পণ্ডিতের চেতনা দর্শন

পণ্ডিতের চেতনা দর্শন

দু’দিন আগে এক পণ্ডিতের কলাম পড়ছিলাম। পণ্ডিত লিখেছেন আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৪৮ ভাগ ভোট পেয়েছিল, বিএনপি ৩৩ ভাগ। পণ্ডিতের মতে এর মানে হচ্ছে এই ৪৮ ভাগ মানুষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সমর্থক আর ৩৩ ভাগ বিরোধী।

পণ্ডিতের ভোটের অংকের পদ্ধতি ছিল ভুল। অংকে ভুল হতে পারে। কিন্তু ভাবনায় এতো ভুল হয় কিভাবে? পণ্ডিত এ তথ্য কোথায় পেলেন যে বাংলাদেশের মানুষ ভোট দেয়ার সময় কে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, কে না শুধুমাত্র এটা বিবেচনায় রেখে ভোট দেয়? বা বাংলাদেশের সব মানুষ আওয়ামী লীগকে চেতনাময় আর বিএনপিকে চেতনাহীন ভাবে?

বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধান আর গণপরিষদ বিতর্ক অনুসারে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে প্রকৃত গণতন্ত্র, সম্পদের সুষম বন্টন, কৃষক-শ্রমিকের মুক্তি, অসাম্প্রদায়িকতা আর জাতীয়তাবোধ। কাজেই পণ্ডিতের এটা বোঝা উচিত ছিল যে পুরোপুরি ভূয়া নির্বাচন, ভয়াবহ দুর্নীতি, কৃষককে ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত করা, সংখ্যালঘুদের জমি দখল আর ভারতের কাছে স্বার্থ বিকিয়ে দেয়ার প্রতিটি কাজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সুষ্পষ্ট লংঘন। এখন সুষ্ঠু একটা নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ যদি হেরে যায় তাহলে এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরাজয় হবে না, হবে বিজয়। চোর, খারাপ ও অত্যাচারী শাসক (সেটা বিএনপি হোক, আওয়ামী লীগ হোক) যখনি হারে তখনি তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জয়।
পণ্ডিতকে নিয়ে এতো কিছু লিখতাম না। লিখলাম কারণ তার মতো লোকের এসব ভ্রান্ত বয়ান কিছু মানুষকে হলেও প্রভাবিত করে, শাসকগোষ্ঠীর অনাচারের বৈধতা প্রদান করে এবং একচোখা মানুষকে কুতর্ক করার মালমশলা প্রদান করে।

পণ্ডিত নিজে একসময় তীব্র আওয়ামী লীগ বিরোধী বাম রাজনীতি করতেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধও করেছেন। তার মতো মানুষ যদি মনে করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানে হচ্ছে অন্ধভাবে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়া তাহলে এটা কি অজ্ঞতা, নাকি অসততা?
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

এমজে/