রিফাত হত্যা: চার্জশিটে মিন্নিসহ আসামি ২৪

রিফাত হত্যা: চার্জশিটে মিন্নিসহ আসামি ২৪

বরগুনায় আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে ৭নং আসামি করে ২৪ জনের বিরুদ্ধে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।

রবিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে দুইখণ্ড চার্জশিট দাখিল করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা থানার ওসি।

মামলায় ১৪ জন আসামি শিশু ও মিন্নিসহ ১০ জন আসামি ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে থাকায় পৃথক দুটি চার্জশিট দাখিল করা হয়।

আদালতে মূল নথি না থাকায় ম্যাজিস্ট্রেট চার্জশিট গ্রহণ করতে পারেননি। মূল নথি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাওয়া গেলে ওই দিন চার্জশিট গ্রহণ করা হতে পারে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা সরকারি কলেজে গেটের সামনে ২৬ জুন নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজিসহ তার সঙ্গীরা রিফাত শরীফকে কুপিয়ে জখম করে। পরে ওইদিন বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিফাত শরীফ মারা যান।

রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম বাদী হয়ে ২৭ জুন নয়ন বন্ডসহ ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় মামলা করেন।

এজাহারভুক্ত আসামিরা হল- রিফাত ফরাজি, রিশান ফরাজি, চন্দন, মুসা, রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রায়হান, হাসান, রিফাত হাং, অলি উল্লাহ অলি, টিকটক হৃদয়।

তদন্তে প্রাপ্ত আসামিরা হল- আরিয়াল হোসেন শ্রাবণ, কামরুল হাসান সায়মুন, নাজমুল হাসান, তানভির হোসেন, সাগর ও রাতুল ইসলাম জয় ও রবিউল ইসলাম রাব্বি।

চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামিরা হল- আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি, নাঈম, মারুফ হোসেন, মারুফ, প্রিন্স মোল্লা ও রকিবুল। এই মামলায় আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি প্রথম প্রধান সাক্ষী ছিলেন।

তদন্তে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ থাকায় তাকে ৭ নম্বর আসামি করা হয়। বয়স্ক আসামিদের মধ্যে রিফাত ফরাজি এক নম্বর আসামির নাম রয়েছে। কিশোর আসামিদের মধ্যে রিশান ফরাজি এক নম্বর আসামি। এই মামলায় কোনো রাজনৈতিক নেতাকর্মী জড়িত হয়নি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ূন কবির রবিবার বিকালে বলেন, ২ মাস ৬ দিন পর আদালতে চার্জশিট দাখিল করতে পেরেছি। এই মামলায় গ্রেফতারকৃত ১৫ জন আসামিই তাদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। নয়ন বন্ড এক নম্বর আসামি ছিল। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২ জুলাই নিহত হওয়ায় তাকে চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, চার্জশিটে এখন এক নম্বর আসামি রিফাত ফরাজি। রিফাত ফরাজির ছোট ভাই রিশান ফরাজি নাবালক হওয়ায় তাকে শিশু হিসাবে গণ্য করে কিশোর অপরাধী হিসেবে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। যারা ১৮ বছরের উপরে তারা হল ১০ জন। বাকি ১৪ জন আসামি কিশোর থাকায় তাদের শিশু আইনে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।

মো. হুমায়ূন কবির বলেন, বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে রবিবার বিকালে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। ওই আদালত থেকে কিশোরদের চার্জশিটটি শিশু আদালতে পাঠিয়ে দেয়া হবে।

তিনি বলেন, আসামিদের শিশু আদালত ও দায়রা আদালতে বিচার হবে।

তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, আদালত চার্জশিট গ্রহণ না করা পর্যন্ত কোনো তথ্য-উপাত্ত আমরা দিতে পারছি না।

মিন্নিকে কীভাবে আসামি করা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তদন্তে সাক্ষ্য-প্রমাণে মিন্নির সম্পৃক্ততা পেয়েছি। তা ছাড়া মিন্নি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। যা মিন্নি ১৯ জুলাই আদালতে ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। যার কারণে মিন্নি ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে বয়স থাকায় তাকে ১০ জনের মধ্যে ৭ নম্বর আসামি করা হয়েছে।

তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, সব ২৪ জন আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ৩০২/২১২/১২০-বি (১)১১৪/১০৯/৩৪ ধারায় চার্জশিট দাখিল করা হয়।

তিনি আরও বলেন, নয়ন বন্ড প্রধান আসামি ছিল। কিন্তু বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার কারণে তাকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

মো. হুমায়ূন কবির বলেন, আমরা ২ মাস ৬ দিন পর পুলিশ সুপার মারুফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম ওয়ার্ক করে ১৫ জন আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি আমাদের সব সময় কাজের প্রেরণা যোগাতেন। এ কারণে অল্প সময়ের মধ্যে আমরা প্রধান প্রধান আসামিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। মামলার বাদী দুলাল শরীফ যুগান্তরকে বলেন, আমি আদালত ও পুলিশের উপর কৃতজ্ঞ। তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে অল্প সময়ের মধ্যে আমার ছেলে রিফাত শরীফের হত্যাকারীদের নামে চার্জশিট দাখিল করতে পেরেছে। এ ছাড়া মামলায় জড়িত ১৫ জন আসামিকে গ্রেফতার করে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে।

এখন আমি ন্যায় বিচার পাইলেই আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে। আমি বিশ্বাস করি আমি আদালতে ন্যায় বিচার পাব।

আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, পুলিশ রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমার মেয়েকে অন্যায়ভাবে আসামি করেছে।

তিনি বলেন, দেশবাসী দেখেছেন। আমার মেয়ে তার স্বামীকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য কতকিছুই না করেছে। তারপরও পুলিশ নেতাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমার মেয়েকে আসামি করেছে।

মোজাম্মেল হোসেন বলেন, হাইকোর্টও বলেছে আমার মেয়েকে আসামি করা ঠিক হয়নি। তারপরও তদন্তকারী কর্মকর্তা মিন্নিকে আসামি করেছে। আমার মেয়েকে যখন আসামি করেছে তখন আমরা বিচার ফেস করব।