বিলিয়ন ডলার) বেশি হয় অবৈধভাবে। আমাজনের ছোট্ট শহর ক্রিপুরিজাও থেকে প্রত্যেক দিন কয়েক ডজন ছোট বিমানে করে খনন মেশিনের যন্ত্রাংশ, জ্বালানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়া হয় গভীর জঙ্গলে।

খনন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের সাথে কথা বলেছে আল জাজিরা। তারা বলেছেন তাদের সহজ-সরল ও স্বাভাবিক জীবন যাপনের কথা। যেখানে প্রচুর পরিমাণে উপার্জন করা যায়। পরে তারা এই অর্থ মদ্যপান এবং পতিতালয়ে গিয়ে শেষ করেন।

৩৭ বছর বয়সী এক খনি শ্রমিক বলেন, ‘এটা যখন ভালো, তখন ভালোই। কিন্তু সচরাচর ভালো অপেক্ষা কঠিন সময় পার করতে হয়।’

সম্প্রতি ব্রাজিলে আদিবাসীদের ভূখণ্ডে খনিজ সম্পদ আহরণ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অবৈধ খনন কাজের জন্য আদিবাসীদের ভূখণ্ডে ম্যালেরিয়া, পতিতাবৃত্তি, মানবপাচার, মাদকাসক্তি ও সহিংসতা বাড়ছে। যখন একটি খনির কাজ শেষ হয়ে যায়, তখন জঙ্গলের অন্য অংশ ধ্বংস করে নতুন করে খনিজ পদার্থের সন্ধান চলে।

এমন অবস্থায় ব্রাজিলের বড় বড় শহরে বিক্ষোভ করেছেন হাজারো মানুষ। এছাড়া ফ্রান্স, ল্যাটিন আমেরিকা, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ভারত-সহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভে নেমেছেন পরিবেশবাদীরা।

পরিবেশবাদীরা বলেন, ‘আমাজন কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। পৃথিবীর জলবায়ু এর ওপর নির্ভরশীল। ব্রাজিল সরকারের উচিৎ আরো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া।’ চাপের মুখে আমাজনের আগুন ঠেকাতে সেনা পাঠিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট।

উল্লেখ্য, গত কয়েকদিনের টানা য়াগুনে আমাজনের বনে হাজার হাজার জায়গায় এখনও আগুন জ্বলছে। গত এক দশকে এত ব্যাপক মাত্রায় সেখানে দাবানল কখনো সৃষ্টি হতে দেখা যায়নি।

এমআই