সরকার মিয়ানমারের ফাঁদে পড়েছে: মির্জা আলমগীর

সরকার মিয়ানমারের ফাঁদে পড়েছে: মির্জা আলমগীর

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকার মিয়ানমারের ফাঁদে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে বৃহস্পতিবার বিকালে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাসের উদ্যোগে কাজী নজরুল ইসলামের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা হয়।

মির্জা আলমগীর বলেন, কয়েকদিন ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনে হচ্ছে তিনি খুব বিব্রত, কিছুটা বলা যেতে পারে ভারসাম্যহীন অবস্থা হয়ে গেছেন। তিনি (ওবায়দুল কাদের) বলেছেন, রোহিঙ্গাদের সমস্যা নাকি আমরা করেছি…কী বলবেন। হাসিও পায় তার কথা শুনে। এখন উনারা পারছেন না, দে আর ফেইলিং।

তিনি বলেন, আমরা পেরেছিলাম। ১৯৭৮ সালে এই রোহিঙ্গারা এসেছিল একইভাবে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান অতি অল্প সময়ের মধ্যে মিয়ানমারকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে তাদের পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কেন পেরেছিলেন পাঠিয়ে দিতে সেই শক্তি তার ছিল। তিনি কক্সবাজারে কেন্টমেন্টই তৈরি করে ফেললেন ওই সময়ে, পুরো গ্যারিশন নিয়ে চলে গিয়েছিলেন। বলছেন আইদার ইউ টেইক ব্যাক অর ইউ উইল ফেইস।

বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলের কথাও উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়ার আমলে ১৯৯২ সালে একই ঘটনা ঘটেছিল। প্রায় ২ লাখ ৪৪ হাজার এসছিল সেই সময়ে রোহিঙ্গা। তিনি (খালেদা জিয়া) সরাসরি বললেন যে, তুমি (মিয়ানমার সরকার) কি ফেরত নেবে নাকি আমি অন্য ব্যবস্থা নেব। তারা (মিয়ানমার) ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।

সরকারের সমালোচনা করে মির্জা আলমগীর বলেন, আজকে এই সরকার মিয়ানমারকে একবারের জন্য বকাবকিও করে নাই খেয়াল করে দেখবেন। একটা স্টেটমেন্ট নাই যে, সেখানে বলেছে মিয়ানমার জেনোসাইড করেছে, মিয়ানমার এথনিক ক্লেনজিং করছে, হত্যা করছে, নির্যাতন করছে- বিবৃতির কোথাও দেখবেন না। বার বার করে তাদের বলেছে, ভাই নিয়ে যাও, নিয়ে যাও। এগ্রিমেন্ট সই করেছে, সেই এগ্রিমেন্ট সই করার মতো নয়। ওর মধ্যে কোনো কিছুই নাই, মিয়ানমার যা বলেছে তাই করতে হবে এবং তাই করছেও তারা। সরকার ওদের ট্র্যাপে (ফাঁদে) পড়ে গেছে।

তিনি বলেন, আজকে এমন কূটনৈতিক অবস্থা যে, একটা দেশও বাংলাদেশের পক্ষে নেই। চীন, ভারত, জাপান, রাশিয়া- সব মিয়ানমারের পক্ষে। তাহলে বাংলাদেশের পক্ষে কে? এতদিন ধরে দুই বছর ধরে কী করলেন? অথচ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সুউচ্চ ভারত সঙ্গে, চীনের সঙ্গে। তাহলে বন্ধুরা কী করল? আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় তো জানেনই না এত বিরাট সমাবেশ কী করে হল? আর আরেকজন বলেছেন, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভারতের সঙ্গে। কী বলব বলেন? আমাদের কবি নজরুল ইসলামের কবিতার মতো বলতে হয়, আমরা ওই দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি তাই যা আসে কৈই মুখে সেই অবস্থা দাঁড়িয়েছে।

জাসাসের সভাপতি অধ্যাপক মামুন আহমেদের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম-সম্পাদক জাকির হোসেন রোকনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল হাই শিকদার, জাসাসের সাবেক সভাপতি রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী, মো. নাসিম আহমেদ, জাসাসের সাধারণ সম্পাদক হেলাল খান, কেন্দ্রীয় নেতা এহসানুল হক চৌধুরী, সানাউল হক, শাহরিয়ার ইসলাম শায়লা, জাহাঙ্গীর আলম রিপন, রফিকুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। আওয়ামী লীগ তো সেই আওয়ামী লীগ নেই। যে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতাযুদ্ধের আগে সংগ্রাম করেছে গণতন্ত্রের জন্য সেই আওয়ামী লীগ এখন নেই। এই আওয়ামী লীগ হচ্ছে সেই দল যাদের নিজেদের কোনো কিছুই নেই। তারা ফ্যাসিস্ট গণবিরোধী, মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং তাদের হাত আজকে মানুষের রক্তে রঞ্জিত। তাদের পরাজিত করতে এখন যেটা দরকার তা হচ্ছে সাহস, শক্তি, মনোবল এবং এক লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া। যদি খালেদা জিয়াকে মুক্ত ও গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে চাই তাহলে অবশ্যই আমাদের সংগ্রামের দিকে যেতে হবে, আন্দোলনের দিকে যেতে হবে।

অস্ট্রেলিয়ায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিয়োজিত জ্যেষ্ঠ কন্যা মির্জা সামারুহের পাঠানো একটি ক্ষুদে বার্তা পড়ে শুনিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি যখনই একটু মন-টন খারাপ করি, তখন আমার মেয়ে ২-৩টা ম্যাসেজ পাঠায়। আজকে সকালেই (বৃহস্পতিবার) আমাকে একটা ম্যাসেজ পাঠিয়েছে সে। আমি তা জানাতে চাই আপনাদের। এটা খুব দরকার। নেলসন ম্যান্ডেলার ছোট্ট একটা কথা সে কোড করে পাঠিয়েছে। ‘দ্য গ্রেটেস্ট গ্লোরি ইন লিভিং রাইজ নট ইন ফেভার ফেইলিং বাট ইন রাইজিং এভরি টাইম উই ফল। অর্থাৎ আমরা যখন পড়ে যাই তখন উঠে দাঁড়ানোটাতেই হচ্ছে গ্লোরি। আর কোনো দিন পড়ি না- এটার মধ্যে গ্লোরি নাই। আমরা পড়ছি আবার উঠে দাঁড়াতে হবে- এটার মধ্যেই আমাদের গ্লোরি।

ফখরুল বলেন, আজকে চতুর্দিকে অন্ধকারে আমরা আক্রান্ত হয়েছি, আমাদের জাতিসত্ত্বা আক্রান্ত হচ্ছে। একে রক্ষা করতে হলে, আমাদের মাথা তুলে দাঁড়াতে হলে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে এবং আমাদের জনগণকে সংগঠিত করতে হবে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে, দেশকে উদ্ধার করতে হবে।